মাত্র ১৯ বছর বয়সে ডার্মাটোমায়োসাইটিস-এ আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অভিনেত্রী সুহানি ভাটনগর। ছবি: সংগৃহীত।
মাত্র ১৯ বছর বয়সে ডার্মাটোমায়োসাইটিসে আক্রান্ত হয়ে শনিবার প্রাণ হারিয়েছেন ‘দঙ্গল’ খ্যাত অভিনেত্রী সুহানি ভাটনগর। গত ১১ দিন ধরে দিল্লির এম্স-এ চিকিৎসা চলছিল তাঁর। সুহানির বাবা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, মাস দুয়েক আগে হঠাৎ সুহানির একটি হাত ফুলতে শুরু করেছিল। হাত ফুলে যাওয়া যে জটিল রোগের উপসর্গ হতে পারে, সে সম্পর্কে কোনও ধারণাই ছিল না তাঁদের। তাই প্রথম দিকে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেননি তাঁরা। তবে কয়েক দিন পর থেকে গোটা শরীর ফুলতে শুরু করলে তখন সুহানিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু রোগের কূলকিনারা করা যায়নি। এর পর সুহানির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাঁকে দিল্লি এম্স-এ ভর্তি করানো হয়। সেখানেই প্রথম জানা যায়, ডার্মাটোমায়োসাইটিসের মতো জটিল এবং একই সঙ্গে বিরল একটি রোগে আক্রান্ত হয়েছেন সুহানি।
চিকিৎসক পুরুষোত্তম চক্রবর্তী আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “ডার্মাটোমায়োসাইটিস অত্যন্ত বিরল একটি প্রদাহজনিত অটোইমিউন রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের পেশিগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে। ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সি যে কেউ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে অল্পবয়সিদের মধ্যে এই ডার্মাটোমায়োসাইটিসে আক্রান্তের সংখ্যা নিতান্তই কম। ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সিরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই তা ধরা পড়ে বয়ঃসন্ধিতে।”
কেন হয় এই রোগ?
চিকিৎসকেরা বলছেন, ডার্মাটোমায়োসাইটিস ঠিক কী কারণে হয়, তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীরে নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। আবার, রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও কিন্তু বিরল এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা শোনা যায়। এক লক্ষ মানুষের খুব বেশি হলে ২ থেকে ৩ জন এই রোগে আক্রান্ত হন। তবে কাদের শরীরে কখন কী ভাবে এই রোগ হানা দেবে, তা আগে থেকে বলা অসম্ভব।
ডার্মাটোমায়োসাইটিসে আক্রান্ত হলে কী ধরনের উপসর্গ দেখা যায়?
‘দঙ্গল’এর অভিনেত্রী সুহানির ভাটনগরের গোটা শরীর ফুলতে শুরু করেছিল মাস দুয়েক ধরে। ডার্মাটোমায়োসাইটিসে আক্রান্ত হলে কি এমনটাই হয়? পুরুষোত্তমের কথায়, “এই রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের পেশিতে ব্যথা হয়। দেহের বিভিন্ন অস্থিসন্ধি লাল হয়ে ফুলেও যেতে পারে। ব্যথার তীব্রতা বাড়লে বিছানা থেকে মাটিতে পা ফেলার মতো ক্ষমতা থাকে না। কারও কারও গায়ে র্যাশ বেরোতে পারে। ঘাড়, হাতের উপরের পেশি, কোমর, ঊরুর পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। খাবার গিলতে সমস্যা হয়। পরিস্থিতি গুরুতর হলে তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সঠিক চিকিৎসার অভাবে পরবর্তী কালে এই অটো ইমিউন রোগ কিন্তু ফুসফুসও সংক্রামিত করতে পারে। ডার্মাটোমায়োসাইটিস-এ আক্রান্ত হলে কারও আবার চোখের চারপাশে, গালে, বুকে বা পিঠে লালচে বা বেগনি রঙের র্যাশও বেরোতে দেখা যায়। পরিস্থিতি জটিল হলে এই সংক্রমণ হার্ট এবং ফুসফুসের পেশি পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।” সঠিক সময়ে ডার্মাটোমায়োসাইটিস-এর চিকিৎসা না হলে যে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে, সেই উদাহরণ তো রয়েছেই।