সারা পৃথিবীতেই ঈশ্বর উপাসনার দুটি মৌলিক পদ্ধতি আছে। একটি সাকারকে উপাসনা বা মূর্তিপূজা। অপরটি নিরাকার বন্দনা। যারা সাকার পদ্ধতিতে বিশ্বাসী তারা বিভিন্ন দেবমূর্তি, প্রতিমা বা বিগ্রহ স্থাপন করে তাদের উপাসনা করেন। ভিন্ন ভিন্ন আরাধ্য অনুসারে তারা বিভিন্ন দেবপ্রতিমা স্থাপন করেন। দেবপ্রতিমা নির্মাণ, প্রতিমার প্রাণ-প্রতিষ্ঠা, প্রতিমার সংস্কার পদ্ধতি বা অর্চনা-বিধিও অতি প্রাচীন কাল থেকেই প্রচলিত এবং শাস্ত্রভুক্ত। ঈশ্বরের উপাসনা-পূজার কারণ তো মিথ্যা নয়। পূজা-উপাসনার ফলপ্রাপ্তিও নিশ্চিত। তাহলে কোথাও কি কোনও ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে যাচ্ছে? অথবা ভুল হচ্ছে কোথাও? আমাদের উচিত সঠিক শাস্ত্রসম্মত পদ্ধতি জেনে দ্রুত সেই সব ভুলের সংশোধন করা। সঠিক ভাবে গৃহদেবের সংস্থাপন করে যত দূর সম্ভব নির্ভুল পদ্ধতিতে তাঁর উপাসনা করা। আসুন, জেনে নিন গৃহদেবতাকে স্থাপন করার আগে কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
গৃহে স্থাপিত দেবপ্রতিমা কোন কোন বস্তু দ্বারা নির্মিত হবে:
গৃহে দেবপ্রতিমা স্থাপন করার আগে সর্বাগ্রেই জানতে হবে গৃহদেবতা কোন কোন দ্বারা নির্মিত হওয়া উচিত। প্রতিমার গঠন ধাতু প্রসঙ্গে শ্রীমদ্ ভদবতে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন-
শৌলো দারুময়ী লৌহো লেপ্যা লেখ্যা
চ সৈকতী।
মনোময়ী মণিময়ী প্রতিমাষ্টবিধাস্মৃতা।।
অর্থাৎ দেবপ্রতিমা প্রস্তর, দারুময়ী, লোহা বা স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত হওয়া আবশ্যক। এ ব্যতিত প্রতিমা উৎকীর্ণলিপি, কাগজের উপর চিত্রঙ্কিত, মৃত্তিকা বা রত্ন-উপরত্ন দ্বারা নির্মিত হতে পারে।
গৃহে স্থাপিত দেবপ্রতিমার আকার কেমন হবে:
গৃহে দেবপ্রতিমা স্থাপন করার পূর্বে প্রতিমার আকার সম্পর্কেও জেনে নেওয়া কর্তব্য। সর্বজনীন বা মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত প্রতিমার সাথে গৃহে স্থাপিত দেবপ্রতিমার আকারের অবশ্যই ফারাক থাকা উচিত। মন্দিরে যে আকারের প্রতিমা, গৃহে কখনই সেই আকারের প্রতিমা স্থাপন উচিত নয়। তা হলে গৃহে স্থাপিত দেবপ্রতিমার আকার কেমন হবে? এ সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে গৃহ প্রতিমার আকার মানব শরীরের অঙ্গুষ্ঠ পরিমাণ (অর্থাৎ আঙুলের পরিমাণ)-এর থেকে কম হবে না। মন্দিরে স্থাপিত দেবপ্রতিমার থেকে আকারে ছোটো হওয়া উচিত। এখানে একটা কথা স্পষ্ট করে জানানো যেতে পারে যে প্রতিমার আকার ছোট হলেই দেবতার প্রভাব খর্ব হয় না। আসলে আকারের সাথে দেব মহিমার কোনও সর্ম্পকই নেই। ক্ষুদ্রাকৃতি প্রতিমার থেকে বিশালাকায়, অলঙ্কৃত এবং বৈভবপূর্ণ প্রতিমার প্রভাব বেশি এমন নয়। বরং প্রভাব নির্ভর করে উপাসকের নিষ্ঠা, ভক্তি এবং যথাযথ উপাসনা পদ্ধতি পালনের উপর। প্রতিমার আকার যাই হোক না কেন তাঁর গরিমা এবং মহিমা প্রকাশিত হয় বস্তুতঃ উপাসকের শুদ্ধতা-পবিত্রতা এবং পূজা অর্চনার আকুতিকে কেন্দ্র করে।
বিঃ দ্রঃ- শ্রীমদ্ ভগবত মহাপুরাণে স্বয়ং ভগবান বলেছেন যে, দেবপ্রতিমা বিধিপূর্বক প্রতিষ্ঠা করলে ব্যক্তি সার্বভৌম সম্রাট হন এবং বিধি অনুসারে পূজা করলে তার ব্রহ্মলোক প্রাপ্তি নিশ্চিত।