জিনগত কারণে যকৃতের ক্যানসার হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
সারা দিনের ইঁদুরদৌড়। তার উপর নামমাত্র খাওয়া, কখনও বা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেয়ে ফেলা। সপ্তাহান্তে আবার বন্ধুবান্ধব কিংবা অফিসের পার্টিতে টুকিটাকি মদ্যপান। কম ঘুম আর বেশি কাজের এই দুনিয়ায় এ ভাবেই দিন কাটে অধিকাংশ মানুষের। অনিয়মিত জীবনের সঙ্গে শখের বা অভ্যাসের মদ্যপান মিশিয়ে তাকে আরও জটিল করে তোলেন অনেকেই। সঙ্গে অবশ্যই চলে অকারণে বেদনানাশক ওষুধ খেয়ে চলার প্রবণতা। উদ্দেশ্য, লিভারের যেটুকু ক্ষতি বাকি আছে তা-ও, তা পুষিয়ে দেওয়া! এই সব বদ অভ্যাসের জেরে লিভার সিরোসিস, ফ্যাটি লিভারের পাশাপাশি লিভারের ক্যানসারেরও ঝুঁকি বাড়ছে।
যকৃতের ক্যানসার মূলত দু’ধরনের। ক্যানসার যখন সরাসরি লিভারে বাসা বাঁধে তাকে বলে ‘প্রাইমারি লিভার ক্যানসার’ বা ‘হেপাটোসেলুলার (এইচসিসি) ক্যানসার’। যখন শরীরের অন্য কোনও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্যানসার হয়, সেখান থেকেও ক্যানসার ছড়িয়ে পড়তে পারে যকৃতেও। এ ক্ষেত্রে সেটিকে ‘সেকেন্ডারি লিভার ক্যানসার’ বা ‘মেটাস্ট্যাটিক লিভার ক্যানসার’ বলা হয়। প্রাইমারি লিভার ক্যানসার খুব একটা দেখা যায় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেকেন্ডারি লিভার ক্যানসার দেখা যায়।
কাদের লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে?
১) জিনগত কারণে যকৃতের ক্যানসার হতে পারে।
২) ওজন বেশি হলেও তা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা না করলে বাড়তে পারে এই রোগের আশঙ্কা।
৩) মদ্যপানও ক্ষতি করে যকৃতের।
৪) হেপাটাইটিস বি বা সি-এর জন্য যকৃতে সংক্রমণ ঘটে। জন্ডিসে আক্রান্ত হলেও বাড়তে পারে এই ক্যানসারের আশঙ্কা।
৫) অনেকেরই অভ্যাস, দীর্ঘদিন ধরে আচার বা ওই ধরনের খাবার ফেলে রাখা। একটা সময়ের পরে তাতে ছত্রাকের জন্ম হয়। এই ছত্রাকের মধ্যে থাকে আফলাটক্সিন, যা যকৃতের ক্যানসারের জন্য দায়ী।
লিভার ক্যানসারের উপসর্গ কী?
যখন অন্য কোনও অঙ্গে ক্যানসার হয়, তখন সেই অনুযায়ী ছড়াতে পারে এটির উপসর্গ। সাধারণত, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, রক্ত বমি হওয়া, পেটের উপরের দিকে কিছুটা ব্যথা হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। খিদে কমে যাওয়াও এর একটি লক্ষণ হতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, এই সব উপসর্গ লিভার সিরোসিসের রোগীদের মধ্যেও দেখা যায়। কিন্তু, ক্যানসার আর সিরোসিসের উপসর্গ এক হলেও এই দু’টি রোগ এক নয়। যখন কোনও দীর্ঘকালীন ক্রনিক রোগে কেউ ভুগতে থাকেন কিংবা অত্যধিক মদ্যপান করেন, তখন রোগীর শরীর চেষ্টা করে ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলিকে সারিয়ে তোলার। এই সময়ে যকৃতের মধ্যে থাকা কিছু ‘ফাইব্রাস টিসুর’ মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া নষ্ট হয়ে যায়। এর থেকে হয় ‘স্কারিং অব লিভার’ অর্থাৎ সিরোসিস। এই দু’টি রোগের উপসর্গ প্রায় একই হওয়ার কারণে অনেক সময়েই রোগী বা তাঁর পরিবারের বুঝতে দেরি হয়ে যায়। তাই উপসর্গগুলি দেখলেই সতর্ক হন, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।