অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার জেরে শরীরে বাড়তে থাকে মেদের পরিমাণ। ছবি- সংগৃহীত
কিছু পরিমাণ মেদ শরীরের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু ব্যক্তিবিশেষে তার পরিমাণ কত, সে সম্পর্কে ধারণা থাকে না অনেকেরই। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ২৮ লক্ষেরও বেশি মানুষ স্থূলতা বা শরীরে অতিরিক্ত ওজনের কারণে মারা যান। শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে থাকলে বেশ কিছু দুরারোগ্য এবং জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ, সকলেই এ বিষয়ে একমত। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার জেরে শরীরে বাড়তে থাকে মেদের পরিমাণ। যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অকালেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে বহু রোগ।
কোন কোন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে?
১) হার্ট সংক্রান্ত জটিলতা
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, কার্ডিয়োভাসকুলার বিভিন্ন রকম সমস্যার সঙ্গে যোগ রয়েছে স্থূলতার। এই অতিরিক্ত মেদ ধমনীর দেওয়ালে জমতে শুরু করলে, রক্তে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। ধমনীতে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়তে থাকে।
২) টাইপ ২ ডায়াবিটিস
কমবয়সে ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার নেপথ্যে সরাসরি যোগ রয়েছে স্থূলতার। দেহের অতিরিক্ত মেদ থেকে ইনসুলিন ক্ষরণের পরিমাণ ব্যাহত হয়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। রক্তে অনিয়ন্ত্রিত শর্করা অন্যান্য বহু রোগের ক্ষেত্রে অনুঘটকের মতো কাজ করে।
৩) শ্বাসকষ্ট
‘আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশন’-এর ‘এয়ারওয়েজ় ক্লিনিক্যাল রিসার্চ সেন্টার নেটওয়ার্ক’ হাঁপানি ও ‘ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়’ বা ‘সিওপিডি’ নিয়ে গবেষণা করে। তাদের গবেষণা সাফ বলছে, স্থূলতার সঙ্গে যোগ রয়েছে হাঁপানির। হাঁপানির বিভিন্ন রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে অন্যতম ওবেসিটি বা স্থূলতা। চিকিৎসাক্ষেত্রে আমেরিকার সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল’-এর পরিসংখ্যান বলছে, হাঁপানি নেই এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে স্থূলতায় আক্রান্ত মানুষ শতকরা ২৬.৮ জন। হাঁপানি রোগীদের মধ্যে এই সংখ্যা শতকরা ৩৮.৮ শতাংশ।
৪) ক্যানসার
স্তন, কোলন, কিডনি এবং অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের সঙ্গে স্থূলত্বের যোগ রয়েছে। ডায়াবিটিস থেকে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হওয়ার মতো লক্ষণ ক্যানসারের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
৫) লিভারের সমস্যা
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার হওয়ার পিছনেও মেদের হাত রয়েছে। দেহে বাড়তে থাকা মেদ না পুড়লে, তা জমতে থাকে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। লিভারে এই মেদ জমলে, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় উৎসেচকের ক্ষরণের পরিমাণ কমে যায়। ফলে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। দীর্ঘ দিন ধরে এমনটা চলতে থাকলে প্রাণহানির ঝুঁকিও বাড়তে পারে।