Nutritionist

তর্কে বহু দূর

প্রচলিত সব ধারণা যে সব সময়ে ঠিক এমনটা নয়। বরং যুক্তি দিয়ে বিচার করে তবেই খাবারের তালিকায় বদল আনা উচিত।

Advertisement

কোয়েনা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:২৩
Share:

রাতে ফল খাওয়া ঠিক না, লো-ফ্যাট খাবার মানেই তা স্বাস্থ্যকর, ডায়াবেটিক রোগীরা সুগার-ফ্রি খাবার খেতে পারেন... এ ধরনের নানা প্রচলিত ধারণা রয়েছে অনেকের মধ্যে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, কখন কী খাবেন-খাবেন না, তা নিয়ে অনেকের মনেই দ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে এ ধরনের প্রচলিত ধারণার অধিকাংশই কিন্তু অযৌক্তিক। প্রচলিত ধারণা বিশ্বাস করা, মেনে চলার আগে যুক্তি দিয়ে তা বিচার করা দরকার। যেমন:

Advertisement

বেশি রাতে খেলে ওজন বাড়ে

পুষ্টিবিদদের মতে, কখন খাচ্ছেন তা জরুরি না বরং কী খাচ্ছেন, কতটা পরিমাণে তা খাচ্ছেন, সেই দিকে নজর রাখা দরকার। শরীর সুস্থ রাখতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিমাণ মতো খাওয়াদাওয়া করা ভাল।

Advertisement

প্রক্রিয়াজাত খাবার মানেই খারাপ

এ কথা নিঃসন্দেহে ঠিক যে বহু প্রক্রিয়াজাত খাবারই অস্বাস্থ্যকর। পুষ্টিবিদ ডা. অনন্যা ভৌমিক বলছেন, “তবে তার মধ্যেও কিছু খাবার (বিভিন্ন ফ্রোজ়েন সবজি, ক্যানড বিনস বা টুনা ইত্যাদি) খাওয়া যায়। তাজা সবজি, ফল, মাছ যেখানে সহজলভ্য নয়, সেখানকার মানুষের খাদ্যতালিকায় এ ধরনের খাবার থাকলে শরীরের পুষ্টিগত চাহিদা মিটবে।”

ডিটক্স ডায়েট জরুরি

শরীরের ডিটক্সিফিকেশনের নিজস্ব কিছু ব্যবস্থা রয়েছে। কিডনি, লিভার ইত্যাদি মারফত তা হয়ে থাকে। এর উপরে অপ্রয়োজনে ডিটক্স ডায়েট করলে তা অনেক সময়েই শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কিডনি, লিভার ইত্যাদির উপরে এতে অত্যধিক চাপ পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

কার্বস মাত্রেই খারাপ

কার্বোহাইড্রেটস খেলেই ওজন বাড়বে, প্রচলিত এ ধারণা ঠিক না। বরং কার্বোহাইড্রেট ব্যালান্সড ডায়েটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রেও তা জরুরি। অনন্যা জানালেন, কার্বস দিনভর পরিশ্রম করার জন্য শরীরে এনার্জির জোগান দেয়। কাজেই কোনও ব্যক্তির পক্ষে দিনে কতটা কার্বোহাইড্রেট খাওয়া স্বাস্থ্যকর, তা জেনে নিয়ে হিসেব করে খেলে সমস্যা থাকে না। “সাধারণ কার্বোহাইড্রেটস সমৃদ্ধ খাবারের (পাঁউরুটি, মিষ্টি জাতীয় খাবার ইত্যাদি) তুলনায় কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটস সমৃদ্ধ খাবার (ওটস, কর্নফ্লেক্সের মতো দানাশস্য, স্টার্চ সমৃদ্ধ সবজি ইত্যাদি) ডায়েটে থাকা ভাল। এই ধরনের খাবার হজমে সময় বেশি লাগে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ধীর গতিতে বাড়ে,” বলছেন অনন্যা।

স্পট রিডাকশন সম্ভব

শরীরের কোনও নির্দিষ্ট অংশকে নজরে রেখে ডায়েটে সেখানকার ফ্যাট কমানো সম্ভব না। পুষ্টিবিদদের মতে, ডায়েট কিন্তু সমস্ত শরীরের উপরে একই রকম প্রভাব ফেলে। শরীরের কিছু অংশে বেশি ফ্যাট থাকার কারণে, সে অংশের তুলনায় অন্য জায়গার ফ্যাট আগে বার্ন হয়।

