শ্রীশ্রীমনসাদেবী ও শ্রীশ্রীঅষ্টনাগর তারিখ ও সময় নির্ঘণ্ট 

যে সব কবি বাংলা ভাষায় মনসার চরিতকথা লিখেছেন, তন্মধ্যে কানাহরি দত্ত, কেতকা দাস, ক্ষেমানন্দ, নারায়ণ দত্ত, বিজয়গুপ্ত, প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। এঁদের লিখিত পদ্মপুরাণ বা মনসামঙ্গলে দেবীর যে চরিত্রচিত্রণ করা হয়েছে, তা স্বভাবতই আমাদের মনে ভয় ও বিস্ময়ের উদ্রেক করে।

Advertisement

পার্থপ্রতিম আচার্য

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ০০:০৫
Share:

জরৎকারু, জগৎগৌরী, মনসা, সিদ্ধযোগিনী, বৈষ্ণবী, নাগভগিনী, শৈবী, নাগেশ্বরী, জরৎকারুপ্রিয়া, আস্তীকমাতা, বিষহরী ও মহাজ্ঞানযুতা— এই দ্বাদশ নামে দেবীর কোন রূপের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, বলুন তো? একদম ঠিক, এই বারোটি নাম স্বয়ং দেবী মনসার। স্তোত্রে বলা হয়েছে,
জরৎকারুজগদগৌরী মনসা সিদ্ধযোগিনী।
বৈষ্ণবী নাগভগিনী শৈবী নাগেশ্বরী তথা।।
জরৎকারুপ্রিয়াস্তীকমাতা বিষহরীতি চ।
মহাজ্ঞানযুতা চৈব সা দেবী বিশ্বপূজিতা।।
দ্বাদশৈতানি নামানি পূজাকালে চ জঃ পঠেৎ।
তস্য নাগভয়ং নাস্তি তস্য বংশোদ্ভবস্য চ।।
দেবী মনসা এই বারোটি নামে সমগ্র বিশ্বে পূজিতা। পূজাকালে এই বারোটি নাম স্মরণ করলে স্মরণকারী নিজে বা তাঁর বংশের সকলে সর্পভয় থেকে মুক্ত থাকেন।

Advertisement

আরও পড়ুন:জেনে নিন চলতি বছর রাখি বন্ধন উৎসবের নির্ঘণ্ট, সময়সূচি ও বিশেষ মন্ত্র

ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, দেবীভাগবতপুরাণ, মহাভারত, প্রভৃতি গ্রন্থে মনসাদেবীর লীলা ও মাহাত্ম্যকাহিনি বর্ণিত হয়েছে। যে

Advertisement

সব কবি বাংলা ভাষায় মনসার চরিতকথা লিখেছেন, তন্মধ্যে কানাহরি দত্ত, কেতকা দাস, ক্ষেমানন্দ, নারায়ণ দত্ত, বিজয়গুপ্ত, প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। এঁদের লিখিত পদ্মপুরাণ বা মনসামঙ্গলে দেবীর যে চরিত্রচিত্রণ করা হয়েছে, তা স্বভাবতই আমাদের মনে ভয় ও বিস্ময়ের উদ্রেক করে। চাঁদ সদাগরের দ্বারা পূজালাভ করার বাসনায় তাঁর জীবনে একের পর এক ঝরঝঞ্ঝা বয়ে নিয়ে এল মনসা। বণিকপুত্র কন্দর্পতুল্য লখিন্দরের প্রাণ সর্পাঘাতে হরণ করতেও পিছপা হলেন না দেবী। মানবসমাজে প্রতিষ্ঠা ও দেবসমাজে স্বীকৃতি পাওয়ার আশায় এক দেবী ও এক মনুষ্যের মধ্যে যে অহংকারপ্রসূত যুদ্ধ, তাই নিয়েই মনসামঙ্গল কাব্য রচিত।
মনসার উৎপত্তি বিষয়ে অনেক কাহিনি পাওয়া যায়। শোনা যায়, সর্পদংশনের ভয় থেকে মানুষের পরিত্রাণের জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মা কশ্যপমুনিকে একটি মন্ত্র বা বিদ্যাবিশেষ আবিষ্কার করার আদেশ দেন। ব্রহ্মার আদেশ পেয়ে কশ্যপ যখন মনে মনে এই বিষয়ে চিন্তা করছিলেন, তখন তাঁর মননক্রিয়া থেকে আবির্ভূতা হন এক স্বর্ণবর্ণা মহাদেবী। যেহেতু তিনি মানসজাতা, মন থেকে তাঁর জন্ম, তাই তিনি ‘মনসা’। ইনি ‘কামরূপা’, অর্থাৎ ইচ্ছানুযায়ী রূপধারণ ও রূপপরিবর্তন করতে সক্ষম। দেবীমহাভাগবতে একই কথার পুনরাবৃত্তি হয়েছে:
সা চ কন্যা ভগবতী কাশ্যপস্য চ মানসী।
তেনৈব মনসা দেবী মনসা বা চ দীব্যতি।।
শিব মনসার পিতা, শিবের আরাধনা করে তিনি দিব্যজ্ঞানলাভ ও সামবেদ অধিগত করেছিলেন। তাই দেবীর নাম ‘শৈবী’। আবার শিবের অনুকম্পায় অণিমা, লঘিমাদি অষ্টসিদ্ধিরা মনসার শরীরে প্রবেশ করে তাঁকে ‘সিদ্ধযোগিনী’ রূপে রূপান্তরিত করেন। পুনশ্চ, শিব তাঁর গুরুও বটে। শিবের নিকট হতেই তিনি ‘শ্রীং হ্রীং ক্লীং শ্রীকৃষ্ণায় স্বাহা’, এই আট অক্ষরযুক্ত বৈষ্ণবমন্ত্র প্রাপ্ত হয়ে পুষ্করতীর্থে গিয়ে তিনযুগব্যাপী ভক্তিমার্গ অবলম্বন করে শ্রীভগবানের আরাধনা করেছিলেন। তাই দেবীর এক নাম ‘বৈষ্ণবী’। দেবীভাগবত হতে এ-ও জানা যায়, সাধনায় তুষ্ট হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং সর্বাগ্রে মনসার পূজা করে তাঁকে ‘সর্বলোকপূজ্যা’ হওয়ার বর দান করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণের পর মহর্ষি কশ্যপ তাঁর পূজা করেন, তৎপরে মুনি, নাগ, গন্ধর্ব ও মানবগণ একে একে তাঁর পূজায় ব্রতী হয়।
অনেক নামের মধ্যে দেবীর এক নাম ‘বিষহরী’। সর্পবিষ হরণ করার অদ্বিতীয় কৌশল দেবীর জানা আছে বলেই এই নাম। মনসাপুজো সাধারণত শ্রাবণ সংক্রান্তি বা আষাঢ়ী পঞ্চমীতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, দেশে যখন প্রবল বর্ষাকালের সময়। এই সময়েই সাপ ও বিষাক্ত কীটের আধিক্য দেখা দেয় দুর্বার গতিতে। সুদূর অতীতে, যখন চিকিৎসাশাস্ত্র এত উন্নত হয়নি, তখন সর্পদংশনের চিকিৎসা হত মন্ত্র, ওষধি, ক্রিয়া ও দৈব, এই চার প্রকারে। এই চারটে পদ্ধতিই ছিল মনসাদেবীর কৃপার ওপর নির্ভরশীল। সেই কারণেই সর্পদ্বারা ঘটিত মৃত্যু বা সর্পদংশন এড়াতে সর্পদেবী মনসার পূজার প্রচলন। আবার কোথাও কোথাও দেবীর পরিবর্তে দেবীর প্রতীক হিসেবে অনন্ত, বাসুকি, পদ্ম, মহাপদ্ম, তক্ষক, কুলীর, কর্কট, শঙ্খ— এই অষ্টনাগও পূজিত হন।
এখন জেনে নেওয়া যাক পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত মাসব্যাপী শ্রীশ্রীমনসাদেবী ও শ্রীশ্রীঅষ্টনাগ পূজা সমাপনের তারিখ ও সময় নির্ঘণ্ট:
গুপ্তপ্রেশ পঞ্জিকা মতে:
বাংলা তারিখ: ৩২ শ্রাবণ ১৪২৬, রবিবার।
ইং তারিখ: ১৮/০৮/২০১৯।
সময়: সকাল ঘ ১০/০০ মিনিট থেকে।
অঞ্জলি: সকাল ঘ ১০/৩০ মিনিটের পর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement