হবু মায়ের অবসাদ হতে পারে সন্তানের সমস্যার কারণ। — প্রতীকী ছবি।
দীর্ঘ দিনের গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন মা যদি অবসাদে ভোগেন, তবে জন্মের পর সন্তানের মধ্যে মানসিক এবং আচরণগত সমস্যা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। ঘুম এবং খাওয়ার সমস্যা, অতিরিক্ত কান্না, কথা বলায় বিলম্ব এবং আরও নানা ধরনের সমস্যা নিয়ে বড় হয় সন্তান।
মায়ের অবসাদ কী ভাবে প্রভাবিত করতে পারে গর্ভের সন্তানকে?
মানসিক ও আচরণগত বিকাশ: অবসাদে আক্রান্ত মায়েদের সন্তানের মধ্যে উদ্বেগ, অবসাদ, মনঃসংযোগের সমস্যা অর্থাৎ, অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজ়্অর্ডার (এডিএইচডি)-এর উপসর্গ দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
ভাষাগত বিকাশ: অবসাদে আক্রান্ত মায়েদের সন্তানের মধ্যে কথা বলতে শেখার সমস্যা হতে পারে।
শারীরিক স্বাস্থ্য: অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন মা অবসাদে আক্রান্ত থাকলে জন্মের পর সন্তানের নানা স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে— শিশু অতিরিক্ত খর্বাকৃতি হতে পারে, শিশুর মধ্যে ঘন ঘন রোগ-সংক্রমণের মতো সমস্যা দেখা যায়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যার গবেষক মৌসুমি ময়রা বললেন, “অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন প্রথম তিন মাস, অর্থাৎ, ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার-এ মা কোন শক্ পেলে বা ভয়ানক মানসিক চাপ সৃষ্টি হলে গর্ভপাত অবধি ঘটতে পারে। চিনে একটি গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে, অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন প্রথম তিন মাসে মা উদ্বেগের মধ্যে থাকলে, সেই সন্তানদের মধ্যে স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ার মতো জটিল মানসিক রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।”
অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন হতে পারে অবসাদ ছবি: সংগৃহীত।
এর কি কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে?
মৌসুমি বললেন, “দেখা গিয়েছে যে, অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন মা অবসাদে আক্রান্ত থাকলে সেই সন্তানের মস্তিষ্কে কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা যায়। যা পরবর্তী জীবনে সন্তানকে প্রভাবিত করে এবং তার জীবনে শারীরিক বা মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে।”
অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন অবসাদে ভুগলে, মানসিক বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অবসাদের সঠিক চিকিৎসা মা-সন্তান উভয়ের সুস্থ জীবনের জন্য জরুরি।
জীবনে আমরা প্রতিনিয়ত নানা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হই। মনখারাপ, উদ্বেগ জীবনের যে কোনও সময়ে, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীনও আসতে পারে। কিন্তু, একটি নতুন জীবনের আগামীর দায় যখন আপনার উপরেই বর্তায়, তখন সচেতন না হয়ে উপায় থাকে না।