আশ্বিন মাসে কৃষ্ণপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনায় যে অমাবস্যা আসে তাই মহালয়া—পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার সন্ধিলগ্ন।
পিতৃপক্ষের অবসানে, অমাবস্যার সীমানা ডিঙিয়ে আমরা যখন আলোকময় দেবীপক্ষের আগমনকে প্রত্যক্ষ করি, তখনই সেই মহালগ্নটি আমাদের জীবনে মহালয়ার বার্তা বহন করে আনে। এক্ষেত্রে স্বয়ং দেবীই হচ্ছেন সেই মহান আশ্রয়, তাই উত্তরণের লগ্নটির নাম মহালয়া। একটি অর্থ অনুসারে মহান আলয়টি হচ্ছে পিতৃলোক। আশ্বিন মাসে কৃষ্ণপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনায় যে অমাবস্যাকে আমরা মহালয়া হিসাবে চিহ্নিত করি, সেই দিনটি হচ্ছে পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার সন্ধিলগ্ন। পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার মাধ্যমে এই দিনটিতে আমরা আমাদের এই মানব জীবনকে মহান করে তুলতে প্রয়াসী হই বলেই এই পূণ্যলগ্নটিকে মহালয়া বলা হয়।
মহালয়া এলেই বাংলার মাটি-নদী –আকাশ প্রস্তুত হয় মাতৃপূজার মহালগ্নকে বরণ করার জন্য। কাশফুল ফুটলে শরৎ আসে, না শরৎ এলে কাশফুল এসব নিয়ে বিস্তর তর্ক চলতে পারে। কিন্তু মহালয়া এলেই যে দূর্গাপূজা এসে যায়, তা নিয়ে তর্কের কোনও অবকাশ নেই। মহালয়া এলেই সেই দেবী-বন্দনার সুর ধ্বনিত হয় বাংলার হৃদয়ে। দূর থেকে ভেসে আসে ঢাকের আওয়াজ। বুকের মধ্যে জাগে আনন্দ-শিহরিত কম্পন, মা আসবেন।
মহালয়া মানে দুর্গাপূজার দিন গোনা। মহালয়ার ছয় দিন পরেই আসে মহাসপ্তমি। ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবীকে আরাধনা করেছিলেন লঙ্কা জয় করে সীতাকে উদ্ধারের জন্য। শ্রীরামচন্দ্র অকালে অসময়ে পূজা করেছিলেন বলে এই শরতের পূজাকে দেবির অকাল-বোধন বলা হয়। আসল দুর্গাপূজা হলো বসন্তে, সেটাকে বাসন্তি পূজা বলা হয়। সনাতন ধর্মে কোনও শুভ কাজ করতে গেলে প্রয়াত পূর্বজ-সহ সমগ্র জীব-জগতের জন্য তর্পন করতে হয়, কার্যাদি-অজ্ঞলি প্রদান করতে হয়। তর্পন মানে হল খুশি করা। ভগবান শ্রীরাম লঙ্কা বিজয়ের আগে এই দিনে এমনই করেছিলেন। অনন্তকাল ধরে এই ভারতভূমিতে কোটি কোটি মানুষ মহালয়ার পূণ্য প্রভাতে- ‘ময়া দত্তেন তোয়েন তৃপ্যান্ত ভুবনত্রয়ম, আব্রহ্ম স্তম্ভ পর্যন্তং তৃপ্যন্তু’- এই মন্ত্র উচ্চারণ করে তিন গন্ডুষ জল অঞ্জলি দিয়ে স্মরণ করে চলেছেন তাঁদের বিদেহী পিতৃপুরুষ এবং পূর্বপুরুষকে।
পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে, দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। ব্রহ্মার বর অনুযায়ী কোনও মানুষ বা দেবতা কখনও মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারত না। ফলত অসীম ক্ষমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতারিত করে এবং বিশ্বব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব ত্রয়ী সন্মিলিত ভাবে ‘মহামায়া’ এর রূপে অমোঘ নারীশক্তি সৃষ্টি করলেন এবং দেবতাদের দশটি অস্ত্রে সুসজ্জিত সিংহবাহিনী দেবী দূর্গা নয় দিন ব্যাপি যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করলেন।