Viswakarma Puja: প্রায় সব বছরই বিশ্বকর্মা পুজো কেন ১৭ সেপ্টেম্বর হয়

‘মণ্ডনসূত্রধারে’ বিশ্বকর্মার রূপ বর্ণনা যা পাওয়া যায় তা হল

Advertisement

পার্থপ্রতিম আচার্য

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

আজ যে পৃথিবীজুড়ে এত বহুতল, শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, পার্ক প্রভৃতি যাবতীয় বিলাসিতার ছড়াছড়ি, প্রযুক্তি আর পূর্তবিদ্যার দাপটে সভ্যতার আলপিন থেকে স্যাটেলাইট পর্যন্ত নির্মিত, ভারতীয় পুরাণকে যদি ইতিহাসের অতিবাদ হিসাবে স্বীকার করা যায়, তা হলে বলতেই হবে যে বিশ্বকর্মাই এই সব যাবতীয় বিদ্যাকে প্রথম গ্রন্থিত এবং বাস্তবায়িত করে তুলেছিলেন।

Advertisement

‘মণ্ডনসূত্রধারে’ বিশ্বকর্মার রূপ বর্ণনা যা পাওয়া যায় তা হল—

বিশ্বকর্মা চতুর্বাহুরক্ষমালাঞ্চ পুস্তকম্

Advertisement

কম্বাং (ম্বং) কমণ্ডলং ধত্তে ত্রিনেত্রৌ হংসবাহনঃ।।

অর্থাৎ চতুর্ভুজ বিশ্বকর্মার হাতে যথাক্রমে পুস্তক, অক্ষমালা, শঙ্খ এবং কমণ্ডলু, শোভা পাচ্ছে। তিনি ত্রিনেত্রযুক্ত ও হংস বাহনারূঢ়। এক অন্য বিবরণে বিশ্বকর্মার মস্তকে মুকুট আছে। কিন্তু বর্তমানে বহু ক্ষেত্রেই শাস্ত্ররূপ অনুসরণ না করে বিশ্বকর্মার হাতে হাতুড়ি, বিভিন্ন যন্ত্র, কাস্তে প্রভৃতি দিয়ে তাঁকে গজপৃষ্ঠে আরোহণ করানো হচ্ছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাঁকে শ্রমজীবীর প্রতীক হিসাবে বরণ করে তাঁকেও যেন শ্রমজীবী হিসাবেই কল্পনা করা হচ্ছে।

বিশ্বকর্মা পূজা বা অর্চনার ক্ষেত্রেও এখন যেন একটি সরল সমাধান সূত্র গ্রহণ করা হচ্ছে। অন্যান্য যে কোনও পুজো তিথি-নক্ষত্র অনুসারে পালন করা হয়, ফলে কোনও পূজারই একটি নির্দিষ্ট তারিখ হয় না। কিন্তু বিশ্বকর্মা পূজা প্রতি বছরেই ১৭ সেপ্টেম্বরের জন্য নির্দিষ্ট। যদিও নারদ বচনানুসারে নিত্য কর্তব্য এবং বিশেষ পার্বণে অবশ্যই বিশ্বকর্মা পূজা করা উচিত। নারদ মতে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী বা ত্রয়োদশী অথবা শ্রাবণ মাসের শুক্লা পূর্ণিমাতেই বিশ্বকর্মার পূজা বিধি নির্দিষ্ট। আসলে হিন্দুদের সব দেবদেবীরই পূজার তিথি স্থির হয় চাঁদের গতিপ্রকৃতির উপর নির্ভর করে। এ ব্যাপারে অনুসরণ করা হয়ে থাকে চান্দ্র পঞ্জিকা। কিন্তু বিশ্বকর্মা পূজার তিথিটি স্থির হয় সূর্যের গতিপ্রকৃতির উপর ভিত্তি করে। যখন সূর্য সিংহ রাশি থেকে কন্যা রাশিতে গমন করে, তখনই সময় আসে উত্তরায়ণের। দেবতারা জেগে ওঠেন নিদ্রা থেকে। এবং শুরু হয় বিশ্বকর্মা পূজার আয়োজন। এ ব্যাপারে হিন্দু পঞ্জিকার দু’টি প্রধান শাখা সূর্যসিদ্ধান্ত এবং বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত উভয়েই একমত।

সেই মতো একটু স্পষ্ট করে বললে বিশ্বকর্মা পূজার দিনটি নির্ধারিত হয়েছে ভাদ্র মাসের শেষ তারিখে। এই ভাদ্র সংক্রান্তির আগে বাংলা পঞ্জিকায় পাঁচটি মাস রয়েছে। এই পাঁচটি মাসের দিন সংখ্যাও প্রায় বাঁধাধরা— ১৫৬ দিন। এই নিয়ম ধরে পুজোর যে বাংলা পঞ্জিকা মতে তারিখটি বের হয় তা ইংরাজি ক্যালেন্ডারের ১৭ সেপ্টেম্বর। কোনও কোনও বছর এই পাঁচ মাসের মধ্যে কোনওটিও যদি ২৯ বা ৩২ দিন বিশিষ্ট হয়, তখনই বিশ্বকর্মা পুজোর দিন এক দিন পিছিয়ে বা এগিয়ে যায়। তবে তা খুবই ব্যতিক্রমী ঘটনা। এই বছরেও নিয়মের অন্যথা হয়নি। সূর্য নিয়ম মেনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন কন্যা রাশিতে। ভাদ্র সংক্রান্তির আগে বাংলা পঞ্জিকার পাঁচটি মাসের দিন সংখ্যা ১৫৬টিই থেকেছে। এবং ১৭ সেপ্টেম্বর হচ্ছে বিশ্বকর্মা পূজা। আকাশ রঙিন হতে চলেছে ঘুড়ির সম্ভাবে। তারা বলে দিচ্ছে উত্সবের সূচনা। এর পরে এক এক করে সারা বছর উত্সবে মাতবে বাঙালি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement