বাজারচলতি ক্লিনার কিংবা স্যানিটাইজ়ার— দু’টিই স্নায়ুর জন্য ক্ষতিকর। ছবি: সংগৃহীত।
সারা সপ্তাহ ব্যস্ত থাকেন। ঘরের কোনও দিকে তাকানোর সময় হয় না। তাই ছুটির দিনে সবচেয়ে বড় কাজ হল ঘর একেবারে ঝকঝকে করে ফেলা। ঘরের মেঝে, জানলা, টেবিলের কাচ, কাঠের আসবাব, টেলিভিশনের স্ক্রিনে জমা ধুলো-ময়লার পরত তুলতে সরাসরি কিংবা জলের সঙ্গে বাজার থেকে কিনে আনা কোনও ক্লিনার বা জীবাণুনাশক মিশিয়ে নেন অনেকেই। তাতে কাজ খানিকটা সহজ হয়। তবে, এই ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করার পরেই অনেকের হাঁচি, কাশি, বুকে অস্বস্তি বেড়ে যায়।
প্রাথমিক ভাবে তা অ্যালার্জিজনিত সমস্যা মনে হলেও গবেষণা বলছে, ঘর পরিষ্কার করার প্রায় সব ক’টি দ্রবণে ‘কোয়াটারনারি অ্যামোনিয়াম’ বা ‘কোয়াট্স’ নামক একটি রাসায়নিক থাকে। যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। শুধু কি তাই? বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই বিষাক্ত রাসায়নিকটি মস্তিষ্কের স্নায়ুর উপরেও খারাপ প্রভাব ফেলে। তবে, শুধু ঘর পরিষ্কার করার ক্লিনার নয়। এই ‘কোয়াট্স’ থাকতে পারে স্যানিটাইজ়ার, বাচ্চাদের জন্য তৈরি বিশেষ ওয়েট ওয়াইপ্স, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার বিভিন্ন প্রসাধনীতেও।
‘কোয়াট্স’ থাকতে পারে কাচ পরিষ্কার করার রাসায়নিকেও। ছবি: সংগৃহীত।
এ প্রসঙ্গে ২০২৩ সালে করা একটি গবেষণা বলছে, এই ধরনের ঘর পরিষ্কার করার সামগ্রীর মধ্যে ‘কোয়াট্স’ নামক একটি রাসায়নিক থাকে, যা অ্যাজ়মা এবং শ্বাসযন্ত্রের জটিল রোগ ‘সিওপিডি’-র সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। ‘নেচার’ জার্নালে প্রকাশিত আরও একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, এই ‘কোয়াট্স’ নামক রাসায়নিকটি মস্তিষ্কের এক ধরনের কোষ ‘অলিডেনড্রসাইট্স’-এর কাছে বিষের মতো। ইনস্টিটিউট ফর গ্লিয়াল সায়েন্সের অধ্যক্ষ এবং গবেষণা প্রধান পল টিজ়ার বলেন, “এই রাসায়নিকটি মানবদেহে স্নায়ুতন্ত্রের উপর সরাসরি কোনও প্রভাব ফেলে কি না সে বিষয়ে আমরা এখনও নিশ্চিত নই। তবে, ‘কোয়াট্স’ ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলি সম্পর্কে অবহিত।”
তবে গবেষণার ফলাফল নিয়ে স্নায়ুর চিকিৎসকেরা সহমত। তাঁরা জানিয়েছেন, ‘কোয়াট্স’ নামক রাসায়নিকের সংস্পর্শে মস্তিষ্কের ওই কোষগুলি এলেই ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে স্নায়ুতন্ত্রের একটি অংশের কাজ ব্যাহত হয়। বাচ্চাদের মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা দিতে পারে এই রাসায়নিকটি।
এই ধরনের রাসায়নিক চিনবেন কী ভাবে?
ঘরের মেঝে, টেবিলের কাচ, শৌচাগার কিংবা আসবাব পরিষ্কার করার সামগ্রীর গায়ে ‘কোয়াট-ফ্রি’ স্ট্যাম্প দেখে তবেই কিনতে হবে। না হলে ভিনিগার, লেবুর রস, বেকিং সোডার মতো প্রাকৃতিক ক্লিনারের উপর ভরসা করতে হবে। তবে, অনলাইনে নানা রকম ক্লিনার কিনতে পাওয়া যায়। কেনার সময়ে দেখে নিতে হবে সেগুলি ১০০ শতাংশ ভেষজ উপাদানে তৈরি কি না।