নুন খাওয়া নিয়ে কী বলছে হু? —ফাইল চিত্র।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যত খাবার খাওয়া হয়, তার প্রত্যেকটিতেই নির্দিষ্ট পরিমাণে নুন আছে। সেই নুন কতটা খেলে নিরাপদ, কতটা খেলে হার্ট অ্যাটাক বা হাইপারটেনশনের মতো বিপদ বাড়ে, দিনে ঠিক কতখানি নুন খাওয়া স্বাস্থ্যকর, কোন নুন খেলে ক্ষতি কম, তা না জেনেই নুন দেওয়া খাবার খাওয়া হতে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু সেই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়ে নুন সংক্রান্ত একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে।
কী বলছে হু?
১। হু-এর নির্দেশিকায় বলা হচ্ছে দিনপ্রতি শরীরে যাওয়া সোডিয়ামের পরিমাণ ২ গ্রামেরও নীচে নামিয়ে আনতে। সাধারণ নুনে ৫ গ্রামেই থাকে ২ গ্রাম সোডিয়াম। অর্থাৎ, হু-এর নির্দেশিকা মেনে চললে দিনে ৫ গ্রামেরও কম নুন খেতে হবে।
২। হু ওই নির্দেশিকায় বলেছে সাধারণ নুন খাওয়ার পরিমাণই কমিয়ে দিতে। কারণ শরীরে যাওয়া সোডিয়ামের পরিমাণ কমানোর সেরা উপায় সেটাই।
৩। নুন নিয়ে হু-এর সাম্প্রতিকতম নির্দেশিকায় বলা হচ্ছে সাধারণ নুনে থাকা সোডিয়ামের বদলে আংশিক ভাবে পটাশিয়াম দেওয়া নুন খাওয়া যেতে পারে।
যদিও হু বলেছে তাদের ওই তৃতীয় নির্দেশিকাটি কিডনির সমস্যা থাকা শিশু, মহিলা বা যে কোনও ব্যক্তি যিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের উপর প্রযোজ্য নয়।
কেন ওই নির্দেশিকা দিয়েছে হু?
হু জানাচ্ছে, তাদের বিশেষজ্ঞরা গোটা পৃথিবীতে হওয়া নুন সংক্রান্ত ২৬টি গবেষণা এবং সমীক্ষার তথ্য খতিয়ে দেখেছেন। তার মধ্যে একটি গবেষণা ভারতেরও। ওই সমস্ত গবেষণায় যোগ দিয়েছিলেন অন্তত ৩৫ হাজার মানুষ। তাঁদের উপর লক্ষ্য রাখা হয়েছে ২ মাস থেকে শুরু করে ৫ বছর পর্যন্ত। ওই সমস্ত গবেষণায় কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করেছেন তাঁরা।
১। দেখা গিয়েছে, সাধারণ নুন খাওয়ার অভ্যাস পাল্টে রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
২। মারণ নয়, এমন স্ট্রোকের ঝুঁকি কমিয়ে এনেছে ১০ শতাংশ। হৃদ্রোগে মৃত্যুর সংখ্যাও কমিয়েছে ২৩ শতাংশ।
৩। সাধারণ নুনের বদলে পটাশিয়াম-যুক্ত নুন খেয়ে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রাও বেড়েছে।
রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা ঠিক থাকা জরুরি। কারণ, প্রথমত, সোডিয়ামের ক্ষতিকারক প্রভাব কমাতে পারে পটাশিয়াম। দ্বিতীয়ত, পটাশিয়াম কোষে পুষ্টি সঞ্চার করে বর্জ্য বার করে আনতে সাহায্য করে। তৃতীয়ত, পটাশিয়াম হার্টের পেশির সঙ্গে যুক্ত স্নায়ুকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
তবে কি নুন খেলে পটাশিয়াম দেওয়া নুন খাবেন?
না। হু তা-ও বলছে না। সোডিয়ামের বদলে অন্য কোনও বিকল্প নুন খাওয়ার কথা জোর দিয়ে বলছে না হু। কারণ গবেষণায় কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে সোডিয়ামের বদলে পটাশিয়াম দেওয়া নুন খেলেও শরীরে সোডিয়ামের পরিমাণ কমেনি। শুধু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। ফলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে শরীরে সোডিয়াম না কমায় হার্টের রোগের ঝুঁকি কমেছে, সেটাও জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।
অনেকগুলি গবেষণায় সাধারণ নুনের বদলে পটাশিয়াম দেওয়া নুন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও কিছু কিছু গবেষণায় নুনে পটাশিয়ামের পাশাপাশি ম্যাগনেশিয়াম এবং ক্যালশিয়াম রাখার কথাও বলেছে।
কেন হু-এর নির্দেশিকা গুরুত্বপূর্ণ?
ভারতের জন্য হু-এর নির্দেশিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দেশে হৃদ্রোগ, হাইপারটেনশন, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক হতে শুরু করেছে কমবয়সিদের মধ্যেও। ভারতের চিকিৎসক সংগঠন আইসিএমআর-ইনডায়াব-এর সমীক্ষা বলছে, ভারতের মোট জনসংখ্যার ৩৫.৫ শতাংশ হাইপারটেনশনের সমস্যায় ভোগেন। ২০১৬ সালের গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজ়িজ়ের একটি গবেষণা বলছে, ভারতে মোট মৃত্যুর ২৮.১ শতাংশ হয় হৃদ্রোগের কারণে।
অনেকেই সাধারণ নুনের স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসাবে সৈন্ধব নুন খান। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সৈন্ধব নুনে সোডিয়ামের মাত্রা থাকে সাধারণ নুনের প্রায় সমপরিমাণ। হু-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি, যার জন্য পটাশিয়াম দেওয়া নুন স্বাস্থ্যকর বিকল্প হতে পারে। তবে শুধু পটাশিয়াম দেওয়া নুন খেলেই যে সোডিয়াম কমবে তা-ও নয়। বাইরে খাওয়া বা প্যাকেটজাত খাবারেও নুন থাকে। তা থেকেও শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা বাড়তে পারে। অন্যান্য শারীরিক কারণেও শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা না কমতে পারে।