অনিয়মিত ঋতুস্রাব বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।
প্রতি মাসে নির্দিষ্ট দিনে সব মেয়ের ঋতুস্রাব শুরু হয় না। কয়েক দিন এগিয়ে বা পিছিয়ে যায়। এ লক্ষণ যে খুব চিন্তার তেমনও নয়। দু’টি ঋতুচক্রের মাঝে ২৮ থেকে ৩৫ দিনের ব্যবধান থাকা খুবই স্বাভাবিক। তবে এই ব্যবধান যদি অনেক দিনের হয় তখন সত্যিই চিন্তা করতে হয়। অনিয়মিত ঋতুস্রাব বিভিন্ন কারণে হতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, গর্ভধারণ বা রজোনিবৃত্তির সময় না হলেও অনিয়মিত ঋতুস্রাব হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যাকে ‘অ্যামেনোরিয়া’ বলা হয়। এই সমস্যা কিন্তু নানা কারণে হতে পারে।
পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব, মানসিক-শারীরিক চাপ কিংবা অতিরিক্ত শক্তিক্ষয় হলেও ঋতুচক্র ব্যাহত হতে পারে। চিকিৎসকেরা বলছেন, মহিলা খেলোয়াড়দের মধ্যে ‘অ্যামেনোরিয়া’ খুবই সাধারণ বিষয়। শরীরচর্চার যে কোনও মাধ্যমই ঋতুচক্রের উপর প্রভাব ফেলে। তবে শুধু শরীরচর্চা নয়, ঋতুচক্রের হেরফের কিন্তু খাবার এবং কাজের গতিপ্রকৃতির উপরেও অনেকটা নির্ভর করে। ‘এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজ়ম’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, শরীরচর্চা, ক্যালোরি এবং ঋতুচক্র— পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। অতিরিক্ত শরীরচর্চা করে ক্যালোরি পুড়িয়ে ফেললে এবং পর্যাপ্ত খাবার না খেলে শক্তির ঘাটতি থাকে। তার উপর শরীরে যদি অতিরিক্ত ফ্যাট না থাকে, তা হলে আরও বিপদ। ক্যালোরির অভাব হলে শরীরে জমা ফ্যাটই রূপান্তরিত হয় শক্তিতে। এ ক্ষেত্রে সেটিও স্বাভাবিক ভাবে হয় না।
অতিরিক্ত শরীরচর্চা ঋতুচক্রের উপর কেমন প্রভাব ফেলে?
ছবি: সংগৃহীত।
১) অতিরিক্ত শরীরচর্চা করলে শরীরে ফ্যাট জমার প্রবণতা কমে। যার প্রভাবে হরমোনের স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ বিঘ্নিত হয়। ঋতুচক্রে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই এই হরমোনের পরিমাণ কম-বেশি হলে স্বাভাবিক ঋতুচক্রের দিন অদলবদল হতেই পারে।
২) ক্ষমতার বাইরে গিয়ে শারীরিক কসরত করলে অতিরিক্ত শক্তি ক্ষয় হয়। যা হরমোনের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। হরমোনের হেরফেরে স্বাভাবিক ঋতুচক্র ব্যাহত হয়।
৩) অতিরিক্ত শরীরচর্চা করলে শরীরের উপর চাপ পড়ে। যার ফলে কর্টিজ়ল এবং অ্যাড্রেন্যালিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। এই দু’টি হরমোনের প্রভাবে ইস্ট্রোজেনের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়।
এই সমস্যার নিরাময় সম্ভব?
মানসিক চাপ, পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব না কি অতিরিক্ত শরীরচর্চা— কী কারণে এই সমস্যা হচ্ছে সেই কারণ খুঁজে বার করা প্রয়োজন। তবেই অনিয়মিত ঋতুস্রাব বা ‘অ্যামেনোরিয়া’-র নিরাময় সম্ভব। আবার, বয়সজনিত কারণেও এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। বয়ঃসন্ধিতে এবং রজোনিবৃত্তির সময়ে ‘অ্যামেনোরিয়া’-র সমস্যা বেশি দেখা যায়।