পিসিওডি থাকলেও কী ভাবে অভিনেত্রী সারা আলি খানের মতো ছিপছিপে শরীর পাবেন? ছবি: শাটারস্টক।
অনেকের ধারণা থাকে যে, পিসিওডি-র শিকার হলেই বুঝি আর ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব নয়। এই রোগ শরীরে বাসা বাঁধলেই ওজন বাড়তে বাধ্য। এবং এক বার বাড়লে তা কমানো সম্ভব নয়। এই ধারণা কিন্তু সম্পূর্ণ ভুল। অভিনেত্রী সারা আলি খানও পিসিওডি-র শিকার। একাধিক সাক্ষাৎকারে সারা স্পষ্ট জানিয়েছেন যে, পিসিওডি-র শিকার হয়ে তাঁর ওজন হয়েছিল প্রায় ৯৬ কিলোগ্রাম পর্যন্ত। আর হরমোনের ক্ষরণ বেশি হওয়ায় ওজন কমানোও তাঁর কাছে সহজ ছিল না। তবে এখন অভিনেত্রীকে দেখে তা বোঝার জো নেই। ওজন ঝরিয়ে এখন সারা ফিট। বর্তমান পরিস্থিতিতে, পাঁচ জন মেয়ের মধ্যে অন্তত একজন করে ভোগেন এই সমস্যায়। কিন্তু পিসিওডি কী? কেনই বা তা থাবা বসাচ্ছে রোজকার জীবনে?
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) এবং পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজ়িজ় (পিসিওডি)— দু’টি ক্ষেত্রেই শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। একটি সময়ের পর থেকে প্রত্যেক মেয়ের শরীরের দু’টি ডিম্বাশয় বা ওভারি থেকে প্রতি মাসে ডিম বেরোতে থাকে। পিসিওডির ক্ষেত্রে ওভারি সাধারণত অপরিণত কিংবা আংশিক পরিণত ডিমে ভরে যায়। ফলে পরবর্তী সময়ে তা জমে জমে সিস্টে পরিণত হয়। অতিরিক্ত ভাজাভুজি ও মশলাদার খাবার খাওয়া, ওজন বেড়ে যাওয়া, মানসিক চাপ এবং হরমোনাল ইমব্যালান্সের কারণে পিসিওডি হয়। এর ফলে ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়, পেটে চর্বি জমে ও ওজন বাড়ে, বন্ধ্যাত্ব এবং চুল পড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
পিসিওএস আবার আলাদা। এটি মূলত মেটাবলিক ডিজ়অর্ডার। এই রোগে আক্রান্ত হলে পুরুষালি হরমোনের আধিক্যের কারণে শরীর ও মুখে অবাঞ্ছিত রোমের প্রবণতা বাড়ে। ব্রণ, অ্যাকনের মতো সমস্যা দেখা দেয়। চুল ঝরে যায়। ওজনও বাড়ে। এ ছাড়াও আছে প্রজননের সমস্যা এবং ভবিষ্যতে উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ারও আশঙ্কা থেকে যায়।
পিসিওডি-র সমস্যা থাকলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খেতে হয় মহিলাদের। জেনে নিন এই রোগ শরীরে বাসা বাঁধলে কী ভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন।
১) ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। বদলে ফাইবারযুক্ত খাবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং পরিমিত প্রোটিন খেতে হবে। সাধারণ ভাত-রুটির বদলে ব্রাউন রাইস, আটার রুটি, ব্রাউন ব্রেড খেতে হবে, যাতে আছে লো গ্লাইসেমিক রেট। রান্না করা যেতে পারে অলিভ, ক্যানোলা, পিনাট বা আমন্ড অয়েলে। সেটা সম্ভব না হলে রান্নায় ব্যবহৃত তেলের পরিমাণ কমাতে হবে। সবুজ শাক, আনাজপাতি বেশি করে খাওয়া দরকার। তবে আম, কলা, আতা, আঁখ, কাঁঠাল বাদ দিলে ভাল হয়। ভাল মানের প্রোটিনও জরুরি। ডিম খেতে হলে কুসুম বাদ দিয়ে খেতে পারেন। অতিরিক্ত তেলযুক্ত মাছ নয়। দুধ খেলে লো ফ্যাট মিল্ক নিন। ডাল, ব্রকোলি, বেরি নিয়মিত খেতে পারেন।
২) পিসিওডি সমস্যা থাকলে খুব বেশি ক্ষণ খালি পেটে থাকবেন না। অনেকেই ওজন ঝরানোর জন্য খাবার পরিমাণ কমিয়ে নেন, দীর্ঘ ক্ষণ খালি পেটে থাকেন— এই অভ্যাস কিন্তু মোটেই ভাল নয়। এর ফলে বিপাকহার কমে যায়, অস্বাস্থ্যকর খাওয়ার প্রতি ঝোঁক আরও বাড়ে।
৩) ব্যায়াম, শারীরিক কসরতের মাধ্যমে যতটা সম্ভব সচল থাকলে, তা সাহায্য করবে এই রোগ মোকাবিলায়। ব্রিস্ক ওয়াকিং, যোগাভ্যাস, জগিং, স্কিপিং, সাঁতার কাটা— নিয়ম করে যে কোনও কিছু রোজ করতে হবে। ওজন যত কমবে, পেটের মেদ যত ঝরবে, ততই সুস্থ থাকবে শরীর। তাই পিসিওডি এবং পিসিওএস রুখতে হাতিয়ার করুন নিয়মিত খাওয়াদাওয়া এবং সংযত জীবনযাপনকে।