কেন গরমে বাড়ছে ম্যালেরিয়া? বিজ্ঞানীরা জানালেন কারণ। ফাইল চিত্র।
বর্ষার স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় মশার উৎপাত বাড়ে, এমনটাই এত দিন জানা ছিল। কিন্তু খামখেয়ালি আবহাওয়া সব হিসেব উল্টে দিচ্ছে। জয়বায়ুর বদলই মশার বংশবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ বলেই দাবি করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র গবেষকেরা। চিন্তার ব্যাপার হল, ভ্যাপসা গরমেই ম্যালেরিয়ার মশার সংখ্যা বাড়ছে। তাই রোগ ছড়ানোর আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা জরুরি।
কেন গরমেই বাড়ছে ম্যালেরিয়া?
হু-র তথ্য বলছে, ম্যালেরিয়ার মশা অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই গরমেই ডিম বেশি পাড়ছে। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, বেশি তাপমাত্রায় ও তীব্র তাপপ্রবাহে মশার জীবনচক্র দ্রুত সম্পন্ন হয়। ডিম থেকে লার্ভা, পিউপা ও শেষে পূর্ণাঙ্গ মশায় রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াটি গরমের সময়েই দ্রুত হয়। কেবল তা-ই নয়, ম্যালেরিয়া সৃষ্টিকারী পরজীবী প্লাজ়মোডিয়ামের বিভাজনও দ্রুতগতিতে ঘটে এই সময়ে। অর্থাৎ বাড়তে থাকা তাপমাত্রাই ম্যালেরিয়ার জীবাণুর বংশবৃদ্ধিতেও ইন্ধন জোগায়। গবেষণাগারে পরীক্ষা করেও দেখা গিয়েছে, তাপমাত্রার বৃদ্ধিতে ম্যালেরিয়ার পরজীবী আরও বেশি সংক্রামক হয়ে উঠেছে। তাপমাত্রা যত বাড়ানো হয়েছে, ততই বেড়েছে তাদের বিভাজনের ক্ষমতা। বদল এসেছে জিনগত গঠনেও।
স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা এই জীবাণুর বাহক। ম্যালেরিয়ার পরজীবীর চারটি প্রজাতি আছে— প্লাজ়মোডিয়াম ভাইভ্যাক্স, প্লাজ়মোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম, প্লাজ়মোডিয়াম ওভিলি এবং প্লাজ়মোডিয়াম ম্যালেরি। তাদের মধ্যে প্লাজ়মোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের আক্রমণেই হয় প্রাণঘাতী ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া। উত্তর ভারতের নানা রাজ্যে, ওড়িশা, গুজরাতে প্লাজ়মোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম ও প্লাজ়মোডিয়াম ভাইভ্যাক্স মশার প্রকোপ বেড়েছে বলে খবর। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, পরজীবীর এই প্রজাতিগুলিই গরমের সময়ে বেশি সংক্রামক হয়ে উঠেছে।
প্রতিরোধের উপায় কী কী?
১) বাড়ির আনাচকানাচে পরিত্যক্ত পাত্রে জমে থাকা জল মশার আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠে। সে সব দিকে নজর দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বোতলের ফেলে দেওয়া ছিপিতে জমে থাকা জলেও মশার লার্ভা জন্মাতে পারে।
২) মশার উপদ্রব যে সব এলাকায় বেশি, সেখানে মশারি ব্যবহার করতেই হবে।
৩) পরিত্যক্ত জমিতে আবর্জনার স্তূপেও জল জমে থাকছে। তাই বাড়ির আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা খুব জরুরি।
৪) ডিডিটি-র মতো কীটনাশক ঘরে স্প্রে করলে মশার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
৪) জ্বর যদি কাঁপুনি দিয়ে আসে, তা হলেই রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ, সাধারণ জ্বর হলে কাঁপুনি হবে না। কিন্তু কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হলেই দেরি না করে রক্ত পরীক্ষা করানো দরকার।