আসছে শয়ন একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও নির্ঘণ্ট এবং সময়সূচি

মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন, “হে কৃষ্ণ। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কী? এর মহিমাই বা কী? আমাকে কৃপা করে বলুন।”

Advertisement

পার্থপ্রতিম আচার্য

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৯ ০০:০০
Share:

মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন, “হে কৃষ্ণ। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কী? এর মহিমাই বা কী? আমাকে কৃপা করে বলুন।”

Advertisement

শ্রীকৃষ্ণ বললেন, ব্রহ্মা এই একাদশী সম্পর্কে দেবর্ষি নারদকে বলে গিয়েছেন। আমি সেই আশ্চর্যজনক কথা আপনাকে বলছি। শ্রীব্রহ্মা বললেন, “হে নারদ। এ সংসারে একাদশীর মতো পবিত্র আর কোনও ব্রত নেই। সকল পাপ বিনাশের জন্য এই বিষ্ণুব্রত পালন করা একান্ত আবশ্যক। যিনি এই পবিত্র পাপনাশক এবং সকল অভিষ্ট প্রদাতা একাদশী ব্রত না করেন, তাঁকে নরকগামী হতে হয়। আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের এই একাদশী শয়নী নামে বিখ্যাত। শ্রীভগবান ঋষিকেশের জন্য এই ব্রত পালন করতে হয়। এই ব্রতের সম্বন্ধে এক মঙ্গলময় পৌরাণিক কাহিনি আছে। আমি এখন তা বলছি।”

“বহু বছর আগে সূর্যবংশে মান্ধাতা নামে একজন রাজা ছিলেন। তিনি ছিলেন সত্যপ্রতিজ্ঞ এবং প্রতাপশালী চক্রবর্তী রাজা। প্রজাদের তিনি নিজের সন্তানের মতো পালন করতেন। সেই রাজ্যে কোনও রকম, দুঃখ, রোগ, ব্যাধি, দুর্ভিক্ষ, খাদ্যাভাব অথবা কোনও অন্যায় ছিল না। এই ভাবে বহু দিন অতিবাহিত হল। কিন্তু এক সময় দৈবদুর্বিপাকে টানা তিন বছর সে রাজ্যে কোনও বৃষ্টি হল না। দুর্ভিক্ষের ফলে সেখানে দেবতাদের উদ্দেশে দানমন্ত্রের 'স্বাহা' 'স্বধা' ইত্যাদি শব্দও বন্ধ হয়ে গেল। এমনকি বেদপাঠও ক্রমশ বন্ধ হল।

Advertisement

তখন প্রজারা রাজার কাছে এসে বলতে লাগলেন, মহারাজ দয়া করে আমাদের কথা শুনুন। শাস্ত্রে জলকে নার বলা হয়। আর সেই জলে ভগবানের অয়ন অর্থাৎ নিবাস। তাই ভগবানের এক নাম নারায়ণ। মেঘরূপে ভগবান বিষ্ণূ সর্বত্র বারিবর্ষণ করেন। সেই বৃষ্টি থেকে অন্ন এবং অন্ন খেয়ে প্রজাগণ জীবন ধারণ করেন। এখন সেই অন্নের অভাবে প্রজারা ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছেন। অতএব, হে মহারাজ আপনি এমন কোনও উপায় অবলম্বন করুন, যাতে আপনার রাজ্যের শান্তি এবং কল্যাণ সাধন হয়।

আরও পড়ুন: খুব সাবধান পকেটে এই জিনিস গুলো কখনো রাখবেন না, নিজের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে

রাজা মান্ধাতা বললেন, তোমরা ঠিকই বলেছ। অন্ন থেকে প্রজার উদ্ভব। অন্ন থেকেই প্রজার পালন। তাই অন্নের অভাবে প্রজারা বিনষ্ট হন। আবার রাজার দোষেও রাজ্য নষ্ট হয়। আমি নিজের বুদ্ধিতে আমার কোনও দোষ খুঁজে পাচ্ছি না। তবুও প্রজাদের কল্যাণের জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব।

তারপর ব্রহ্মাকে প্রণাম করে রাজা সৈন্য-সহ বনে গমন করলেন। সেখানে প্রধান প্রধান ঋষিদের আশ্রমে ভ্রমণ করলেন। এ ভাবে তিনি ব্রহ্মার পুত্র মহাতেজস্বী অঙ্গিরা ঋষির সাক্ষাৎ লাভ করলেন। তাঁকে দর্শনমাত্রই রাজা মাহানন্দে ঋষির চরণ বন্দনা করলেন। মুনিবর তাঁকে আশীর্বাদ ও কুশল জিজ্ঞাসা করলেন। রাজা তখন তার বনে আগমনের কারণ সবিস্তারে ঋষির কাছে জানালেন।

