—ফাইল চিত্র।
চুমুকে তৃপ্তির জোগান দেওয়া আপাত নিরীহ নরম পানীয় কি আড়াল থেকে হৃদরোগকে ডেকে আনছে? একটি গবেষণা অন্তত তেমনই বলছে। দশ বছর ধরে প্রায় ৭০ হাজার মানুষের উপর পরীক্ষা করে গবেষকেরা দেখেছেন, নিয়মিত নরম পানীয় খেলে তা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মতো নানারকম হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষণার ফলাফল সোমবারই প্রকাশিত হয়েছ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক পত্রিকা জার্নাল ফ্রন্টিয়ারে। সেখানেই লেখা হয়েছে, ‘‘চিনি বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে। তার মধ্যে মিষ্টি পানীয় হল সবচেয়ে ক্ষতিকর।’’ লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক গবেষক সুজ়ান জানজ়ি বিষয়টি আরও ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘‘মিষ্টি পানীয়ে থাকে তরল চিনি। কঠিন অবস্থায় থাকা চিনি খেলে যে পরিতৃপ্তি সহজে আসে, তরল চিনি খেলে তা আসে না। আর যেহেতু তৃপ্তি আসে না, তাই আমরা আরও বেশি খেতে থাকি। ফলত যে কাজ এক চামচ চিনি করতে পারে, নরম পানীয়ের মাধ্যমে তার অন্তত ৭-৮গুন বেশি চিনি শরীরে প্রবেশ করার পরে পরিতৃপ্ত হই। আর এই অতিরিক্ত চিনিই ডেকে আনে বিপদ।’’
সাধারণত বিয়ের অনুষ্ঠান বা পার্টি বা যেকোনও অনুষ্ঠানেই অতিথিদের মিষ্টি পানীয় পরিবেশন করা হয়। অজান্তেই সেই পানীয় অন্তত তিন-চার বার খেয়ে ফেলেন অনেকেই। গবেষক জানজ়ি অবশ্য বলছেন, ‘‘দু’-তিন মাসে এক-আধ বার নরম পানীয় খেলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সমস্যা তৈরি হতে পারে নিয়মিত ব্যবধানে খেলে।’’
বেশি পরিমাণে চিনি খেলে মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে কি না তা জানতে দু’টি আলাদা গবেষণা চালানো হয়েছিল। তাতে স্বেচ্ছায় অংশ নিয়েছিলেন ৬৯ হাজার ৭০৫ জন। অতিমাত্রায় চিনি সেবন কতটা ক্ষতিকর তা জানতে নরম পানীয় ছাড়াও পেস্ট্রি, মধু, চকোলেট রাখা হয়েছিল খাদ্যতালিকায়। সেই সঙ্গে নজর রাখা হয়েছিল সাতরকম হৃদরোগের লক্ষ্যণের দিকেও।
১০ বছরে অংশগ্রহণকারীদের থেকে নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ এবং যাচাই করে দেখা যায়, তাঁদের মধ্যে ২৫ হাজার ৭৩৯ জনেরই হৃদরোগ ধরা পড়েছে। যাঁরা বেশি চিনি খেয়েছেন, তাঁদের ইসকেমিক স্ট্রোক এবং অ্যাবডমিনাল এয়ারোটিক অ্যানিউরিজ়ম ঝুঁকি বেড়েছে বেশি। যাঁদের বিএমআই-এর হার স্বাভাবিক, তাঁদের মধ্যে হার্ট ফেল করার ঝুঁকি বেড়েছে। যাঁরা বেশি চিনি সেবন করেছেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস যাচাই করে দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে মিষ্টি এবং নরম পানীয় খাওয়ার প্রবণতা ছিল বেশি। যদিও জানজ়ি বলছেন, ‘‘গবেষণার যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, তার পুরোটাই গবেষকদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে। কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আরও গবেষণা এবং আরও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা দরকার।’’