লো-ফ্যাট খাবার স্বাস্থ্যকর

স্বাস্থ্যসচেতন ক্রেতাদের কথা ভেবেই আজকাল বাজারে লো-ফ্যাট বা ফ্যাট ফ্রি বলে নানা ধরনের খাবার বিক্রি হয়। স্বাস্থ্যকর অপশন দেখে অনেকেই তা খাচ্ছেনও। একই ভাবে ডায়াবেটিকদের জন্য ডায়েটে স্ন্যাক্স, সুগার-ফ্রি মিষ্টি, নরম পানীয় ইত্যাদিও পাওয়া যায়। সাধারণ পণ্যের তুলনায় এ জাতীয় লো-ফ্যাট, ফ্যাট ফ্রি বা ডায়েট খাবারের দাম বেশি। তবে চিকিৎসক, পুষ্টিবিদদের মতে, এগুলো কেবলই ব্যবসায়িক কৌশল। এ ধরনের খাবারে স্বাদ বজায় রাখতে অনেক সময়েই অতিরিক্ত চিনি বা অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয়। তাই এ ধরনের খাবারের দিকে ঝোঁকার আগে সতর্ক হওয়া দরকার।

না খেলে ওজন কমবে

খালি পেটে থাকলেই যে ওজন কমবে, এমনটা নয়। বরং এতে গ্যাস-অম্বলের মতো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বেশি সময় খালি পেটে থাকলে শরীরে এনার্জির ঘাটতি, মুড সুইং ইত্যাদি সমস্যাও হয়। তবে দিনের শুরুতেই ভারী জলখাবার খাওয়ার যে প্রচলিত পরামর্শ রয়েছে, তা সব সময়ে সকলের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়। ডা. ভৌমিক বলছেন, “প্রাতরাশ জরুরি ঠিকই। তা শরীরের মেটাবলিজ়ম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব পছন্দ বা রুটিন অনুযায়ী খাওয়ার ধরন আলাদা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শরীরের বিশেষ ক্ষতি হয় না। শরীর এতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।” তবে ঘুম ভাঙার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে হালকা খাবার অন্তত খাওয়া উচিত।

জুস খাওয়া ভাল

খাদ্যতালিকাকে স্বাস্থ্যকর করে তুলতে এখন অনেকেই লিকুইড ডায়েট পছন্দ করছেন। ফল থেকে সবজি... সব জুস বানিয়ে খেলেই নাকি উপকার পাওয়া যাবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ডায়েটে অনেক সময়েই শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবারের অভাব হতে পারে। তা ছাড়া, রক্তে শর্করার পরিমাণও এতে দ্রুত বাড়ে। এর চেয়ে গোটা ফল বা সবজি পছন্দ অনুযায়ী রান্না করে খাওয়াই ভাল।

এ ছাড়াও, ফ্যাট জাতীয় খাবারে ওজন বাড়ে, প্রচলিত সে ধারণাও অনেকাংশে ভুল। শরীরে গুড ফ্যাট অর্থাৎ স্নেহজাতীয় পদার্থ জরুরি, যা পাওয়া যায় তৈলাক্ত মাছ, চিজ়, ডার্ক চকলেট, বাদাম, অলিভ অয়েল ইত্যাদি থেকে। তাই খাদ্যতালিকায় অল্পস্বল্প পরিমাণে এ ধরনের খাবার রাখতেই পারেন।

আবার অনেকেই ওজন কমানোর আশায় সকালে খালি পেটে চিয়া সিডস ভেজানো জল, গরম জলে পাতিলেবু, মধু, বা অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খান। পুষ্টিবিদরা বলছেন, এ সবক’টি ধারণাই ভ্রান্ত। ঠিক তেমনই ফ্রিজের ঠান্ডা জল বা নিয়মিত আম খেলে ওজন বাড়ে না। সন্ধের পরে ফল খাওয়াতেও কোনও সমস্যা নেই। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, প্রচলিত সিদ্ধান্ত চোখ বুজে মেনে না নিয়ে যুক্তি ও বিজ্ঞান দিয়ে বিচার করে খান। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement