লিভার ক্যানসার কেন বাড়ছে? ছবি: ফ্রিপিক।
লিভারের অসুখ ধরা পড়া মানেই খাওয়াদাওয়ায় ইতি। জন্ডিস হলেই আতঙ্ক কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এই বুঝি ভালমন্দ খাওয়া বন্ধই হয়ে গেল। ইদানীং কালে ফ্যাটি লিভারের সমস্যাও ভারতীয়দের মধ্যে খুবই বেশি। বিশেষ করে কমবয়সিরা বেশি ভুগছেন লিভারের সমস্যায়। লিভারের সাধারণ কিছু অসুখ এক দিকে, আর ক্যানসার অন্য দিকে। অনেকেই ভাবেন, এক বার বা দু’বার জন্ডিস হল অথবা ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ল মানে তেমন কিছু নয়। ওষুধ খেলে সেরে যাবে। কিন্তু বিপদ ঘনায় পরবর্তী সময়ে গিয়ে। লিভার সংক্রান্ত যে কোনও অসুখকে হেলাফেলা করা মানেই মারণরোগকে নিমন্ত্রণ করে আনা। ফ্যাটি লিভারও কিন্তু বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে সিরোসিস বা লিভারে ক্ষতের কারণ হয়ে উঠতে পারে, যা থেকে ক্যানসার অবধারিত।
রোজের কিছু অভ্যাসই ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলে দাবি গবেষকদের। পাবমেড থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, দীর্ঘ সময় বসে থাকা, শরীরচর্চা না করার অভ্যাস লিভারের জটিল অসুখের কারণ হতে পারে।
দেশে প্রতি বছর লিভার ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা কম করেও ৩৫ হাজার। প্রতি বছর ক্যানসারে মৃত্যুও হয় ৩০ থেকে ৩৪ হাজার মানুষের। গুরুগ্রামের মেদান্ত হাসপাতালের রেডিয়োলজিস্ট অনুভব হরিশ খন্ডেলওয়াল জানিয়েছেন, যকৃতের ক্যানসার মূলত দু’ধরনের— ‘প্রাইমারি লিভার ক্যানসার’ বা হেপাটোসেলুলার (এইচসিসি) ক্যানসার এবং ‘সেকেন্ডারি লিভার ক্যানসার’ বা ‘মেটাস্ট্যাটিক লিভার ক্যানসার’। প্রাইমারি লিভার ক্যানসারের ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দেখা দিতে পারে এটির উপসর্গ। কিন্তু সেকেন্ডারি লিভার ক্যানসারের উপসর্গ প্রকট হওয়ার কোনও বয়স থাকে না। যখন অন্য কোনও অঙ্গে ক্যানসার হয়, তখন সেই অনুযায়ী ছড়াতে পারে উপসর্গ।
কোন তিন অভ্যাস ক্যানসারের জন্য দায়ী?
প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অ্যালকোহল
জাঙ্ক ফুড, প্যাকেটবন্দি প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল লিভার ক্যানসারের কারণ হতে পারে। প্রক্রিয়াজাত খাবার দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করে রাখতে যে সব রাসায়নিক মেশানো হয়, সেগুলি শরীরের জন্য বিষ। পাশাপাশি, মদ্যপান সাত রকমের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। যার মধ্যে পাকস্থলী, লিভার ও স্তনের ক্যানসার অন্যতম। যে পানীয়তেই ইথানল থাকবে, তার দাম যতই বেশি হোক না কেন, মান যতই ভাল হোক না কেন, সেই পানীয় খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি থাকবেই।
বাসি বা দীর্ঘ দিন ফ্রিজে রাখা খাবার খেলেও কিন্তু তা লিভারের ক্ষতি করবে। যেমন আচার বা ওই ধরনের খাবার দীর্ঘ দিন ধরে রেখে দিয়ে খাওয়া হয়। একটা সময় পরে তাতে ছত্রাকের জন্ম হয়। এই ছত্রাকের মধ্যে থাকে আফলাটক্সিন, যা যকৃতের ক্যানসারের জন্য দায়ী।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা
টানা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বসে বা শুয়ে থাকলে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। সমীক্ষা বলছে, যাঁরা কোনও রকম কায়িক পরিশ্রম করেন না, তাঁদের শরীরে ক্যানসার হানা দেওয়ার সম্ভাবনা ৮২ শতাংশ।
শরীরচর্চা না করা
ওজন নিয়ন্ত্রণে না রাখলে তার থেকে নানা সমস্যা দেখা দেবে। রোগের সঙ্গে লড়াই করার শক্তি প্রয়োজন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে ক্যানসারের মতো মারণরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গেলে নিয়মিত ব্যায়াম করতেই হবে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ক্যানসার ‘মাল্টি ফ্যাক্টেরিয়াল ডিজ়়িজ়’। শরীরের কোনও কোষের অস্বাভাবিক এবং অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ও বিভাজন ক্যানসারের অন্যতম কারণ। শরীরে জমা কিছু টক্সিন এই বিভাজনে সাহায্য করে। কাজেই টক্সিন দূর করতে হলে নিয়ম মেনে শরীরচর্চা করতেই হবে।