লিভার সাধারণত পাঁচ থেকে ছ’শতাংশ চর্বি শোষণ করতে পারে, এর চেয়ে বেশি চর্বি জমা হলে তা বিপজ্জনক। ছবি: শাটারস্টক
স্বাভাবিকের তুলনায় ওজন বেড়ে গেলে যে সমস্যাগুলি তৈরি হয়, ফ্যাটি লিভার তার মধ্যে অন্যতম। খাবার থেকে পাওয়া ফ্যাট লিভারে জমা হতে হতে এই সমস্যা আরও বড় আকার নেয়। তাই ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হলে খাওয়াদাওয়ায় রাশ টানাই একমাত্র মুক্তির পথ।
লিভার সাধারণত পাঁচ থেকে ছ’শতাংশ চর্বি শোষণ করতে পারে। এর চেয়ে বেশি চর্বি জমা হলে তা বিপজ্জনক। সময় মতো চিকিৎসা না করালে এই অসুখের হাত ধরে ‘সিরোসিস অব লিভার’-ও হতে পারে। ওবেসিটি, ডায়াবিটিস, কোলেস্টেরল, থাইরয়েডের মতো হরমোনজনিত নানা অসুখেও ফ্যাটি লিভারের প্রবণতা বাড়ে। ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হলে তেমন কোনও ওষুধ নেই, যা খেলেই এই রোগ সেরে যাবে। খাওয়াদাওয়ায় ও জীবনশৈলিতে পরিবর্তন আনাই এই রোগের দাওয়াই। এই রোগের বিভিন্ন পর্যায় থাকে। গ্রেড ১, গ্রেড ২ এবং গ্রেড ৩। গ্রেড ২ বা তার বেশি মারাত্মক পর্যায় এই রোগ ছড়িয়ে পড়লে ব্যক্তিবিশেষে পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে ডায়েট চার্ট বানানো ছাড়া উপায় নেই। তবে জীবনশৈলি ও ডায়েটে বিশেষ কিছু পরিবর্তন এনেই গ্রেড ১ ফ্যাটি লিভার রোগ নিরমায় করা সম্ভব।
এর জন্য কী কী করতে হবে?
১) দিনে অন্তত ৮ ঘণ্টা ঘুমোতে হবে। ঘুম এ ক্ষেত্রে ভীষণ জরুরি।
২) নিয়মিত ৩ লিটার করে জল খেতে হবে।
৩) সময়ের খুব বেশি ব্যবধান রেখে খেলে চলবে না। ওজন বেড়ে যাচ্ছে বলে দীর্ঘ ক্ষণ খালি পেটে থাকলেন, এই ভুল করবেন না। বার বার করে খান, তবে পরিমাণটা যেন বেশি না হয়, সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
জীবনশৈলি ও ডায়েটে বিশেষ কিছু পরিবর্তন এনেই গ্রেড ১ ফ্যাটি লিভার রোগ নিরমায় করা সম্ভব। ছবি: শাটারস্টক।
৪) ভাজাভুজি, ঘি, মাখন, চিজ, রেড মিট— এইগুলি ডায়েট থেকে বাদ দিতে হবে। চিনি, ময়দার তৈরি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। মদ্যপান নৈব নৈব চ।
৫) এর সঙ্গে চাই শরীরচর্চা। দিনে এক ঘণ্টা সময় বার করে শরীরচর্চা করুন। শরীরচর্চায় অনীহা থাকলে হাঁটাহাটি করলেও উপকার পাবেন।
ফ্যাটি লিভার হলে সব কিছু খাওয়া যায় না। ফ্যাটি লিভার থেকে সুরক্ষিত থাকতে কোন খাবারগুলি রোজের তালিকায় রাখবেন?
যাঁরা অফিসে যান তাঁদের জন্য বার বার খাওয়া সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায়। কী খাবেন সেই ভেবেই হয়রান হতে হয়। এ ক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে মরসুমি ফল অবশ্যই রাখুন। খিদে পেলেই একটা গোটা ফল খেয়ে নিন। তবে রাস্তায় নেমে ফলের রসটা খাবেন না। এতে লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। এ ছাড়া খিদে পেলে মুড়ি, চিঁড়ে, পপকর্ন, ড্রাই ফ্রুটস খেতে পারেন। রোজের খাবারে কম তেল-মশলাযুক্ত খাবার খান। রাস্তার ধারের দোকানের ও রেস্তরাঁর খাবার কয়েক দিন এড়িয়ে চলুন।
জীবনশৈলি ও ডায়েটে এই পরিবর্তনগুলি আনলেই তিন মাসের মধ্যেই গ্রেড ১ ফ্যাটি লিভার থেকে সেরে ওঠা সম্ভব।