বাক্ এবং সরস্বতী দুই আলাদা দেবী ছিলেন

নদীরূপ থেকে দেবীরূপে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাক্-এর (ঋগ্বেদের সময়ে কিন্তু বাক্ এবং সরস্বতী দু’জন স্বতন্ত্র দেবী হিসাবেই প্রাধান্য অর্জন করেছিলেন।

Advertisement

পার্থপ্রতিম আচার্য

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:১৪
Share:

অলঙ্করণ তিয়াসা দাস।

নদীরূপ থেকে দেবীরূপে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাক্-এর (ঋগ্বেদের সময়ে কিন্তু বাক্ এবং সরস্বতী দু’জন স্বতন্ত্র দেবী হিসাবেই প্রাধান্য অর্জন করেছিলেন। ঋগ্বেদের বাগ্ দেবী বাক্যের অধিষ্ঠাত্রী।) সঙ্গে সরস্বতীর অভিন্ন সম্পর্ক যেমন দৃঢ় হয়েছে এবং কালের অগ্রগতির সঙ্গে বেদোত্তর কালে অভিন্ন দেবীরূপে তাঁরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, তেমনই ঋগ্বেদের ইলা, ভারতী ও সরস্বতী এই তিন দেবী সম্পদদায়িনী রূপে পূজিতা হলেও পরবর্তী কালে সরস‌্বতীই এদের মধ্যে প্রধানা হন এবং অন্য দু’জন স্বাতন্ত্র্য হারিয়ে সরস্বতীর সঙ্গে অভিন্ন হন।

Advertisement

বৈদিক যুগে মূর্তি পূজার প্রচলন ছিল না বলে নদীরূপ বিগ্রহেই সরস্বতী নদীর তীরে বৈদিক ঋষিরা জ্ঞানসাধনায় নিমগ্ন থাকতেন।। তাঁরা বৈদিক সূক্ত রচনা করতেন, বেদের অধ্যয়ন করতেন। যাগযজ্ঞাদি ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতেন। এই ভাবে নিরন্তর বিদ্যাচর্চার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নদীরূপা দেবী বিদ্যার দেবীতে রূপান্তরিত হন। বৈদিক যুগের শেষ ভাগে এবং পরবর্তী পৌরাণিক ও মহাকাব্যের সময় হিন্দুধর্মে যাগযজ্ঞের অনুষ্ঠানের পরিবর্তে দেবদেবীদের মূর্তি কল্পনা ও মূর্তি পূজার প্রথা প্রচলিত হয়। লোকপ্রিয় দেবী হিসাবে সরস্বতীর মূর্তি পূজা সহজেই জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ব্রাহ্মণ্যধর্ম ও সংস্কৃতি ছাড়াও বৌদ্ধ ও জৈনধর্মে এবং তন্ত্রশাস্ত্রেও বিদ্যাও জ্ঞানের দেবীরূপে সরস্বতী ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেন। বিভিন্ন পুরাণে, মহাকাব্যে ও তন্ত্রশাস্ত্রে নানা ভাবে দেবীর বর্ণনা পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী হোটেল ও রেস্তোঁরা কেমন ভাবে বানাবেন?

Advertisement

প্রতিমাতত্ব বিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থেও সরস্বতীর মূর্তি পরিকল্পনায় বৈচিত্র ও সমৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন স্থানে ও বিভিন্ন সময়ে সরস্বতীর যে সকল মূর্তি পাওয়া যায়, তাদের নির্মাণশৈলীতে বৈচিত্র্য ও বিভিন্নতা থাকলেও যে সাধারণ সাদৃশ্য দেখা যায় তা হল, দেবী সরস্বতী শুভ্র বর্ণা, হস্তে তাঁর বীণা এবং পুস্তক, তাঁর বাহন হংস, কখনো বা মেঘ। দেবী দ্বিভুজা বা চতুর্ভুজা। তিনি পদ্মাসনা, কখনও বা পদ্মের উপর দণ্ডায়মানা। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকে নির্মিত ভারহুত স্তুপের রেলিংস্তম্ভে বীণাবাদনরতা নারী মূর্তিটিকে সরস্বতীদেবীর প্রাচীনতম মূর্তি বলে মনে করা হয়। ভারতবর্ষে প্রায় সর্বত্র বিভিন্ন সময়ে ভাস্কর্য শিল্পে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় দেবী সরস্বতীর মূর্তি পাওয়া গিয়েছে। এই ভাবে বৈদিক ‘অন্বিতমা নদীতমা দেবীতমা’ সরস্বতী জ্ঞান ও বিদ্যার লৌকিক দেবীরূপে আজও একই ভাবে জনপ্রিয়তার স্বাক্ষর বহন করে চলেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement