বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘লিভার সিরোসিস’ ধরতেই অনেকটা দেরি হয়ে যায়। ছবি: সংগৃহীত
প্রতি বছর যকৃতের যে সমস্যায় অনেক মানুষ আক্রান্ত হন, তা ‘লিভার সিরোসিস’ নামে পরিচিত। যকৃতের দীর্ঘ স্থায়ী ক্ষত থেকে এই অসুখের জন্ম নেয়। লিভারের কার্য ক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয় এই অসুখের প্রভাবে। এ ছাড়াও জন্ডিসে ভুগে থাকলে কিংবা অতিরিক্ত মদ্যপান করলে এই রোগ হতে পারে। যাঁদের ডায়াবিটিস বা স্থূলতার সমস্যা আছে, তাঁরাও আগে থেকে সতর্ক না হলে এই রোগ থাবা বসাতে পারে। সময়ে ধরা পড়লে যেকোনও রোগের জটিলতা থেকে দ্রুত মুক্ত পাওয়া সম্ভব। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘লিভার সিরোসিস’ ধরতেই অনেকটা দেরি হয়ে যায়। ফলে সমাধানের পথ থাকে না তখন আর। তবে এই রোগ শরীরে থাবা বসানোর শুরুতেই কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়।
যকৃতের দীর্ঘ স্থায়ী ক্ষত থেকে এই অসুখের জন্ম নেয়। ছবি: সংগৃহীত
‘লিভার সিরোসিস’-এর উপসর্গগুলি কী?
১) জন্ডিস: জন্ডিস হলে ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। লিভার থেকে নিঃসৃত হওয়া পিত্ত বিলিরুবিনের পরিমাণ বেশি হয় গেলে জন্ডিস হয়। লিভারে ক্ষত তৈরি হলেও লিভার শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। তখন এই অসুখ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
২)ওজন হ্রাস: খাওদাওয়া নিয়ন্ত্রণ না করে কিংবা কোনও রকম শরীরচর্চা ছাড়াই ওজন কমে যাচ্ছে? তাহলে অতি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিনা কারণে ওজন কমে যাওয়া শরীরের জন্যএকে বারেই ভাল নয়। এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
৩) পা ও গোড়ালিতে জ্বালা: পা ও গোড়ালিতে মাঝেইমাঝেই জ্বালা ভাব হলে আগে থেকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। শরীরে অ্যালবুমিন প্রোটিনের উৎপাদন কমে গেলে এই রকম সমস্যা হয়। এই প্রোটিন রক্তনালী থেকে অন্যান্য কোষে রক্তের ছড়িয়ে পড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তে এই প্রোটিন তরলের পরিমাণ কমে গেলে তা রক্তনালিকায় জমা হতে শুরু হয়। গোড়ালিতে বা পায়ের পাতায় হালকা জ্বালা অনুভব হলে আগে থেকে সচেতনতহওয়া প্রয়োজন।
৪)পেট ফাঁপা: অনেক দিন ধরে লিভারের কোনও সমস্যা থাকলে তলপেটে তরল জমা হয়ে পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকেই এই পেট ফাঁপার সমস্যায় মাঝেমাঝেই ভুগে থাকেন। সেই সময় পেটও ফুলে থাকে। কয়েক দিন ধরে পর পর এই রকম সমস্যা দেখা দিলে সতর্ক হন।
৫)কালশিটে: শরীরে ঘন ঘন কালশিটে পড়ে কি? তা হলে আগে থেকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। লিভার ভিটামিন কে-র সাহায্যে এক ধরনের প্রোটিন উৎপাদন করে যা রক্তক্ষয় বন্ধ করে যে কোনও ক্ষত তাড়াতাড়ি ঠিক করতে সাহায্য করে। লিভার দূষিত রক্তের কোষগুলিকে বৃদ্ধি পেতে দেয় না। ফলে লিভার যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখনই শরীরে এই ধরণের কালশিটে দেখা দিতে পারে বা খুব সহজেই অনেকটা রক্তক্ষয় হয়ে যেতে পারে। যদিও এই উপসর্গ নানা রোগের কারণেই দেখা যা।। তাই এমন হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।