ডায়াবিটিস রোগীরা কোন ফল বেশি করে খাবেন? ছবি: শাটারস্টক।
ডায়াবিটিস থাকলে খাওয়াদাওয়ায় চলে আসে নানা বিধি-নিষেধ। শর্করার মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে গেলেই রাশ টানতে হয় খাওয়াদাওয়ায়। ডায়াবেটিকরা অনেক কিছুই খেতে পারেন না। তবে ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে কী খাচ্ছেন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই কখন খাচ্ছেন, সেটাও অত্যন্ত জরুরি। তাই শুধু স্বাস্থ্যকর খাবার খেলেই শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। সঠিক সময়ে খেতে হবে। কারণ পেট খালি থাকলেই শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
নিয়ম করে শরীরচর্চা, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া, বাইরের খাবার না খাওয়া— ডায়াবেটিকদের কিছু নিয়ম মেনে চলতেই হয়। নয়তো শর্করার মাত্রায় রাশ টানা সম্ভব নয়। তবে এগুলির পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়াও জরুরি। এই একটি অনিয়ম বড় কোনও সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
কী রকম খাবার ডায়াবেটিকদের জন্য স্বাস্থ্যকর?
পুষ্টিবিদদের মতে, ডায়াবিটিক রোগীর আদর্শ ডায়েটের ৫০ শতাংশ হবে ফল ও আনাজ। ২৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট। বাকি ২৫ শতাংশ প্রোটিন। প্রাণীজ প্রোটিনের মধ্যে মাছ, মুরগির মাংস ও ডিম খেতে পারেন। নিরামিষাশীরা পনির, সয়াবিন, ডালের উপর ভরসা রাখতে পারেন। ডায়াবিটিস থাকলে ডায়েটে টক দই রাখতেই হবে। সাধারণত এক জন ডায়াবিটিক রোগীর বয়স, লিঙ্গ, শরীরের গঠন, জীবনযাপনের ধরন, রক্তে শর্করার মাত্রা— এই সব বিষয়ের উপর নির্ভর করে তাঁরা সারা দিন কত ক্যালোরি খাবেন।
খাবারের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিকরা কী কী খেয়াল রাখবেন?
১) ডায়াবেটিক রোগীদের খাওয়ার সময়ের উপর ভীষণ নজর রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময় বেঁধে খাবার খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের রাখার জন্য জরুরি। বিশেষ করে যাঁরা খাওয়ার আগে ইনসুলিন নেন, তাঁদের রোজ একই রকম রুটিন মেনে সময় ধরে খাওয়া উচিত।
২) কেবল খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ করলেই হবে না, নিয়ম করে শারীরচর্চাও জরুরি। ভারী ব্যায়াম না করে রোজ আধ ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যায়াম করতেই হবে।
৩) নিয়মিত রক্তের শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করাতে হবে।
কোন কোন খাবার খেলেই বিপদ?
ডায়াবেটিক রোগীদের খাওয়ার সময়ের উপর ভীষণ নজর রাখতে হবে। ছবি: শাটারস্টক।
ডায়াবেটিক রোগীদের মাখন, ঘি, মিষ্টি, সব রকমের মিষ্টিস্বাদযুক্ত খাবার যেমন, চিনি, মধু, গুড়, লজেন্স, আইসক্রিম, কেক, পেস্ট্রি, ফলের রস, নরম পানীয়, অ্যালকোহল, স্বাস্থ্যকর পানীয়, তেলেভাজা, শিঙাড়া, কচুরি, চপ, কাটলেট থেকে দূরে থাকাই ভাল। ডাবল টোনড দুধ। বিস্কুটের মধ্যে ক্রিমক্র্যাকার, মারি, থিন অ্যারারুট। ফলের মধ্যে ভিটামিন সি আছে এমন ফল যেমন মুসাম্বি, কমলালেবু, পাকা পেঁপে, আপেল ডায়েটে বেশি করে রাখতে হবে। কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে খেতে পারেন অল্প ভাত, রুটি, সুজি, চিঁড়ে, কর্নফ্লেক্স, মুড়ি, ব্রাউন ব্রেড ইত্যাদির খেতে পারেন, তবে মাত্রাতিরিক্ত নয়। আনাজপাতির মধ্যে মেপে খেতে পারেন রাঙা আলু, কচু, কাঁচা কলা, মুলো, গাজর, কুমড়ো ও এঁচোড়। পটল, চিচিঙ্গা, চালকুমড়ো, করলা, পেঁপে, ঢ্যাঁড়স, বেগুন, বাঁধাকপি, লাউ, ফুলকপি, শসা, থোর, মোচা, ক্যাপসিকাম, টোম্যাটো, পেঁয়াজ, আদা, সব ধরনের শাক, বিনস, ডুমুর, শিম, সজনে ডাঁটা— ডায়াবেটিক রোগীরা বেশি করে ডায়েটে পারেন।
ডায়াবিটিক ডায়েটের মূল মন্ত্র, প্রাতরাশ ভারী হবে, দুপুরের খাবার মাঝারি ও রাতের খাবার হালকা। কিন্তু সাধারণত ব্রেকফাস্ট এড়িয়ে যাওয়া ও রাতে ভারী খাবার খাওয়ার প্রবণতা থাকে রোগীদের মধ্যে। এই অভ্যাসের জেরে রক্তে শর্করার মাত্রা বিগড়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিক রোগীরা বেশি ক্ষণ খালি পেটে থাকলেই বিপদ। দুটো খাবারের মাঝে শসার সঙ্গে টক দই, ডিম সেদ্ধ, ছোলা, ছাতু, মাখানা— এই সব খেতে পারেন।