দুই জেলার বহু চিকিৎসক একমত
Cough and cold

ঠান্ডায় জ্বর-সর্দির প্রকোপে দায়ী দূষণও

তাতেই জাঁকিয়ে বসেছে জ্বর-সর্দি। হুগলি এবং হাওড়া জেলার চিকিৎসকদের একাংশ মানছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এই সময়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চুঁচুড়া-উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:০৪
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

গায়ে অল্পস্বল্প জ্বর। সঙ্গে খুকখুকে কাশি, ফ্যাচফ্যাচে সর্দি, মাথা ঝিমঝিম! কারও আবার সঙ্গে ডায়রিয়া। চলতি শীতে এমন ব্যামো ঘরে ঘরে। ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে, ডাক্তারের চেম্বারে। এ জন্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দোষী ঠাওড়াচ্ছেন আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা এবং পরিবেশ দূষণকে।

Advertisement

অন্যান্য বারের মতো কৃপণ নয়, শীত এ বার উদার। তবে তার প্রকৃতি যেন কেমনতরো! কখনও তাপমাত্রার পারদের ঘনঘন ওঠানামা, কখনও অকালবৃষ্টির স্যাঁতসেঁতে ভাব বিপদ ডেকে আনেছে। সঙ্গে কুয়াশার বাড়বাড়ন্ত। সব মিলিয়ে ভাইরাসের কামড় বেড়েছে। তাতেই জাঁকিয়ে বসেছে জ্বর-সর্দি। হুগলি এবং হাওড়া জেলার চিকিৎসকদের একাংশ মানছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এই সময়ে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

জ্বর-সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্ট নিয়ে আরামবাগ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে জনা পঁয়তাল্লিশ, মেডিসিন বিভাগে শ’দুয়েক রোগী ভর্তি থাকছেন বলে জানান অধ্যক্ষ রমাপ্রসাদ রায়। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘এ বার তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। কখনও ১০ ডিগ্রির নীচে নেমে যাচ্ছে। বিশেষত বয়স্কদের অসুস্থতা বেড়েছে। প্রচণ্ড ঠান্ডার মোকাবিলায় শিশু-সহ সব ওয়ার্ডে রুম হিটার বা রুম ওয়ার্মারের ব্যবস্থা হয়েছে।’’

Advertisement

একই উপসর্গ নিয়ে স্থানীয় নার্সিংহোমগুলিতে গড়ে ৩০-৪০ জন ভর্তি থাকছেন। আরামবাগের বিশিষ্ট চিকিৎসক অতনু কুন্ডুর বক্তব্য, শীতকালীন অসুস্থতা অন্য বারের তুলনায় এ বার অনেক বেশি। অসুস্থতা ১০ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত থেকে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ তাপমাত্রার ওঠানামা, বৃষ্টি কম হওয়া। সর্বোপরি বায়ুদূষণ বেড়ে যাওয়া। বায়ুদূষণ এবং প্রতিকূল আবহওয়া বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমণকে প্রভাবিত করে। বিশেষত সর্দি-কাশি, অ্যালার্জি বাড়িয়ে দেয়। এ জন্য জমিতে নাড়া পোড়ানো, আবর্জনায় আগুন লাগানোকেও তিনি দুষছেন।

একই বক্তব্য চিকিৎসক সংগঠন আইএমএ-র শ্রীরামপুর শাখার সভাপতি প্রদীপকুমার দাসের। তাঁর সংযোজন, সকালে কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে, ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ বাড়ছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় প্রভাব পড়ছে। তাঁর অভিমত, পরিবেশ দূষণ নিয়ে অসচেতনতা না-ঘুচলে ভবিষ্যতে বিপত্তি বাড়বে।

বর্ষীয়ান চিকিৎসক শশাঙ্কভূষণ গোস্বামীর মতে, এ বার ‘ভিজে ঠান্ডা’ চলছে। অর্থাৎ, বাতাসে জলীয় ভাব বা ধোঁয়াশা (স্মগ) বেশি। কল-কারখানা, গাড়ির ধোঁয়া এর সঙ্গে মিশে বাতাস ভারী করছে। সেই দূষিত বায়ু নিঃশ্বাসের সঙ্গে মানুষের শরীরে ঢুকে শ্বসনতন্ত্রের (রেসপিরেটরি) কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। নাক থেকে জল পড়ে, জ্বর-কাশি এমনকি নিউমোনিয়াও হতে পারে। তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণে অনেকটাই তারতম্য ঘটায় শীতে পরিচিত ‘শুষ্ক ঠান্ডা’ হারিয়ে যেতে বসেছে। এ জন্য তিনি ক্রমাগত দূষণকেই দুষছেন।

মানকুণ্ডুর বাসিন্দা মৌমিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেশ কয়েক দিন নাক থেকে জল ঝরেছে। চিকিৎসকের কাছে যেতে বাধ্য হয়েছি।’’

হাওড়ার একাধিক চিকিৎসক জানান, ভাইরাসঘটিত কারণেই অসুখ-বিসুখ বাড়ছে। শিশুদের জ্বর-সর্দির পাশাপাশি বমি-পায়খানা হতে পারে। বাগনানের বিশিষ্ট শিশু চিকিৎসক অনুপ মঙ্গল বলেন, ‘‘আমার কাছে এই ধরনের সংক্রমণ নিয়ে বহু শিশু আসছে।’’ ওষুধের পাশাপাশি অভিভাবকদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘শিশুদের মাথা ও হাত ঢেকে রাখতে হবে, যাতে ঠান্ডা না লাগে। খাবার ও জল গরম করে খাওয়াতে হবে। গরম জলে স্নান করাতে হবে। বয়স্ক কারও জ্বর-সর্দি হলে তাঁকে মাস্ক পরতে হবে, যাতে বাড়ির শিশু সংক্রমিত না হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement