ছবি: সংগৃহীত।
ঘুম আর জেগে থাকার সমীকরণে উলটপুরাণ ঘটছে বিশ্ব জুড়ে। সূর্য উঠলে চোখ খোলা, আঁধার নামলে চোখ বন্ধ, এই নিয়মে আর চলছে না গোটা দুনিয়া। অনেকেই দিনকে বেছে নিচ্ছেন ঘুমোনোর জন্য। নয়তো মধ্যরাত পেরিয়ে গেলেও ঘুম নামে না কারও কারও চোখে। অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ ঘুমের প্রয়োজন হারিয়েছেন একাংশ। সারা পৃথিবীতে যেন এক নীরব মহামারি শুরু হয়েছে, যা কেবল নতুন প্রজন্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়।
এই প্রবণতা কত দূর পর্যন্ত বিস্তারিত হয়েছে, তার আভাস পাওয়া যাবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে। ইউগভ এবং অ্যামাজ়ন অ্যালেক্সা গত ফেব্রুয়ারি মাসে মুম্বই, দিল্লি, চেন্নাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, পুণে, লখনউ, জয়পুর এবং আহমদাবাদ-সহ ১০টি শহরের ১০০০ জনেরও বেশি মানুষের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেছে। গবেষণা অনুসারে, অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় ঘুম নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। নিয়মিত ঘুমের রুটিন মেনে চলেন না দেশের অধিকাংশ মানুষ।
দেখা গিয়েছে, ৫৩ শতাংশ উত্তরদাতা নিয়মিত ঘুমের রুটিন মেনে চলেন না, ফলে ঘুমের সমস্যায় ভোগেন।। ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা ঘুমের রুটিন মেনে চলেন বলে এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সুফল পেয়েছেন। ৫২ শতাংশ ঘুমের আগে এমন কিছু কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখে্ন, যার ফলে ঘুম আসতে সুবিধা হয়। ৮৬ শতাংশ উত্তরদাতা রোজ রাত ৮টার পর থেকে তাদের ঘুমের রুটিন মেনে চলতে শুরু করেন। ৫৩ শতাংশ উত্তরদাতা রাত সাড়ে ১০টার পরে তাঁদের রুটিনের দিকে নজর দেন।
ঘুমের রুটিনের অর্থ কী?
ঘুমিয়ে পড়ার আগে থেকেই বেশ কিছু ধাপ মেনে চলা উচিত সকলের। যার প্রভাব পড়ে ঘুমের মানের উপর। ঘুমের আগে কী খাচ্ছেন, কী কাজ করছেন, কতটা পরিশ্রম করছেন, কোন বিষয়ে পরিশ্রম করছেন, কী নিয়ে আলোচনা করছেন ইত্যাদি সবই এটির অংশ। আর সেখানেই দেখা গিয়েছে, ঘুমের আগে সবচেয়ে জনপ্রিয় যে কাজ, তা হল ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন।
ছবি: সংগৃহীত।
ডিজিটাল দুনিয়ায় সময় কাটানো- ফোনে ভিডিয়ো দেখা (৬৩ শতাংশ), পরিজন বা বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা (৫৯ শতাংশ), পডকাস্ট, গান বা অডিয়ো-বুক শোনা (৫৮ শতাংশ) এবং সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলিতে একের পর এক অর্থহীন বিষয় দেখতে থাকা (৫৭শতাংশ)। যে পরিবার কেবল দম্পতিদের নিয়ে তৈরি হয়েছে, সেখানে ঘুমের রুটিনে এইগুলিই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তুলনায় অন্য ধরনের পরিবারে এই প্রবণতা কম। উল্লেখ্য, প্রতি দুই উত্তরদাতার মধ্যে এক জন ঘুমের রুটিন তৈরির জন্য ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্যবহার করেন। যেখানে ৩৫-৪৫ বছরের মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। ২৫-৩৪ বছর বয়সিদের বরং কম দেখা যায় এই অভ্যাস। ঘুম পাড়ানোর জন্যেও নাকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বেড়েছে।
যদিও ডিজিটাল মাধ্যমের সাহায্য নিয়ে ঘুমের অভ্যাস বেড়ে গিয়েছে, তবে গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই অভ্যাস ত্যাগ করে ঘুমের আগে স্বাস্থ্যকর কার্যকলাপে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। অর্ধেকেরও বেশি উত্তরদাতা ঘুমের আগে ধ্যান, ডায়েরি লেখা, হালকা যোগব্যায়াম এবং ত্বকচর্চা করার জন্য আগ্রহী।
ছবি: সংগৃহীত।
সন্তান থাক বা না থাক, দম্পতিরা মন, চিন্তা, মূল্যবোধ বৃদ্ধির জন্য ঘুমের রুটিনে পরিবর্তন আনতে চাইছেন। ৩২ শতাংশ তাঁদের রাতের রুটিনে ধ্যান এবং ডায়েরি লেখার অভ্যাস বাড়াতে চাইছেন। ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতা ঘুমনোর আগে আরামদায়ক কোনও পানীয় বা হালকা খাবারের উপর মন দিতে আগ্রহী।
ফোন ব্যবহারের বিকল্প হিসেবে ধাঁধার সমাধান করা, বই পড়া, গান-পডকাস্ট-খবর শোনাকে বেছে নিতে চাইছেন অনেকে। এরই মধ্যে ১১ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, ঘুমের আগে এত কাণ্ড মোটেও ভাল নয়। কিছু করার চেয়ে কিচ্ছুটি না করাই উচিত। তবেই ঘুম ভাল হয় বলে মনে করেন তাঁরা।