হৃৎস্পন্দনের ওঠানামা হিসেব করবে স্মার্ট ওয়াচ। ছবি: ফ্রিপিক।
হাতঘড়িই যেন চিকিৎসক! তবে যে সে হাতঘড়ি নয়, স্মার্টওয়াচ। এখনকার স্মার্টওয়াচ বা ফিটনেস ট্র্যাকারগুলি নাকি হার্ট অ্যাটাকের আগাম সঙ্কেত দিতে পারে। কারও শরীরে করোনা বাসা বেঁধেছে কি না, তা-ও ধরে দিতে পারে। সাউথ অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমনটাই দাবি করেছেন। সারা দিনে কত পা হাঁটলেন, হৃৎস্পন্দনের হার কেমন আর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কত— এই তিন বিষয়ে নাকি একেবারে নির্ভুল স্মার্ট ওয়াচ।
শরীরের অন্দরে কী চলছে, তার উপর নজর রাখতে এখন অনেকেই স্মার্ট ওয়াচ বা ফিটনেস ট্র্যাকার কেনেন। শখ করে কেনা হাতঘড়ি বিপদের সময়ে প্রাণ বাঁচিয়েছে, এমন উদাহরণও অনেক। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, স্মার্ট ওয়াচে এমন অ্যালগরিদম থাকে, যা হাতে পরা থাকলে নাড়ির গতি নির্ধারণ করতে পারে। যিনি ঘড়িটি পরে রয়েছেন, তিনি কতটা কায়িক পরিশ্রম করছেন, তার ফলে হৃৎস্পন্দনের ওঠানামা কতটা হচ্ছে, তা স্বাভাবিক না কি অস্বাভাবিক, তা-ও বলে দিতে পারে। শ্বাসপ্রশ্বাসের হার কত, তা পরিমাপ করে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রাও নির্ধারণ করতে পারে স্মার্ট ওয়াচ। তাই হার্টের অবস্থা কেমন, সেখানে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হচ্ছে কি না, অক্সিজেন পৌঁছচ্ছে কি না, তা নির্ধারণ করে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা আছে কি না বলে দিতে পারে স্মার্ট ওয়াচ।
স্মার্টওয়াচের মধ্যে সব ধরনের ফিটনেস ট্র্যাকার থাকে। এর মধ্যে রয়েছে জিপিএস। প্রত্যেকের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী আলাদা করে ক্যালোরি মাপার সুবিধাও দেওয়া থাকে।
সাধারণত এক জন মানুষের হার্টবিট মিনিটে ৬০-১০০র মধ্যে থাকে এবং হৃৎস্পন্দনের নির্দিষ্ট ছন্দ থাকে। কিন্তু হার্টের সঙ্কোচন-প্রসারণের সময় ছন্দের হেরফের ঘটে। তবে তার একটা মাত্রা আছে, সেটা কম-বেশি হলে তখন চিন্তার ব্যাপার। অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনকে চিকিৎসার পরিভাষায় কার্ডিয়াক অ্যারিদমিয়া বলা হয়। হার্ট রেট কমে যাওয়ার ফলে যে অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হয়, তার থেকে হার্টে ব্লক হতে পারে। তখন নানা রকম লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট এমনকি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে হৃৎস্পন্দন ৬০-এর নীচে চলে যায়। স্মার্ট ওয়ার্চ হৃৎস্পন্দনের এই ওঠানামার হার হিসেব করে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না, তা বলে দিতে পারবে।
তবে এই বিষয়ে নানা রকম মত আছে। পুণের এক জন হৃদ্রোগ চিকিৎসক অনীশ জৈনের মত, স্মার্ট ওয়াচের ক্ষমতা সীমিত। এটি কেবলমাত্র রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হার্ট রেট হিসাব করে সম্ভাব্য কিছু ফল জানাতে পারে। কিন্তু ইলেকট্রোকার্ডিয়ামের মতো নির্ভুল তথ্য দিতে পারে না। খুব জোরকদমে হাঁটলেও হার্ট রেট ওঠানামা করে, আবার হরমোনাল সমস্যা, মানসিক চাপ, অতিরিক্ত ধূমপান, অতিরিক্ত উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা থেকেও অনিয়মিত ও দ্রুত হৃৎস্পন্দন হতে পারে। অন্য কোনও রোগের কারণেও এই সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে। যেমন রক্তচাপজনিত সমস্যা, ডায়াবিটিস বা অতীতে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাওয়া। তাই সব কিছু বিচার করেই হার্টের অবস্থা কেমন, তা পরীক্ষা করা হয়। সে ক্ষেত্রে স্মার্ট ওয়াচের দেওয়া সব তথ্য নির্ভুল না-ও হতে পারে।