প্রতীকী ছবি। ছবি: সংগৃহিত
ডায়াবেটিস হলে মিষ্টি তো বটেই, ভাত–আলুও চলে যায় খরচের খাতায়৷ ফ্যাটও তেমন চলে না। হাজির হয় ‘সুপার ফুড’৷ করোলা–লাউয়ের রস, মেথি ভেজানো জল, কাঁচা হলুদ সহ রাজ্যের শাক–সবজি৷ ফ্রিজে সরবত, কোলড্রিঙ্কের জায়গা নেয় আমলা–অ্যালোভেরার রস৷ মাছ–মাংসের হালও তথৈবচ৷ রেড মিটের প্রশ্ন নেই৷ একটা ডিম খেতে হলেও হাজার প্রশ্ন৷ তৈলাক্ত মাছে হাই ক্যালোরি, তাই সেও প্রায় ব্রাত্য৷
মানুষ তাহলে খাবে কী? ডায়াবেটিক ডায়েট? কিন্তু বিজ্ঞানীরা যে বলছেন ডায়াবেটিক ডায়েট বলে কিছু হয় না
ডায়াবেটিক ডায়েট বলে কিছু হয় না
না, হয় না৷ ডায়াবেটিস হলেও বিজ্ঞানীরা সাধারণ সুষম খাবার খেতে বলেন, যা এমনিই আমাদের খাওয়ার কথা, যাতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট আছে মাপমতো, যে খাবারে নিষিদ্ধ কিছুই নেই৷
‘‘স্বাভাবিক অবস্থায় যেমন ঘন ঘন অনিয়ম করলেও খুব ক্ষতি নেই, কিন্তু এ ক্ষেত্রে ততটা করা যায় না,’’ জানালেন হরমোন বিশেষজ্ঞ সতীনাথ মুখোপাধ্যায়৷ ‘‘এমনকী, আপনি যদি রোজ আলু খেতে চান, তাতেও আপত্তি নেই৷’’
প্রতীকী ছবি।
আলু খেতে পারেন
‘চাল–গমের মতো আলুও স্টার্চ৷ তা হলে ভাত–রুটি যদি ব্রাত্য না হয়, আলু হবে কেন?’ প্রশ্ন তুললেন সতীনাথবাবু৷ ‘‘বিশেষ করে যেখানে ১০০ গ্রাম চাল–গমে আছে ৩৪০ ক্যালোরি আর আলুতে ১০০ ক্যালোরি। তা ছাড়া আলুতে আছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমিয়ে ডায়াবেটিসের উপকার করে৷ তবে আলুর গ্লাইসিমিক ইনডেক্স বেশি৷ অর্থাৎ রক্তে চট করে সুগার বাড়িয়ে দেয়৷ কিন্তু খোসাসমেত খেলে সঙ্গে অন্য শাক–সব্জি মিশিয়ে নিলে ফাইবারের দৌলতে পুরো খাবারের জিআই কমে যায়৷ তখন তা নিশ্চিন্তে খাওয়া যায়৷’’
‘‘তবে আলু ভাজা নয়৷ খেতে হবে সেদ্ধ করে বা তরকারিতে দিয়ে৷ আবার স্রেফ আলু–ভাতে না খেয়ে আলু–উচ্ছে, আলু–পটল বা আলু–বেগুন ভাতে খেলে যেমন পুষ্টি বেশি হবে, চট করে সুগারও বাড়বে না৷ আর কোনও দিন যদি আলু সেদ্ধ বা আলুর তরকারি খেতে চান, সে দিন ভাত–রুটি একটু কম খেলেই হবে,’’ বললেন পুষ্টিবিদ প্রিয়াঙ্কা মিশ্র৷
খান ফাইবারসমৃদ্ধ সুষম খাবার
অনেকে ভাবেন, ডায়াবেটিস হলে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট কমিয়ে খেতে হয় প্রচুর প্রোটিন, ব্যাপারটা তা নয়৷ মোট ক্যালোরির ৫০ শতাংশের বেশি কার্ব থেকে না এলেই হল৷ এবং তা যেন ফাইবারসমৃদ্ধ হয়৷ তাই ময়দার বদলে হোল-গ্রেন আটা, সাদা চালের বদলে ব্রাউন বা ওয়াইল্ড রাইস, সাদা পাউরুটির বদলে ব্রাউন ব্রেড, ফলের রসের বদলে গোটা ফল খেতে বলা হয়৷ সব্জি, ডাল খেতে হয় খোসাসমেত৷ সব্জি ও ফল দিনে ১০০ গ্রামের মতো খাওয়া দরকার৷ আম–কলাও মাঝেমধ্যে দু–এক টুকরো খাওয়া যায়৷ মিষ্টি বা মদও ন’মাসে ছ’মাসে খেতে পারেন৷ তবে ভরাপেটে, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে৷
প্রতীকী ছবি।
প্রোটিন কতটা
কিডনি ঠিক থাকলে প্রতি কেজি ওজনের জন্য এক গ্রামের হিসেবে প্রোটিন খান৷ গোটা ডিম খেতে পারেন রোজ৷ মাছ খান দিনে ১০০ গ্রামের মতো৷ চিকেন ব্রেস্ট খেতে পারেন৷ রেড মিটের কম চর্বিওলা অংশ মাসে দু’মাসে এক–আধবার খেতে পারেন৷
ফ্যাটের হিসাব
‘‘ফ্যাট কম খেলেও ভাল ফ্যাটে যেন কার্পন্য না হয়৷ অ্যামন্ড, আখরোট, তিসি, সূর্যমুখীর ও চালকুমড়োর বীজ, অ্যাভোক্যাডো, অলিভ অয়েল অল্প করে খান৷ ফুল ফ্যাট দুধ খান৷ সামুদ্রিক মাছ খান সপ্তাহে দু–তিন দিন৷ তেলের মধ্যে সর্ষে, সূর্যমুখি, বাদাম, অলিভ, রাইসব্রান, সবই ভাল৷ একেক রান্নায় একেকটা ব্যবহার করুন৷ তবে সারা দিনে ৩ চা–চামচের বেশি যেন না হয়৷ ট্র্রান্স ফ্যাট, অর্থাৎ বনস্পতি, মার্জেরিন, ভাজা ও প্রসেস্ড খাবার বাদ৷ স্যাচুরেটেড ফ্যাটে ভরপুর ঘি–মাখনও যত কম হয় তত ভাল,’’ জানালেন পুষ্টিবিদ বিজয়া অগ্রবাল৷
প্রতীকী ছবি।
সুপার ফুডের ভূমিকা
‘‘সুপার ফুড তথা আমলকি, রসুন, পালং, মেথি, টমেটো, ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার, অ্যামন্ড, করোলা, হলুদ খেতেই পারেন৷ তবে নিয়ম মেনে৷ যেমন মেথি ভেজানো জল নয়, খান মেথির গুড়ো৷ লাউ–করোলার রস না খেয়ে রান্না করে খান৷ প্যাকেটের আমলকি বা আমলকির রসের বদলে কাঁচা বা সেদ্ধ আমলকি খান৷ কাঁচা হলুদ খেতে পারেন৷ রান্নাতে দিলেও ভাল, যদি তা ঘরে বাটা হয়৷ রসুনও কাঁচা বা রান্নায় দিয়ে খান৷ তবে এর কোনওটাই কিন্তু ওষুধের বিকল্প নয়,’’ জানালেন সতীনাথবাবু৷