প্রাতরাশে রোজ খান চেনা পাঁচ ফল। ছবি : সংগৃহীত।
ইংরেজিতে একটি প্রবচন আছে— মর্নিং শোজ় দ্য ডে! অর্থাৎ সকাল কেমন কাটছে, তা দেখলেই বোঝা যাবে বাকি দিনটা কেমন যাবে। এই প্রবচন কতটা সত্যি, তা জানা নেই, তবে সকালে কী খাবার খাচ্ছেন, তার উপর যে গোটা দিনের সুস্থতা অনেকখানিই নির্ভর করে, সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। পুষ্টিবিদেরাও বলেন, সকালের প্রথম খাবারটি পুষ্টিকর হওয়া উচিত। রাতে খাবার পরে পেট উপোসী থাকে দীর্ঘ ক্ষণ। সকালে যদি শরীরকে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেওয়া যায়, তবে দিনভর তার সুফল মেলে।
সুস্থ থাকার জন্য এবং শরীরবৃত্তীয় সব কাজ সুষ্ঠু ভাবে চালানোর জন্য প্রয়োজন ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ এবং কিছু শর্করাও। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই সব কিছুই সকালের খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা উচিত। প্রোটিন এবং শর্করা সাধারণত রান্না করা খাবার থেকেই পাওয়া যায়। ভিটামিন এবং খনিজের জন্য ভরসা করতে হবে ফল এবং শাকসব্জিতে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন নিয়মিত খাদ্যতালিকায় ৭টি ফল অদলবদল করে রাখলে তার সুফল পাওয়া যাবে দিনভর। ক্লান্তিবোধ কম আসবে। গরমেও তরতাজা থাকবে শরীর।
ছবি: ফ্রিপিক।
১। কলা
মাখন-পাউরুটি, ডিম আর কলা। প্রাতরাশের সবচেয়ে চেনা খাবার বললে প্রথম এর কথাই মনে পড়ে। সে স্কুলের স্পোর্টস হোক বা পিকনিক। প্রাতরাশে পাউরুটি আর ডিমের সঙ্গে কলা খাওয়া হচ্ছে বহু যুগ ধরে। নিশ্চয়ই তার যথেষ্ট কারণও আছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন কলা হল প্রাতরাশের আদর্শ ফল। এতে রয়েছে আয়রন, পটাশিয়ামের মতো জরুরি খনিজ এবং ভিটামিন এ, বি৬, সি এবং বি কমপ্লেক্স ভিটামিন যেমন নায়াসিন, থিয়ামিন ও রাইবোফ্লোভিন। কলা মস্তিষ্কের প্রসার এবং স্নায়বিক কাজে সাহায্য করার পাশাপাশি বিপাকের হার ভাল রাখে। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস শরীরকে বিষাক্ত পদার্থ মুক্ত করে কোলাজ়েন তৈরিতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ কোষ ভাল রাখতে এবং দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে সাহায্য করে।
২। পেয়ারা
পেয়ারায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। একটি লেবু, এমনকি, একটি কমলালেবুর দ্বিগুণ ভিটামিন সি থাকে পেয়ারায়। এটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থ্যও ভাল রাখে। এ ছাড়া পেয়ারায় আছে ভিটামিন এ, বি, ই, বি৬ এবং কে। আবার পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফোলেটও শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত পেয়ারা খেলে তা শরীরের কোষের ক্ষতি মেরামত করতে সাহায্য করে। ফলে শরীর থাকে তরতাজা। এ ছাড়া শরীরে বয়সের ছাপও পড়তে দেয় না পেয়ারা।
ছবি: ফ্রিপিক।
৩। আপেল
রোজ আপেল খেলে রোগবালাই দূরে থাকে, এ প্রবচনে বিশ্বাস করেন চিকিৎসকেরাও। তার যথেষ্ট কারণও আছে। আপেল বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং পুষ্টিগুণে ভরা একটি সুন্দর ভারসাম্য রয়েছে। আপেলে আছে ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৩, বি৬, সি এবং ই। এ ছাড়া ফাইবার, পটাশিয়াম এবং নানা ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টসও রয়েছে আপেলে। নিয়মিত আপেল খেলে শরীরের দৈনিক পুষ্টির চাহিদার অনেকখানি পূরণ হয়। এ ছাড়া আপেল বিপাকের হার ভাল রাখতে সাহায্য করে, স্নায়ুতন্ত্রের কাজ সুষ্ঠু ভাবে চালাতে সাহায্য করে। চুল এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখার পাশাপাশি সার্বিক স্বাস্থ্য ভাল রাখে এবং রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে।
৪। বেদানা
রক্তাল্পতার সমস্যায় বেদানা খাওয়ার পরামর্শ দিতেন চিকিৎসকেরা। তার কারণ বেদানায় আছে আয়রন। এটি শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করার পাশাপাশি রক্তে অক্সিজেন পৌঁছে দিতেও সাহায্য করে। তবে বেদানায় শরীরের জন্য জরুরি আরও বহু পুষ্টিগুণ রয়েছে। এতে আছে ভিটামিন বি৫, বি৬, বি৯, সি, ই এবং কে। ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। বি ভিটামিনগুলি স্নায়ুতন্ত্রের কাজে সাহায্য করার পাশাপাশি মস্তিষ্কের প্রসার, কোষের ডিএনএ সংশ্লেষ, বিপাকের হার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই কোষের ক্ষতি মেরামতে সাহায্য করে। ভিটামিন রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধির পাশপাাশি ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া বেদানায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ়, ক্যালশিয়াম, ফসফরাসও থাকে।
ছবি: ফ্রিপিক।
৫। পেঁপে
পাকা পেঁপে সারা বছরই পাওয়া যায়। পেঁপে নিয়মিত রাখা যেতে পারে প্রাতরাশে। পেঁপেতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি২, বি৫, বি৯, সি, ই এবং কে। এ ছাড়া রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, কপার, জ়িঙ্ক এবং আয়রনের মতো খনিজ। রয়েছে লাইকোপিনের মতো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস এবং প্যাপেইনের মতো উপকারী এনজ়াইম। নিয়মিত পেঁপে খেলে তা হজমের স্বাস্থ্য ভাল রাখার পাশাপাশি, হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে, বিপাকের হার বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, হাড় এবং পেশির স্বাস্থ্য ভাল রাখে। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরকে আর্দ্র রাখে, এমনকি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।