রতন টাটা। ছবি: সংগৃহীত।
৮৭ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এমেরিটাস রতন টাটা। ৬ অক্টোবর রাতে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর মিলেছিল যে, রতন টাটাকে মুম্বইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরও দাবি করা হয়েছিল, আচমকা তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে তাঁকে আইসিইউয়ে ভর্তি করানো হয়েছে। কিন্তু ৭ অক্টোবর সকালেই সব জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে শিল্পপতি নিজেই জানিয়েছিলেন, সব খবর ভুয়ো। বরং বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার কারণে নিয়মমাফিক চেকআপের জন্যই হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। এর পর ৯ অক্টোবর রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর মিলল।
হৃদ্রোগ চিকিৎসক শাহরুখ আসপি গোলওয়ালা রতন টাটার চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি জানান, রতন টাটা নিম্ন রক্তচাপ বা হাইপোটেনশনের সমস্যায় ভুগছিলেন বেশ কিছু দিন ধরে। এই রোগের কারণেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। হাইপোটেনশনের কারণে তাঁর শরীরের অন্য অঙ্গগুলির কার্যকারিতাও নষ্ট হতে শুরু করে। এর পাশাপাশি শেষের দিকে তাঁর শরীরে জলের মাত্রাও কমতে শুরু করেছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।
রক্তচাপের মাত্রা ঠিক রাখা সহজ নয়। কখনও বেড়ে যায়। আবার কখনও অনেক কমে যায়। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কারও রক্তচাপের মাত্রা যদি ১১০/৬০-এর নীচে নেমে যায়, তা হলে ওই ব্যক্তি নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন বলে ধরে নেওয়া হয়।
রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে গেলে মস্তিষ্ক, কিডনি, হৃৎপিণ্ডে ঠিক ভাবে রক্ত চলাচল করতে পারে না। ছবি: সংগৃহীত।
রক্তচাপের মাত্রা বেড়ে গেলে যেমন নানা অসুবিধা হয়, তেমনই স্বাভাবিকের তুলনায় অত্যধিক কমে গেলেও কিন্তু ঝুঁকি থাকে। রক্তচাপ অতিরিক্ত কমে গেলে মস্তিষ্ক, কিডনি, হৃৎপিণ্ডে ঠিক ভাবে রক্ত চলাচল করতে পারে না। ফলে বুক ধড়ফড় করে, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, চোখে অন্ধকার দেখা, বমি ভাব, শ্বাস নেওয়ার সমস্যা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। অনেকেরই ধারণা, উচ্চ রক্তচাপের চেয়ে নিম্ন রক্তচাপ কম ভয়ের। চিকিৎসকেরা বলছেন, এই ধারণা একেবারেই সত্যি নয়। হৃদ্যন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে নিম্ন রক্তচাপ। তাই এমন হলেও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকলে রোজের জীবনে মেনে চলুন কয়েকটি নিয়ম।
১) শরীরে জলের ঘাটতি নিম্ন রক্তচাপের কারণ হতে পারে। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে তাই শরীর আর্দ্র রাখা প্রয়োজন। নয়তো রক্তচাপ কমে গিয়ে বিপদ হতে পারে।
২) অত্যধিক হারে মদ্যপানের অভ্যাস, শরীরে জলের পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারে। জলের ঘাটতি দেখা দিলে নিম্ন রক্তচাপের মতো সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।
৩) উচ্চ রক্তচাপ থাকলে নুন খেতে বারণ করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু নিম্ন রক্তচাপের ক্ষেত্রে রক্তচাপের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সামান্য নুন খাওয়া যেতে পারে।
৪) প্রোটিন, মিনারেলস, কার্বোহাইড্রেট-সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খাওয়া জরুরি। নিম্ন রক্তচাপে শারীরিক দুর্বলতা থাকে। নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
হঠাৎ রক্তচাপ কমে গেলে কী করা উচিত?
চিকিৎসকদের মতে, এমন হলে প্রথমেই নুন-চিনির জল দিন রোগীকে। এক গ্লাস জলে ২-৩ চা চামচ চিনি ও এক চা চামচ নুন মেশান। নুনের সোডিয়াম ও চিনির শর্করা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তবে ডায়াবিটিসের রোগী হলে চিনি বাদ দিয়ে বেশি করে নুন-জল খান। যে দিন এমন হবে, পারলে সেই দিনটা সব খাবারের মাঝেই রাখুন নুন-চিনির জল। রোগীর ঘাড়ে, কানের লতির দু’পাশে ও চোখে-মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিন। এতে তিনি অনেকটাই সুস্থ বোধ করবেন। স্নায়ুগুলি আরাম পাবে। শরীরে প্রোটিন কমলেও রক্তচাপের উপর তার প্রভাব পড়ে। দুধ ও ডিমে হাই প্রোটিন। তাই এমন হলে রোগীকে পথ্য হিসাবে দিন ডিম ও দুধ। মূলত, ডিমের কুসুম।
প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা শুরু হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ডায়েটে বদল আনার আগে অবশ্যই পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।