গুরুপূর্ণিমা কী ও কেন

বর্তমান বছরে (১৪২৬ সন) গুরুপূর্ণিমা পড়েছে আগামী ১৬ জুলাই ২০১৯। এ দিন সকালে স্নান করে যথাসাধ্য উপাচারে গুরুপূজা করতে হয়। জেনে নেওয়া যাক গুরুপূর্ণিমা কী ও কেন করা হয়?

Advertisement

পার্থপ্রতিম আচার্য

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৯ ০০:০০
Share:

বর্তমান বছরে (১৪২৬ সন) গুরুপূর্ণিমা পড়েছে আগামী ১৬ জুলাই ২০১৯। এ দিন সকালে স্নান করে যথাসাধ্য উপাচারে গুরুপূজা করতে হয়।

Advertisement

জেনে নেওয়া যাক গুরুপূর্ণিমা কী ও কেন করা হয়?

গুরুপূর্ণিমা একটি বৈদিক প্রথা, যার মধ্য দিয়ে শিষ্য তার গুরুকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।

Advertisement

প্রাচীন আর্য সমাজে শিক্ষক বা গুরুর স্থান কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, বোঝা যায় যখন ছাত্র-শিক্ষক বা গুরু-শিষ্য পরম্পরাকে সম্মানিত করতে একটি পূর্ণ দিন উৎসর্গ করা হয়। তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় অন্য কোনও সম্পর্ক এত গুরুত্ব পেত না। গুরুকে শ্রদ্ধা জানাতে বৈদিক যুগ থেকেই আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিকে বিশেষ ভাবে নির্ধারণ করে ‘গুরুপূর্ণিমা‘ উদযাপন করা হচ্ছে।

সংস্কৃতে ‘গূ‘ শব্দের অর্থ হল অন্ধকার। গুরু শব্দের মানে হল যিনি অন্ধকার দূর করেন। গুরু আমাদের মনের সব সংশয়, সন্দেহ, অন্ধকার, জিজ্ঞাসা দূর করেন। নতুন পথের দিশা দেখান। তমসা থেকে জ্যোতির্ময়ের পথে চালিত করেন গুরু। একটা প্রবচন আছে:

‘গুরু গোবিন্দ দুয়ো খাড়ে, কাকে লাগু পায়/বালিহারি গুরু আপনে যিন গোবিন্দ দিয়ো বতায়ে’

অর্থাৎ, এমন একটা পরিস্থিতি, যখন গুরু এবং গোবিন্দ বা ঈশ্বর দু’জনেই সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, আমি কাকে প্রথম পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করব? তার পরের লাইনেই আছে সমাধান। যদি ঈশ্বর এবং গুরু দু’জন সামনে থাকেন, আগে গুরুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করবেন। কৃতজ্ঞতা জানাবেন। কারণ তিনিই আমাদের ঈশ্বরকে চেনান।

বৌদ্ধ ধর্মেও গুরুপূর্ণিমার গুরুত্ব অসীম। বলা হয়, বোধিজ্ঞান লাভের পরে আষাঢ় মাসের পূর্ণিমায় প্রথম উপদেশ দেন গৌতম বুদ্ধ,আজকের উত্তরপ্রদেশের সারনাথে। আবার হিন্দু পুরাণে আছে শিবের মাহাত্ম্য। মহাদেব হলেন আদি গুরু। তাঁর প্রথম শিষ্য হলেন সপ্তর্ষির সাতজন ঋষি— অত্রি, বশিষ্ঠ, পুলহ, অঙ্গীরা, পুলস্থ্য, মরীচি এবং ক্রতু (নাম নিয়ে মতভেদ আছে) আদিযোগী শিব এই তিথিতে আদিগুরুতে রূপান্তরিত হন। তিনি এ দিন ওই সাত ঋষিকে মহাজ্ঞান প্রদান করেন। তাই এই তিথি হল গুরুপূর্ণিমা।

আরও পড়ুন: গুরু পূর্ণিমার শুভ তিথিতে এই কাজগুলো করে জীবন সুখসমৃদ্ধিতে ভরে তুলুন

ভারতের অনেক জায়গায় গুরুপূর্ণিমাকে মহাঋষি বেদব্যাসের জন্মতিথি হিসেবেও মানা হয়। যদিও তিনি ছিলেন ঋষি পরাশর এবং মৎস্যগন্ধা সত্যবতীর সন্তান। জন্মের পরে তাঁকে পরিত্যাগ করেন জন্মদাত্রী সত্যবতী। এই সন্তানই মহাঋষিতে পরিণত হন। সম্পাদনা ও পরিমার্জনা করেন চতুর্বেদের। ১৮টি পুরাণ ছাড়াও রচনা করেন মহাভারত। বলা হয়, আষাঢ় মাসের পূর্ণিমা তিথিতেই জন্ম হয়েছিল ব্যাসের।

প্রাচীন সভ্যতার মূলে থাকত চন্দ্র সূর্যের অবস্থান। তাই পূর্ণিমা অমাবস্যাকে ঘিরে আবর্তিত হত বিভিন্ন পালা পার্বণ। গুরুপূর্ণিমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে প্রবর্তনের পিছনে যে কারণই থাক না কেন, এর উদ্দেশ্য আচার্যকে সম্মান প্রদান করা। একটি শ্লোকের মাধ্যমে গুরুপূর্ণিমাতে শ্রী গুরুকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা যায়:

‘গুরুর্ব্রহ্মা গুরুর্বিষ্ণু গুরুর্দেবো মহেশ্বর

গুরুরেব পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ’

অর্থাৎ জীবনে গুরুই হলেন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। তিনিই আমাদের সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের জ্ঞান বা পরম ব্রহ্মজ্ঞান দান করেন। সেই গুরুর উদ্দেশে প্রণাম জানাই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement