late pregnancy

পেশাজীবন সামলাতে গিয়ে বাড়ছে বয়স, সন্তানধারণে দেরি, উদ্বেগের কারণ আছে কি?

নিজের পেশাজীবন পাকাপোক্তভাবে দাঁড় করানো, তার পর জুতসই জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া, স্বভাবতই বিয়ে করতে দেরি হয়ে যাচ্ছে মেয়েদের। কিন্তু তার মানে কি মাতৃত্বের স্বপ্ন থেকে যাবে অধরাই? কী বললেন দুই টলি-কন্যা?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪ ১১:৪৩
Share:

সকন্যা সুদীপ্তা চক্রবর্তী এবং কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

ভাল ভাবে কেরিয়ার গড়ার জন্য দিতে হয় জীবনের অনেকগুলো বছর। তার পর, সম্পর্কের এই অনিশ্চয়তার যুগে মানানসই সঙ্গী খুঁজে পাওয়াও সহজ নয়। তাই, এখন সবাই বিয়ে করছেন অনেকটাই পরিণত বয়সে। কিন্তু, সে ক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে– এতে কি সমস্যা হচ্ছে মেয়েদের সন্তানধারণে? মাতৃত্বের স্বপ্ন কি থেকে যাচ্ছে অধরা?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন কথা বলল দুই টলিউড-কন্যের সঙ্গে, যাঁরা অনেক বেশি বয়সে পেয়েছেন মাতৃত্বের স্বাদ।

ফোনের ও পারে অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “আমি তো বলব, আগে যে নিয়ম ছিল, তাড়াতাড়ি বিয়ে করে সন্তানের জন্ম দেওয়া, সেটাই ঠিক ছিল। আসলে, আমাদের সামাজিক নিয়মগুলো তো তৈরি হয়েছে অনেক ভেবেচিন্তেই। সবাই ‘প্রেগনেন্সি’র আগের কথা বলে, কেউ পরের কথা বলে না। আমি যদি আরও কম বয়সে মা হতাম, অনেক বেশি ছুটতে পারতাম।”

Advertisement

বেশি বয়সে সন্তানধারণে কি কোনও শারীরিক সমস্যা হয়েছিল ?

অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী জানালেন, “আমি তো একটু দেরি করেই সন্তান নিই। দিদিকে দেখেছি, অনেক কম বয়সে সন্তান নিতে এবং তখনই লক্ষ করেছি, ওর বেশ সুবিধেই হচ্ছে। যদিও আমার শারীরিক ভাবে কোনও সমস্যা হয়নি। তবে, হ্যাঁ, মনখারাপ তো হত। আমি তো অভিনেতা, মোটা হয়ে যাচ্ছি বলে ভয় পেতাম।”

মায়ের কোলে। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

সন্তানের দেখাশোনাতে কি সমস্যা হয়?

“তা হয়। কম বয়সে মা হলে, সন্তানের দাদু-দিদারও বয়স কম থাকে। তাই, বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে কাজ করতে হলেও, দাদু-দিদা নাতি বা নাতনির খেয়াল রাখতে পারেন। কলকাতায় প্রশিক্ষিত আয়া বা ‘ন্যানি’ একেবারেই পাওয়া যায় না। তাদের দায়িত্বে সন্তান রেখে আসা বা সন্তান বড় করা একেবারেই নিশ্চিন্ত করে না বাবা-মাকে,” মত কনীনিকার।

আর মায়ের পেশাজীবন?

কনীনিকা বললেন, “‘পোস্ট-নেটাল ডিপ্রেশন’ বা সন্তানের জন্মের পরে মায়েরা যে অবসাদের শিকার হন, সে বিষয়ে আমার কোনও ধারণা ছিল না। এই সময়ে ‘কেরিয়ারে’ মেয়েরা কিছুটা তো পিছিয়ে যায় বটেই। অন্তত, শরীরকে তো কিছুটা সময় দিতেই হয়। আমি এখন আমার ‘কেরিয়ারে’ চাইলেও ছুটতে পারব না, কারণ, আমি এখন ছুটলে, আমার মেয়ে তাল মিলিয়ে আমার সঙ্গে হাঁটতে পারবে না।”

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

বেশি বয়সে সন্তানধারণ করার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অনেকগুলি ভয়। কেউ ভাবেন, তিরিশের পর দেহ হারিয়ে ফেলে সন্তানধারণ করার স্বাভাবিক ক্ষমতা, সুতরাং, আইভিএফ ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না; কেউ মনে করেন, তিরিশের পর সন্তানধারণের ক্ষেত্রে বেড়ে যায় গর্ভপাতের সম্ভাবনা বা সন্তানের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে শারীরিক বা মানসিক জটিলতা।

কিন্তু বাস্তবটা কী?

স্ত্রীরোগ চিকিৎসক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের মতে, আসলেই ভয়ের যথেষ্ট কারণ আছে।

তিনি বলেন, “পুরুষদের শুক্রাণু সংখ্যা কখনও কমে না। কিন্তু, মহিলাদের ডিম্বাণুর সংখ্যা কমে। আর বয়সের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, তার মানও কমে। তিরিশ বছর পর্যন্ত তা-ও চলনসই, কিন্তু পঁয়ত্রিশের পর থেকে ডিম্বাণুর মান পড়তে থাকে। তখন, ‘ডাউন সিনড্রোম’, ‘সেরিব্রাল পলসি’ বা এই ধরনের সমস্যা সন্তানের মধ্যে দেখা যায়। তা ছাড়া, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে নানা স্ত্রীরোগ, সন্তানধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। যেমন, ‘এন্ডোমইটিস’ আর ‘অ্যাডিনোমাইটিস’। এই ধরনের সমস্যা থাকলে, সন্তানধারণ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি আইভিএফ পদ্ধতিতেও খুব একটা উপকার পাওয়া যায় না। তখন প্রচুর অর্থ ব্যয় করেও মাতৃত্বের স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়।”

তা হলে উপায়?

চিকিৎসকের মতে, এখন তো সব অফিসেই মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুর করা বাধ্যতামূলক। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটু সময় বার করে কম বয়সে সন্তানধারণ করাই ভাল। যদিও প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে, কিন্তু সেই সঙ্গে জটিল হচ্ছে আমাদের জীবনও। এমন কিছু সমস্যার আমরা সম্মুখীন হচ্ছি, যা আগে হতাম না। তাই, কি দরকার ঝুঁকি নেওয়ার! সুযোগ থাকলে মাতৃত্ব বেছে নিন কম বয়স থাকতেই।

আমরা যতই নারী-পুরুষের সমতার কথা বলি, নিজের শরীর থেকে আর একটি জীবনকে জন্ম দেওয়ার এই যাত্রাপথের পথিক প্রাকৃতিক ভাবে একমাত্র মহিলারাই হতে পারেন। জীবনের নানা দিককে একাধারে নিয়ে চলার এই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতেই হবে এ যুগের মেয়েদের। এই যুগে এর আর কোনও উপায়ান্তর নেই।

কনীনিকা বলেন, “হ্যাঁ, এই সমস্যাটা নতুন, একেবারেই এ যুগের। তবে, আমরা এত কিছু পেরিয়ে এসেছি, এটাও ঠিক উতরে যাব!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement