মায়োপিয়া রোগের উপসর্গ কী? ছবি: শাটারস্টক
অফিসের কাজ হোক কিংবা অবসরের ফাঁকে বিনোদন— মোবাইল ছাড়া এখন আর গতি নেই। দিনের বেশির ভাগ সময়টাই কেটে যায় মোবাইলের দিকে তাকিয়ে। কেবল বড়দেরই নয়, শিশুদেরও এখন পড়াশোনা চলছে অনলাইনে। তাদের ক্ষেত্রেও স্ক্রিন টাইম আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে কোভিডের পর। মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা ট্যাব— যে কোনও স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘ ক্ষণ তাকিয়ে থাকার ফলে চোখের যে ক্ষতি হয়, তাকে চিকিৎসকেরা বলেন মায়োপিয়া। এই সমস্যায় যাঁরা আক্রান্ত হন, তাঁরা নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকা সব কিছু ঝাপসা দেখেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০১০ সালে মায়োপিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০ কোটি। তবে তাঁদের অনুমান ২০৩০ সালে সেই সংখ্যাটা ৩৩০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে।
মায়োপিয়ার উপসর্গ কী?
১) দূরের কোনও জিনিস একেবারে ঝাপসা দেখা।
২) দূরের কোনও জিনিসকে স্পষ্ট দেখার জন্য চোখের পাতাগুলিকে কাছাকাছি নিয়ে আসা।
৩) সারা ক্ষণ মাথাব্যথা।
৪) চোখে যন্ত্রণা।
স্ক্রিনের ব্লুলাইটের জন্য চোখের বারোটা বাজছে, চেষ্টা করুন সূর্যের আলোতে বেশ খানিক ক্ষণ কাটানোর। ছবি: সংগৃহীত।
কী ভাবে এই রোগের ঝুঁকি এড়াবেন?
চিকিৎসকদের মতে, বড়দের ক্ষেত্রে কাজের সূত্রে ৮ ঘণ্টা ও বিনোদনের জন্য ২ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইম না রাখাই ভাল। ২ থেকে ৫ বছরের শিশুদের অভিভাবকেরা অনেক সময় তাদের শান্ত রাখতে টিভি কিংবা মোবাইলে কার্টুন চালিয়ে দেন, তবে সে ক্ষেত্রে তাদের স্ক্রিন টাইম যেন এক ঘণ্টার বেশি না হয়ে যায়, সে দিকে নজর রাখতে হবে। রাতে ঘুমোনোর এক ঘণ্টা আগে মোবাইল, টিভি কিংবা ট্যাবের দিকে না তাকানোই ভাল। স্ক্রিনের ব্লুলাইটের জন্য চোখের বারোটা বাজছে, চেষ্টা করুন সূর্যের আলোতে বেশ খানিক ক্ষণ কাটানোর। এ ছাড়া, কাজের মাঝে কিংবা অবসর সময়ে বেশ কিছু ব্যায়ামও করতে হবে। জেনে নিন কোন কোন ব্যায়ামে উপকার পাবেন।
১) হাতের তালুর ব্যবহার: প্রায় ১০-১৫ মিনিট দু’হাতের তালু একটির সঙ্গে অপরটি ঘষে নিন। ঘর্ষণের ফলে হাতের তালুতে যে তাপ উৎপন্ন হবে, চোখ বন্ধ করে হাত দু’টি চোখের উপরে রাখুন। চাপ দেবেন না। হালকা হাতে তাপ দিন চোখে। দিনে ৩-৪ বার এটি করতে পারেন। চোখ ভাল থাকবে।
২) ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চলুন: টানা ২০ মিনিট কম্পিউটার বা মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার পর ২০ ফিট দূরে থাকা কোনও জিনিসের দিকে অন্তত ২০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকুন। এই পন্থা মেনে চললে চোখের উপর বাড়তি চাপ পড়বে না।
৩) ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলা: প্রতি ৩-৪ সেকেন্ড পর পর চোখের পাতা ফেলা, চোখের অনেক সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। বিশেষ করে এক ভাবে কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকলে মাঝেমাঝে চোখের এই ব্যায়ামটি করে নেওয়া ভাল। টানা এক মিনিট ঘন ঘন চোখের পাতা ফেলাও খুব উপকারী একটি অনুশীলন। দৃষ্টিশক্তি ভাল হয়।
৪) চোখ ঘোরানোর অভ্যাস: গোল করে চোখের মণি ঘোরানোও চোখ ভাল রাখার জন্য বেশ কার্যকর একটি ব্যায়াম। ঘড়ির কাঁটার অভিমুখে এবং ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে চার বার করে মণি ঘোরান। তার পর চোখ বন্ধ করে রাখুন দু’-তিন সেকেন্ড মতো। দিনে দু’বার করে এই ব্যায়ামটি করুন। চোখের পেশি ভাল থাকবে। দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হবে না।