নানান বাংলা শব্দ নিয়ে অদ্ভুত, মজাদার, টানটান উত্তেজনার এই লড়াইয়ে যে যত বেশি আর যত তাড়াতাড়ি বাংলা শব্দ চিনে নিতে পারবে, সে তত বড়ো শব্দবাজ! তারপর, সেরা শব্দবাজদের নিয়ে তৈরি করা স্কুল-দলের মধ্যে একের পর এক লড়াই, সেই লড়াই শেষ অবধি পৌঁছে যায় এক চূড়ান্ত যুদ্ধে। গতবছর থেকে শুরু হওয়া আন্তঃস্কুল শব্দ-জব্দ আসলে এমন এক শব্দের লড়াই, যা আগে বাংলার কোথাও কখনো হয়নি। শব্দের খেলা বললেই আগে শব্দছক, ধাঁধা বা এই ধরনের হাতে গোনা কয়েকটা খেলা একা-একা খেলার বা সমাধান করার কথা মাথায় আসে। কিন্তু এমন অনেক ইংরেজি শব্দের খেলা আছে, যার মতো কিছুই বাংলায় ছিল না। ইংরেজি শব্দের খেলার আদলে তৈরি করা, সঙ্গে একেবারে নিজস্ব ভাবনায় তৈরি করা বেশ কিছু বাংলা শব্দের খেলা নিয়ে স্কুল-ভিত্তিক সেরা হওয়ার লড়াই–শব্দ-জব্দ।
কিন্তু, কেন এই শব্দের লড়াই? গত এক-দু দশক ধরে ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের লেখা কবিতার একটা লাইন বারবার ঘুরেফিরে সামনে আসছে, যে আমার ছেলের (এবং মেয়ের) বাংলাটা ঠিক আসে না। কেন আসে না? কারণ, তাদের অনেকেই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে যেখানে ইংরেজি তাদের প্রথম ভাষা হওয়ায় সব বিষয় ইংরেজিতেই পড়ে, ফলে বাংলাটা সেভাবে শেখে না। অনেকের আবার দ্বিতীয় ভাষা হিন্দি, বা অন্য কোনো ভাষা আর তৃতীয় ভাষা বাংলা। ফলে কোনোরকমে পাশ করলেই হল, বা শিখতে হয় বলে শেখা–এই মানসিকতা তৈরি হয় এই খুদে বাঙালিদের। দোষ ওদের নয়, দোষ পদ্ধতির। বিভিন্ন সময়ের নানান আলোচনায় বোঝা গেছে, এই খুদে বাঙালিদের অনেকেরই প্রথম ভয় শব্দের বানান। দুটো ই-কার, দুটো উ-কার, ঐ-ঔ-কার, দুটো র, দুটো ন, তিনটে শ আর যুক্তাক্ষর তো বটেই–এইরকম অনেক কিছু ওদের অনেকেরই গুলিয়ে যায়। শব্দ চিনতে-পড়তে-লিখতে অসুবিধে হয়, ফলে বাংলা কঠিন লাগে। অপূর্ব দত্ত-র কবিতার লাইনে তার সমাধান–"স্কুলে কেন বেঙ্গলিটা পড়ায় না ইংলিশে?" থাকলেও, সেটা সমাধান নয়।
আমাদের শব্দ-জব্দ এর একটা সমাধান। মজার মজার শব্দের খেলার মাধ্যমে ২০১০ সাল থেকে কাজ করা একটা সংস্থা, আর তাদের ভাষা সংক্রান্ত নানান সমীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে আনন্দবাজার অনলাইনের প্ল্যান করা এই আন্তঃ-স্কুল প্রতিযোগিতা স্কুল-পড়ুয়াদের মন থেকে বাংলা নিয়ে ভয়টা অনেকটা কাটাতে পেরেছে প্রথম বছরেই। ৬টা জেলার ১০১টা স্কুলে গিয়ে গিয়ে প্রাথমিক পর্বের খেলা খেলানোর পরে প্রত্যেক স্কুলের তিনজন পড়ুয়া নিয়ে তৈরি করা হয় স্কুল-দল, যারা একে-অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আসে ৯ নভেম্বর, ২০২২, দক্ষিণ কলকাতার উত্তম মঞ্চে। প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা ধরে তিনটে পর্ব যুদ্ধ করে, শেষ অবধি তিনটে দল সেরা তিন জায়গা দখল করে। আর শেষমেশ সব স্কুল-দল, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, উপস্থিত অভিভাবকরা স্বীকার করেন–বাংলা শব্দের লড়াইয়ে সেরা স্কুলের খোঁজ করা শব্দ-জব্দ তাঁদের মনের আর ভরসার অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে।
আমরা তৈরি হচ্ছি শব্দ-জব্দ পর্ব ২-এর জন্য। নিয়মিত চোখ রাখুন আমাদের এই ওয়েবসাইটে।