সর্দি-কাশির ওষুধ বানিয়ে নিন বাড়িতেই। ছবি: ফ্রিপিক।
আবহাওয়ার ভোলবদল হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাপমাত্রা কখনও বাড়ছে, আবার কখনও ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হলেই তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে। এমন ভেজা, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশেই ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়ার দাপট বাড়ে। যে কারণেই মরসুম বদলের সময়েই সবচেয়ে বেশি জ্বর, সর্দি-কাশিতে ভোগান্তি বাড়ে। আজ সর্দি-কাশিতে নাজেহাল, তো কাল ভাইরাল জ্বরে কাবু। এখন তো আবার বিভিন্ন সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাবও হয়েছে। সাধারণ সর্দি-কাশির ভাইরাস অ্যাডেনোভাইরাস তো ছিলই, সঙ্গে জুটেছে ইনফ্লুয়েঞ্জা, রাইনোভাইরাস। জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্টের লক্ষণও দেখা দিচ্ছে অনেকের। সেই সঙ্গে শুকনো কাশি যা সারছেই না। কাশি সারাতে এখন আর কাফ সিরাপের উপর ভরসা করা যায় না। বেশ কিছু ব্র্যান্ডের কাফ সিরাপ তো নিষিদ্ধই হয়ে গিয়েছে। তা হলে উপায়? বাড়িতেই বানিয়ে নিন ওষুধ।
সর্দি-কাশি সারাতে ভেষজ উপাদানেই ভরসা রাখুন
১) এক কাপ জলে দু’চামচ মধু, এক চামচ পাতিলেবুর রস ও আধ চা চামচ দারচিনি গুঁড়ো ফুটিয়ে সিরাপ তৈরি করে নিন। দিনে দু’বার এই সিরাপ খেতে পারেন।
২) নাক বন্ধ, নাক দিয়ে অনবরত জল পড়া, শুকনো কাশি হতে থাকলে লবঙ্গ, আদা, গোলমরিচ, তেজপাতা ফুটিয়ে নিয়ে চায়ের মতো পান করুন। এতেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।
৩) রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে হলুদ মেশানো গরম দুধ খেলে সর্দি-কাশি থেকে রেহাই পাবেন তাড়াতাড়ি।
৪) শুকনো কাশি সারাতে বাসক পাতার রস খুব উপকারী। তবে এর সঙ্গে আরও কিছু উপকরণ মেশাতে হবে। ৫ থেকে ৬টি বাসক পাতা ভাল করে ধুয়ে বেটে রস করে নিন। এ বার একটি পাত্রে সেই রস নিয়ে এর সঙ্গে মেশান ৩ চা চামচ আদার রস, ১ চা চামচ মধু।
৫) জলে আদা, তালমিছরি, তুলসি পাতা, বাসক পাতা, যষ্টিমধু, লবঙ্গ একসঙ্গে ভাল করে ফুটিয়ে রস তৈরি করতে পারেন। দিনে দু’-তিন বার এই মিশ্রণ পান করলে কাশি সেরে যাবে অল্প দিনেই।
এইসব প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়েই তৈরি হয়ে যাবে কাশির ওষুধ। কাফ সিরাপের আর দরকারই পড়বে না।
আরও কী কী করণীয়
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী জানাচ্ছেন, “বৃষ্টি, জল জমার কারণে তো আর অফিস বন্ধ থাকবে না। তাই রোজই বেরোতে হচ্ছে যাঁদের, তাঁদের একটু সতর্ক থাকতেই হবে। রোজের কিছু কিছু ভুলের কারণেই সর্দি-কাশি সহজে ছাড়তে চায় না”। চিকিৎসকের মতে, প্রথমত চেষ্টা করতে হবে ঠান্ডা-গরম দুইয়ের হাত থেকেই বাঁচার। যদি বাইরে বেরিয়ে খুব ঘেমে যান, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা ঘরে ঢুকবেন না। ঢকঢক করে ফ্রিজের ঠান্ডা জলও গলায় ঢালবেন না। কিছুক্ষণ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় শরীরকে মানিয়ে নিতে দিন। ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পরেই বাতানুকূল ঘরে ঢুকুন।
দিনভর কাজের শেষে বাড়ি ফিরে স্নান করাটাও কিন্তু কাজের কথা নয়। অনেকেই ঘেমেনেয়ে বাড়ি ফিরেই গায়ে ঠান্ডা জল ঢালেন। যদি স্নান করতেই হয়, তা হলে উষ্ণ গরম জলে করুন। এই মরসুমে উষ্ণ গরম জলে হাত-মুখ ধোয়াই ভাল। বাড়ি ফিরে হাত স্যানিটাইজ় করতে হবে আগে। যদি সর্দি-কাশি হয়ই, তা হলে বাড়িতে থাকুন।বিশ্রাম নিন। হাঁচি-কাশির সময়ে মুখ-নাক ঢেকে রাখুন যাতে ভাইরাস না ছড়ায়। মুখে বা নাকে হাত দেওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটা ছাড়তে হবে। বাড়িতে শিশু বা বয়স্করা থাকলে, ক’দিন তাঁদের থেকে একটু দূরে থাকাই ভাল।