শীতকালীন কোন খাবারে বশে থাকবে রোগবালাই, গা গরমও রাখা যাবে? ছবি: সংগৃহীত।
শীত যেমন কারও ভীষণ প্রিয়, তেমনই কেউ আবার অল্প ঠান্ডাতেই কাবু হয়ে যান। বিশেষত বয়স্ক মানুষজন তো বটেই। তার উপর ঠান্ডা লেগে সর্দিকাশি, গলা ব্যথা তো আছেই। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, শীতের বিভিন্ন সব্জি এবং খাবারের পুষ্টিগুণেই লুকিয়ে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি।
নয়ডার এক বেসরকারি হাসপাতালের পুষ্টিবিদ কিরণ সোনির কথায়, শীতই হল বিভিন্ন ধরনের খাবার খাওয়ার আদর্শ সময়। বিভিন্ন ধরনের খাবারের সঠিক সমন্বয় নানা অসুখবিসুখ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে। ত্বক ভাল রাখতেও সাহায্য করে। ঠান্ডাকে কাবু করতে হলে সঠিক খাবার বাছাই এবং তা সঠিক পরিমাণে খাওয়া দরকার।
খাদ্যতালিকায় কী কী থাকা দরকার?
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট: বিভিন্ন ধরনের বাদাম, যেমন আখরোট, পেস্তা, কাঠবাদামে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। এ ছাড়া বিভিন্ন সব্জির বীজ, তিসি, সাদা তিলেও মেলে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যা গা গরম রাখার জন্য এবং শরীর সুস্থ রাখতে ভীষণ জরুরি।
পানীয়: শীতের দিনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং গা গরম রাখতে বেছে নিতে পারেন বিভিন্ন রকম ভেষজ চা। এই চায়ে চা-পাতা থাকে না। বদলে আদা, হলুদ, তুলসী, মধু, লবঙ্গের মতো বিভিন্ন রকম উপকরণ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের চা করা হয়। আদা শীতে গা গরম রাখতে সাহায্য করে। তুলসীর হরেক গুণ। সর্দিকাশি , ছোটখাটো রোগবালাই দূর রাখতে সাহায্য করে। নিয়ম করে সকাল-সন্ধে ২ কাপ ভেষজ চায়ে চুমুক দিলে শরীর থাকবে তরতাজা। খেতে পারেন হলুদ দুধও। ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে গেলে এক গ্লাস গরম দুধ যেমন শরীরকে আরাম দেবে, তেমনই হলুদ দুধের গুণে বশে থাকবে রোগবালাই। হলুদে থাকে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, পলিফেনল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। যা শরীর সুস্থ রাখতে, ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে সহায়ক। জলের ঘাটতি দূর করবে এবং শরীরও গরম থাকবে রকমারি স্যুপ এবং স্টুতে। প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে শরীর গরম থাকে। মুরগির মাংস, ডাল, মাশরুম দিয়ে স্যুপ বানিয়ে নিতে পারেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কী খাবেন?
আদা-রসুন: ভারতীয় হেঁশেলে রান্নায় মশলা হিসাবে আদা এবং রসুন ব্যবহার হয়। শরীর গরম রাখতে যেমন এই উপাদান কার্যকর তেমনই এতে থাকা অ্যান্টি ব্যাক্টিরিয়াল এবং অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ফল: শীতের দিনের অন্যতম জনপ্রিয় ফল কমলালেবু। যে কোনও লেবুতেই প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। যা রোগবালাই দূর রাখতে সাহায্য করে।
হলুদ: হলুদের মধ্যে কারকিউমিন নামক যে উপাদান রয়েছে তা একাধিক রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। লিভার ভাল রাখতেও হলুদের ভূমিকা রয়েছে। এতে রয়েছে ফোলেট, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ভিটামিন সি।
আর কী খাওয়া দরকার?
প্রোটিন: প্রাণিজ প্রোটিন খেলে মুরগির মাংস, ডিম, মাছ এবং উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খেলে সয়াবিন, বিভিন্ন ডালশস্য বেছে নেওয়া যেতে পারে। শরীর ভাল রাখতে খাবার পাতে প্রোটিন থাকা অত্যাবশ্যক। প্রোটিন খাবার শীতের দিন শরীর গরম রাখতেও সহায়ক।
এর সঙ্গে পরিমাণমতো কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এবং খনিজে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদ, যা পাওয়া যায় বিভিন্ন দানাশস্য যেমন চাল, গম, রাগি ইত্যাদিতে। এ ছাড়া খেতে হবে শাক এবং সব্জি।