ঋষি অঙ্গিরা কিছু সময় ধ্যানস্থ থাকার পর বলতে লাগলেন, হে রাজন! এটি সত্যযুগ। এই যুগে সবাই বেদপরায়ণ এবং ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্য কেউ তপস্যা করেন না। এই নিয়ম থাকা সত্ত্বেও এব শুত্র রাজ্যে তপস্যা করছে। তার এই অকার্যের জন্যই রাজ্যের এই দুর্দশা। তাকে হত্যা করলেই সকল দোষ দূর হবে।

রাজা বললেন, হে মুনিবর। তপস্যাকারী নিরপরাধ ব্যক্তিকে আমি কী ভাবে বধ করব? আমার পক্ষে সহজসাধ্য অন্য কোনও উপায় থাকলে আপনি দয়া করে আমাকে বলুন।

তদুত্তরে মহর্ষি অঙ্গিরা বললেন, আপনি আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের শয়নী নামে প্রসিদ্ধ একাদশী ব্রত পালন করুন। এই ব্রতের প্রভাবে নিশ্চয়ই রাজ্যে বৃষ্টি হবে। এই একাদশী সর্বসিদ্ধি দাত্রী এবং সর্ব উপদ্রব নাশকারিনী।

হে রাজন, প্রজা ও পরিবারবর্গ-সহ আপনি এই ব্রত পালন করুন। মুনিবরের কথা শুনে রাজা নিজের প্রাসাদে ফিরে গেলেন। আষাঢ় মাস উপস্থিত হলে রাজ্যের সকল প্রজা রাজার সঙ্গে এই একাদশী ব্রতের অনুষ্ঠান করলেন। ব্রতের প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হল। কিছুকালের মধ্যেই অন্নাভাব দূর হল। ভগবান হৃষিকেশের কৃপায় প্রজারা সুখী হলেন।”

এ কারণে সুখ ও মুক্তি প্রাদানকারী এই ব্রত পালন করা সকলেরই অবশ্য কর্তব্য। ভবিষোত্তর পুরাণে যুধিষ্ঠির–শ্রীকৃষ্ণ তথা নারদ-ব্রহ্মা সংবাদ রূপে এই মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে।

এখন দেখে নেওয়া যাক ১৪২৬ সনের হরিশয়নী একাদশীর নির্ঘণ্ট ও সময়সূচি বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত ও গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে।

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে:

একাদশী আরম্ভ:

বাংলা তারিখ: ২৬ আষাঢ় ১৪২৬, বৃহস্পতিবার।

ইং তারিখ: ১১/০৭/২০১৯।

সময়: রাত্রি ঘঃ ০১/০৩ মিনিট থেকে।

একাদশী শেষ:

বাংলা তারিখ: ২৭ আষাঢ় ১৪২৬, শুক্রবার।

ইং তারিখ: ১২/০৭/২০১৯।

সময়: রাত্রি ঘঃ ১২/৩১ মিনিট পর্যন্ত।

একাদশীর উপবাস:

বাংলা তারিখ: ২৭ আষাঢ় ১৪২৬, শুক্রবার।

ইং তারিখ: ১২/০৭/২০১৯।

সময়: রাত্রি ঘঃ ১২/৩১ মিনিট পর্যন্ত।

গুপ্তপ্রেশ পঞ্জিকা মতে:

একাদশী আরম্ভ:

বাংলা তারিখ: ২৫ আষাঢ় ১৪২৬, বৃহস্পতিবার।

ইং তারিখ: ১১/০৭/২০১৯।

সময়: রাত্রি ঘঃ ০৩/৩০ মিনিট থেকে।

একাদশী শেষ:

বাংলা তারিখ: ২৬ আষাঢ় ১৪২৬, শুক্রবার।

ইং তারিখ: ১২/০৭/২০১৯।

সময়: রাত্রি ঘঃ ০২/১৭ মিনিট পর্যন্ত।

একাদশীর উপবাস:

বাংলা তারিখ: ২৬ আষাঢ় ১৪২৬, শুক্রবার।

ইং তারিখ: ১২/০৭/২০১৯।

সময়: রাত্রি ঘঃ ০২/১৭ মিনিট পর্যন্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement