কোন কোন খাবার রোজ রাখবেন পাতে। ছবি: ফ্রিপিক।
মধ্যবয়সিরা কেবল নন, কমবয়সিরাও ভুগছেন বাতের ব্যথায়। কারও হাঁটুতে ব্যথা, কারও গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা, আবার কেউ উঠতে-বসতে গেলেই পিঠ-কোমরের যন্ত্রণায় কাতর হয়ে উঠছেন। বিভিন্ন হাড়ের সংযোগস্থল অর্থাৎ অস্থিসন্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে বাত হয়। এতে ব্যথা হওয়া সঙ্গে সঙ্গে চলাফেরায়ও সমস্যা হতে শুরু করে। দু’টি হাড়ের অস্থিসন্ধিতে রয়েছে কার্টিলেজ। এই কার্টিলেজগুলির ক্রমাগত ক্ষয় হতে থাকলেই তখন শরীরের ভিতর প্রদাহ শুরু হয়। ব্যথাবেদনাও বাড়তে থাকে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হল শরীরে সঠিক পুষ্টির অভাব এবং রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে যাওয়া। এই ঘাটতি মেটানোর জন্য এমন কিছু খাদ্যতালিকায় রাখতেই হবে যা থেকে ভিটামিন, খনিজ, প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সবই পাওয়া যায়।
খুচরো খিদে মেটাতে রাস্তার খাবার বা ঝালমশলা দেওয়া খাবার খাওয়ার বদলে হাতের কাছে রাখুন পুষ্টির কিছু স্ন্যাকস। এমন খাবার যা শরীরের ভিতর তৈরি হওয়া প্রদাহ কমাতে পারে প্রাকৃতিক ভাবেই। কেবল তাই নয়, এগুলি খেলে বাতের ব্যথাবেদনা থেকেও রেহাই মেলে।
ব্লুবেরি
ফলটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর। যে কোনও ফল বা সব্জির চেয়ে বেশি পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে ব্লুবেরিতে। কোনও কারণে শরীরের ভিতরে প্রদাহ সৃষ্টি হলে, তা কমিয়ে দিতে পারে ব্লুবেরি। শুধু তা-ই নয়, মহিলাদের মধ্যে হৃদ্রোগের আশঙ্কাও কমিয়ে দেয় এই ফল। এতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন্স শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ফলটিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারও আছে যা হজম ক্ষমতা বাড়ায়। বাতের ব্যথায় ভুগছেন যাঁরা, বিশেষ করে অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস, তাঁদের জন্য খুবই উপকারী ব্লুবেরি। প্রাতরাশে ওট্সের সঙ্গে ব্লুবেরি খেতে পারেন। দুধ-কর্নফ্লেক্স খেলে উপরে ছড়িয়ে দিন ব্লুবেরি। এতে ক্যালোরি কম। ওজন কমাতেও সাহায্য করবে।
আখরোট
ক্যানসার থেকে হার্টের অসুখ, সবই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে আখরোট। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতেও জুড়ি মেলা ভার এই বাদামের। আখরোটে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে যা প্রদাহ কমায়। রিউমাটয়েড হোক বা আস্টিয়োআর্থ্রাইটিস— যে কোনও রকম বাতের ব্যথা কমাতে পারে আখরোট।
আখরোটে ফাইবারও থাকে ভাল মাত্রায়। ডায়েটে ফাইবার রাখলে হজম ক্ষমতা বাড়ে। ‘আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড’ নামে একধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে আখরোটে যা গাঁটে গাঁটে ব্যথা, হাড়ের ক্ষয় কমাতে সাহায্য করে। তা ছাড়া আখরোটের প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও ভিটামিন ই শরীরের যে কোনও রকম প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ডার্ক চকোলেট
রাতে খাবার পরে ছোট তিন টুকরো ডার্ক চকোলেট খেলে শরীরের ব্যথাবেদনা কমে যাবে। প্রদাহজনিত অসুখ থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে। রাতে খাবার পরে মিষ্টি খেতে মন চায় অনেকের। বেশি চিনি দেওয়া মিষ্টি বা কেক জাতীয় কিছু না খেয়ে, বরং ডার্ক চকোলেট খাওয়ারই পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা। তবে অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে।
ডার্ক চকোলেটের মধ্যে থাকে কোকো যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আসলে কোকোর মধ্যে থাকে প্রচুর মাত্রায় ফ্ল্যাভোনয়েড যা মস্তিষ্কে রক্তের সঞ্চালনা বাড়িয়ে দেয়। সেরোটোনিন নামে হরমোনের ক্ষরণ শুরু হয় যা মনকে খুশি রাখে। ডার্ক চকোলেট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকলেই হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে।