মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে সকলকেই। ছবি- সংগৃহীত
এ দেশে মানসিক রোগের শিকার প্রায় ১৫ কোটি মানুষ। প্রতি ঘণ্টায় আত্মঘাতী হচ্ছেন অনেকে। কোভিড অতিমারির আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, রোগের তালিকায় দ্রুত প্রথমে উঠে আসতে চলেছে মানসিক অবসাদ। আর এই পরিস্থিতির অনুঘটক হয়ে দাঁড়িয়েছে কোভিড-১৯। মনোরোগ চিকিৎসকেরা বলছেন, কোভিডের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা হতে চলেছে ভয়াবহ।
কোভিডের জেরে শ্বাসযন্ত্রের যত না ক্ষতি হচ্ছে, তার থেকে বেশি ক্ষতি হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্যের। এমনটাই দাবি করছে ল্যানসেট পত্রিকার করা একটি সমীক্ষা। প্রায় ১০ লক্ষ ২৫ হাজার রোগীর রিপোর্ট দেখে এই মত প্রকাশ করেছে ল্যানসেট। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কোভিড থেকে সেড়ে ওঠার ছ’মাসের মধ্যেই মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। অধিকাংশ রোগীই মানসিক অবসাদে ভুগছেন, যার প্রভাব রোগীর উপর বছর দুয়েকের বেশিও থাকতে পারে বলে আশঙ্কা গবেষকদের।
মস্তিষ্কের কোষ ও স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলছে কোভিড ১৯ ভাইরাস। ছবি- সংগৃহীত
অনেকেই ডিমেনসিয়া-সহ স্নায়ুর রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সংক্রমণের আতঙ্ক, পারিবারিক অশান্তি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণে একাকিত্ব, কর্মহীনতা, আর্থিক অনিশ্চয়তা আরও বেশি গ্রাস করতে শুরু করেছে। এই সমস্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের।
সাম্প্রতিক গবেষণায় ধরা পড়েছে, মস্তিষ্কের কোষ ও স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলছে কোভিড ১৯ ভাইরাস। ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’-র শিক্ষক সুজিত সরখেল বলছেন, “বয়স নির্বিশেষে ডেলিরিয়ামের (ভ্রান্ত ধারণা, আতঙ্ক, ভুল বকা) মতো মানসিক প্রভাব দেখা দিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত তা সেরে যাচ্ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি ফল এখনও স্পষ্ট নয়। স্মৃতিশক্তি বা আরও বড় কোনও ক্ষেত্রে কোভিডের প্রভাব পড়ছে কি না, তা জানতে ফলো আপ চিকিৎসায় নির্দিষ্ট প্রশ্ন করার ব্যাপারে নির্দেশিকা তৈরির প্রস্তুতি চলছে।”
এই পরিস্থিতি অনুধাবন করার পর মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মত, অতিমারিতে তৈরি হওয়া এই সমস্যা যে শুধু সাময়িক ভাবে ভোগাচ্ছে তা-ই নয়, মনের অসুখের শিকার একটি গোটা প্রজন্ম। সাধারণ মানুষ হোন বা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজের প্রতিষ্ঠিতরা— মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে সকলকেই। এখনও হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমান প্রজন্ম তো বটেই, অতিমারিতে তৈরি হওয়া এই সমস্যার প্রভাব পড়তে পারে পরের প্রজন্মের উপরও।