ফল কী ভাবে ধোয়া উচিত, তা জেনে নেওয়া দরকার। ছবি: সংগৃহীত।
শরীর ভাল থাকবে ভেবে ফল খাচ্ছেন। এ দিকে, শরীরের ভিতরে বিষক্রিয়ার মতো ঘটনা ঘটছে না তো? ফলের পুষ্টিগুণ দেহে প্রবেশ করার আগেই হয়তো ঢুকে যাচ্ছে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ। আর তাতেই জটিল জটিল রোগের আবির্ভাব। যেমন ধরা যাক, পার্কিনসনস বা অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগের কারণও যে ফল বা সব্জির গায়ে লেগে থাকা কীটনাশক হতে পারে, তা কখনও ভেবে দেখেছেন?
সিন্থেটিক এবং জৈব, দুই ধরনের কীটনাশকেই ক্ষতিকারক প্রভাব পড়তে পারে শরীরে।তীব্র বিষক্রিয়া ঘটলে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা এবং অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে। স্নায়বিক, হরমোনজনিত এবং প্রজনন সংক্রান্ত নানবিধ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া, শরীরের নির্দিষ্ট অঙ্গে ক্যানসার এবং শ্বাসযন্ত্রের রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
ফলে ফল ধুয়ে খাওয়া জরুরি এবং সে ফল কী ভাবে ধোয়া উচিত, তা জেনে নেওয়াও দরকার।
বহু রোগের কারণ হতে পারে না ধোয়া ফল
স্নায়বিক সমস্যা:মানুষের শরীরের স্নায়ুতন্ত্রের কাজকর্মগুলিতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে ফলের গায়ে লেগে থাকা কীটনাশক। এর ফলে হাতে-পায়ে কাঁপুনি ধরা, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে থাকা এবং অন্যান্য স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
হরমোনজনিত সমস্যা: হরমোন নিঃসরণ এবং সেটির ভারসাম্য বজায় রাখার সমগ্র প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে কীটনাশক।
ফল থেকে কীটনাশক এবং অণুজীব দূর করার উপায় কী ছবি: সংগৃহীত।
প্রজনন সংক্রান্ত রোগ: কীটনাশকের প্রভাবে পুরুষ এবং মহিলা, দুইয়েরই জননাঙ্গে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কেবল তা-ই নয়, বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। যদি জন্মের আগে সমস্যা দেখা না-ও দেয়, পরবর্তীকালে সন্তানের জন্মের সময়ে কিছু কিছু সমস্যা দেখা দেয়।
শ্বাসযন্ত্র সংক্রান্ত সমস্যা:না ধোয়া ফল থেকে কীটনাশক দেহের ভিতরে প্রবেশ করে শ্বাসযন্ত্রে অস্বস্তি তৈরি করে। ধীরে ধীরে দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হয় শ্বাসযন্ত্র।
কিডনি এবং লিভারের ক্ষতি: কীটনাশক শরীরে গেলে কিডনি এবং লিভার, এই দুই অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে।
কাদের জন্য কীটনাশকের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর?
অন্তঃসত্ত্বা এবং শিশুদের ক্ষেত্রে কীটনাশকের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক। কারণ, তাঁদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাই কীটনাশকের সঙ্গে লড়াই করার মতো জোর থাকে না তাঁদের।
কী ভাবে কীটনাশকের প্রকোপ কমানো সম্ভব?
বাজার থেকে আনা অথবা নিজে বাগানে ফলানো শাকসব্জি ও ফল, দুই ক্ষেত্রেই সতর্ক হতে হবে। এমন কয়েকটি কৌশল জেনে নিতে হবে, যাতে কীটনাশকের প্রকোপ কমানো সম্ভব হয়। ফল হোক বা শাকসব্জি, দুয়েরই উপকারিতা প্রচুর। সেগুলিকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই অন্য পদ্ধতিতে শরীরে কীটনাশকের প্রবেশে দাঁড়ি টানার চেষ্টা করতে হবে।
আমেরিকার ইন্টারনাল মেডিসিনের চিকিৎসক টিম টিউটান কয়েকটি ধাপে নিয়মটি জানিয়েছেন। চিকিৎসকের এই কৌশল মেনে চলতে পারেন।
ফল থেকে কীটনাশক এবং অণুজীব দূর করার উপায় কী?
প্রথমেই ভাল করে জলে ধুয়ে নিতে হবে। মনে রাখবেন যে, ফলের খোসা খুব শক্ত হয়, সেগুলির ক্ষেত্রে হাতের বদলে পরিষ্কার একটি ব্রাশ ব্যবহার করা ভাল। ব্রাশ দিয়ে ঘষলে একগুঁয়ে ময়লাগুলি বেরিয়ে আসতে পারে। তার পর একটি পাত্রে ফলগুলি রেখে এক কাপ ভিনিগার এবং তিন কাপ জল ঢেলে দিন। ১০ মিনিট সেই ভাবেই থাকুক ফলগুলি। এ বার খানিক বেকিং সোডা মিশিয়ে দিন সেই পাত্রে। আরও কয়েক মিনিট ও ভাবেই রাখা থাকুক। এই সময়েই কীটনাশকগুলিকে নিষ্ক্রিয় করার কাজটি হবে। তার পর ফলগুলিকে পাত্র থেকে বার করে জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। সব শেষে ফ্রিজে রাখতে হবে ফলগুলিকে। কিন্তু এখানেই অনেকে ভুল করে বসেন। পুরোপুরি হাওয়ায় শুকিয়ে না গেলে সেগুলিকে ফ্রিজে রাখবেন না। তাতে আর্দ্রতা কাটে না। আর পচে যেতে পারে ফলগুলি।
এই ভাবেই ধাপে ধাপে ফল এবং সব্জি ধুয়ে নিলে দুশ্চিন্তা থাকে না। ফলের সব পুষ্টিগুণ শরীরে প্রবেশ করতে পারে বিনা বাধায়।