Sanitary Napkin Safety

ক্যানসারের মতো রোগ ডেকে আনে স্যানিটারি ন্যাপকিন? আদৌ কতটা নিরাপদ, বলছেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক

অভ্যাস এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে সুবিধার কারণে এখনও স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহারই ভারতের মতো দেশে বেশি। কিন্তু এই প্যাড কি আদৌ নিরাপদ? পরিবেশের পাশাপাশি মেয়েদের স্বাস্থ্যের জন্যও তা ক্ষতিকর নয় তো?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৫ ১৯:৩৭
Share:
Is Sanitary Napkin safe for women in menstrual hygiene, explained by doctor

স্যানিটারি প্যাড কি আদৌ নিরাপদ? ছবি: সংগৃহীত।

সুবিধার কথা মাথায় রাখতে গিয়ে স্বাস্থ্যের প্রতি অবহেলা করা হচ্ছে? স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার নিয়ে এমন প্রশ্ন উঠছে বহু কাল ধরেই৷ সে কারণেই বিকল্পের আবির্ভাব। যদিও সেগুলি প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে এখন। কিন্তু অভ্যাস এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে সুবিধার কারণে এখনও স্যানিটারি প্যাডের ব্যবহারই ভারতের মতো দেশে বেশি। কিন্তু এই প্যাড কি আদৌ নিরাপদ? পরিবেশের পাশাপাশি মেয়েদের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর নয় তো?

Advertisement

মহিলারা ঋতুস্রাবের সময় স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতেই প্যাডের উপর নির্ভর করেন, অথচ এই ন্যাপকিনগুলি আদপে কী কী উপাদান দিয়ে বানানো, তা জানেন না সিংহভাগ মানুষ। একাধিক রিপোর্টের দাবি, সাধারণ স্যানিটারি প্যাডের মধ্যে রয়েছে প্লাস্টিক, কৃত্রিম সুগন্ধি এবং একাধিক রাসায়নিক পদার্থ, যা মহিলাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। বেশির ভাগ মহিলাই জানেন না, তাঁরা যে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করেন, তা প্রায় ৯০ শতাংশ প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। এমনকি নরম তুলোর অংশেও প্লাস্টিকের আস্তরণ রয়েছে। যাতে স্রাবের সময়ে তাড়াতাড়ি শোষিত হয়ে যায়।

Is Sanitary Napkin safe for women in menstrual hygiene, explained by doctor

স্যানিটারি ন্যাপকিন কতটা ক্ষতি করতে পারে মহিলাদের? ছবি: সংগৃহীত।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করা নিরাপদ, অন্তত এত বছর ধরে তা-ই জানা গিয়েছিল। তবে গত কয়েক বছর ধরে ট্যাম্পন এবং অন্যান্য স্যানিটারি পণ্য ব্যবহার করার ফলে ডাইঅক্সিনের মতো দূষণ সৃষ্টিকারী পদার্থের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি গবেষণায়, ডাইঅক্সিন এবং অতি-শোষক পলিমারের মতো উপাদানের উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। এর ফলে যৌনাঙ্গের ক্যানসারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ডাইঅক্সিন শরীরে জমা হতে পারে এবং মহিলাদের প্রজননের অঙ্গগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে। এর কারণে জরায়ুমুখের ক্যানসার বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার হতে পারে। এটি মূলত কার্সিনোজেনিক, অর্থাৎ এটি শরীরে ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষ তৈরি করে।

Advertisement

মেনস্ট্রুয়াল কাপে কি কোনও ক্ষতি হতে পারে? ছবি: সংগৃহীত।

এই বিষয়ে আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বললেন স্ত্রীরোগ চিকিৎসক সুভাষ হালদার। তাঁর কথায়, ‘‘স্যানিটারি ন্যাপকিন শব্দেই ‘স্যানিটেশন’ শব্দটি রয়েছে, যার অর্থ পরিচ্ছন্নতা। আর তার মানেই তা নিরাপদ। কিন্তু কারও যদি প্যাডের নির্দিষ্ট কোনও উপাদানে অ্যালার্জি থেকে থাকে, তা হলে সেটি তার জন্য ক্ষতিকারক। কিন্তু এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য, যে সংস্থাগুলি ন্যাপকিন তৈরি করছে, তাদের দায়িত্ববোধের উপর নির্ভর করে আদৌ এগুলি নিরাপদ কি না। যদি কার্সিনোজেনিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়, তা হলে তো তা কখনওই কারও জন্য ভাল নয়। দায়িত্ব নিয়ে কয়েক ধরনের ন্যাপকিনকে পর্যবেক্ষণ করে এই নিয়ে গবেষণা করা উচিত। তার পর কোন ন্যাপকিন নিরাপদ, কোনটি নয়, সেটি বোঝা যাবে। ক্ষতিকারক প্লাস্টিক ছাড়াও স্যানিটারি প্যাড তৈরি করা যায়। কিন্তু যদি ব্যবসার লাভের খাতিরে সংস্থাগুলি সে কথা মাথায় না রাখে, তা হলে সেটি বিপদ ডেকে আনবে। তাই সব সংস্থাগুলিকে সতর্ক হতে হবে।''

প্লাস্টিক অথবা সিন্থেটিক ন্যাপকিন শরীরে কী ভাবে ক্ষতি করে?

চিকিৎসক জানাচ্ছেন, যে কোনও পদার্থের অণু-পরমাণু মানুষের ত্বকের সংস্পর্শে এলে, রাসায়নিকগুলি শরীরে প্রবেশ করে। রক্তের মাধ্যমে সেগুলি বিভিন্ন কোষের মধ্যে পৌঁছয়। এর ফলে কোষের শারীরবৃত্তীয় কাজগুলি বদলে যায়। সেখানে তা রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে সাধারণ কোষের কাজকে ব্যাহত করে। এর পরই মিউটেশনের ফলে কোষগুলি ক্যানসারে পরিণত হতে পারে। এ ছাড়া ত্বকের সংস্পর্শে এলে চামড়ার কোষগুলি একই ভাবে প্রভাবিত হতে পারে।

ছবি: সংগৃহীত।

চিকিৎসকের কথায়, ‘‘সঠিক গবেষণা হলে, সঠিক উপাদান দিয়ে তৈরি করলে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিন্তু আদপেই ক্ষতিকারক নয়। এ ছাড়া নতুন যে বিকল্পগুলি তৈরি হয়েছে, ট্যাম্পন হোক বা মেনস্ট্রুয়াল কাপ, সেগুলি ব্যবহার করা অত সহজ নয় সকলের জন্য। কিন্তু স্বেচ্ছাসেবী দল যদি দায়িত্ব নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মহিলাদের এগুলি ব্যবহার করার পদ্ধতি শেখাতে পারে, তা হলে কাপও ব্যবহার করা যায়। অনেক মহিলাই এ সব বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন না বলেই এগুলির সমাধান হয় না। তা ছাড়া প্যাডের ব্যবহার নিয়েও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। যেমন একটি প্যাড ৬-৮ ঘণ্টার বেশি পরে থাকতে নেই। এই সমস্ত কিছু মাথায় রাখলে ঋতুস্রাবের স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে দুশ্চিন্তার দরকার পড়ে না।''

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement