গুরমীত চৌধরি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
ফিটনেস নিয়ে বরাবরই সচেতন ছোট পর্দার রাম ওরফে গুরমীত চৌধরি। সিরিয়াল কিংবা ছবির কাজ থাকুক কিংবা নাই থাকুক, ফিটনেসের সঙ্গে কোনও রকম আপস করতে নারাজ ৪০ বছর বয়সি এই অভিনেতা। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে গুরমীত জানিয়েছেন, ‘‘শরীরের ৯৯ শতাংশ ওজন যদি ডায়েটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, তা হলেই আপনি ফিট থাকবেন। ৬ মাস হয়ে গেল আমি আমার ডায়েটে কোনও প্রকার চিনি রাখিনি। এমনকি ফল, ভাত, রুটি কিছুই খাইনি।’’
ভাত, রুটি ছেড়েছেন প্রায় ছ’মাস, তাও কী ভাবে এত ফিট আছেন গুরমীত? অভিনেতা বলেন, ‘‘সকালে উঠে পেট ভাল রাখার জন্য আমি ১ চামচ ঘি খাই। পাচনতন্ত্রের জন্য ডায়েটে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রাখাা ভীষণ জরুরি। আমি সাধারণত কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খাই। কফি খাওয়ার কিছু ক্ষণ পরে এক গ্লাস গ্রিন জ্যুস খেয়ে আমি ওয়ার্কআউট করি। জলখাবারে ৮-১০টি ডিম আর অ্যাভোকাডো খাই। তার ঠিক আড়াই ঘণ্টা পর কোনও রকম মশলা ছাড়া সেদ্ধ চিকেন খাই মাশরুম আর ব্রকোলির সঙ্গে। বিকেলে ভেজানো বাদাম কিংবা বাদামের দুধ খাই। রাতের খাবারে থাকে গ্রিল্ড চিকেন সঙ্গে প্রোটিন শেক। ছ’মাস ধরে আমি এই ডায়েট মেনে চলছি। এই ডায়েট করেই আমি দিনে ১২ ঘণ্টা শুট করি, জিমে যাই, কিকবক্সিং করি। আমার মনে হয় চিনি ছেড়ছি বলেই আমি শরীরে এত শক্তি পাই।’’
গুরমীতের মতোই স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেই আছেন, যাঁরা সচেতন ভাবে চিনি ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ ওজন কমানোর ইচ্ছায়, কেউ আবার ডায়াবিটিসের ভয়ে চিনি খাওয়া ছাড়তে চাইছেন। কর্মব্যস্ত জীবনে খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, ঘুমের ঘাটতি, অত্যধিক মানসিক চাপের কারণে শরীরে বাসা বাঁধে একাধিক রোগব্যাধি। স্থূলতা, ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার আরও একটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণ হল চিনি খাওয়ার অভ্যাস।
পুষ্টিবিদদের মতে, যাঁরা ওজন কমাতে চাইছেন, তাঁরা ১ মাসের জন্য চিনি খাওয়া ছাড়লেই হাতেনাতে ফল পাবেন। চিনিতে থাকে কেবল মাত্র ক্যালোরি, এতে কোনও রকম পুষ্টিগুণ থাকে না। ৬ মাস চিনি ডায়েট থেকে সম্পূর্ণ বাদ দিলে কয়েক মাসেই ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলা যায়। ১ চামচ চিনি খেলে ১৯ ক্যালোরি শরীরে যায়। হঠাৎ করে চিনি খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবলেও কাজটা কিন্তু মোটেও সহজ নয়। মদ, সিগারেট, চায়ের মতো একেবারে চিনি খাওয়া বন্ধ করে দিলে তার প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কের উপর। তাই গোটা প্রক্রিয়াটাই করতে হবে ধাপে ধাপে।
ডায়েট থেকে চিনি বাদ দেওয়ার অর্থ কেবল চা, কফি বা রান্নায় চিনি বন্ধ করা নয়। আরও বিভিন্ন রকম খাবারের সঙ্গে শরীরে চিনি যেতে পারে। মিষ্টি, শরবত, প্যাকেটজাত ফলের রস, প্রক্রিয়াজাত খাবার— সবেতেই লুকিয়ে আছে প্রচুর চিনি। কী ভাবে ছাড়বেন চিনি খাওয়া?
১) চিনি ও ক্রিম ছাড়া চা, কফি খেতে শুরু করুন।
২) বেশ কিছু প্যাকেটজাত খাবার যেমন পাউরুটি, সস্, দই, ফলের রস, গ্রিক ইওগার্ট— সবেতেই চিনি থাকে। তাই এর বদলে হাতে বানানো রুটি, টাটকা ফলের রস, ঘরে পাতা দই খেতে পারেন। যে কোনও প্যাকেটজাত খাবার কেনার আগে উপকরণ দেখে তবেই কিনুন। চিনির বদলে গুড় বা মধু থাকলেও সতর্ক হোন।
৩) কর্ন সিরাপ, ম্যাপেল সিরাপ, মধু, গুঁড়ো দুধ, গুড়, ব্রাউন সুগার— সবেতেই চিনি থাকে। তাই এ সব খাবারও বন্ধ করুন।
৪) প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকলেও সতর্ক হোন। প্রক্রিয়াজাত খাবারেও ভাল মাত্রায় চিনি থাকে। তাই এই সব খাবারও বন্ধ করতে হবে।
৫) চিনির সঙ্গে সঙ্গে অনেকে কার্বোহাইড্রেট, যেমন ভাত বা রুটি খাওয়াও বন্ধ করে দেন। তবে শারীরিক কার্যকলাপ পরিচালনার জন্য কিন্তু কার্বোহাইড্রেট প্রয়োজন। তাই পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া কার্বোহাইড্রেট খাওয়া একেবারে বন্ধ করা উচিত নয়।
প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। ডায়েটে কোনও রকম বদল আনার আনার আগে অবশ্যই চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।