শব্দ জব্দ ২০২৩-এর মঞ্চ (ইনসেটে পার্থ কর্মকার)। নিজস্ব চিত্র।
এই ‘শব্দ জব্দ’ যেন এক ‘পড়া-পড়া খেলা’। তাই কবিগুরুর ভাষা দিয়েই মাতৃভাষার জননীকে আহ্বান জানাই ,
‘‘মা গো, আমায় ছুটি দিতে বল,
সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা।
এখন আমি তোমার ঘরে বসে
করব শুধু পড়া-পড়া খেলা।’’
‘শব্দ জব্দ’ প্রকৃতপক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের শব্দের লড়াই। এই মজার প্রতিযোগিতাটি শুধু নিছক খেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এই খেলার ছলেই শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং তাদের শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। তারা নতুন নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি সেই সব শব্দ বাক্যে প্রয়োগ করে তাকে শ্রুতিমধুর করে তুলতে সমর্থ হয়।
শব্দ হল অর্থবহ ধ্বনির সমষ্টি, যা বাক্য তৈরির মূল উপাদান। উৎপত্তির দিক থেকে বিচার করলে তৎসম শব্দ, অর্ধ-তৎসম শব্দ, তদ্ভব শব্দ, দেশি শব্দ এবং বিদেশি শব্দের উল্লেখ আমরা বাংলা ভাষায় লক্ষ্য করে থাকি। এই শব্দগুলিকে নানা রকম ভাবে প্রয়োগ করা, সমার্থক শব্দ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরির পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট জায়গায় তার প্রয়োগ করে সঠিক শব্দ চয়নের মাধ্যমে বাক্য গঠন কিংবা বিপরীতার্থক শব্দগুলি জেনে নেওয়া— এই সবই শিক্ষার্থীদের কাছে এক বৈচিত্র্যময় জগতের সন্ধান দেয়, যা তাদের মনে উদ্ভাবনী চিন্তার জন্ম দিতে সমর্থ হয়।
এক জন শিক্ষার্থীর শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হলে তার ভাষাও সমৃদ্ধ হয়। প্রতিটি মুহূর্তে সে নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়। অনেক দেশি-বিদেশি শব্দ মিলিয়ে তৈরি হওয়া নতুন শব্দ বাংলা ভাষাকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করে চলেছে। সেই বিষয়েও শিক্ষার্থীরা অবগত হওয়ার সুযোগ পায়। আমরা জানি সন্ধি, সমাস— এরা নতুন শব্দ গঠনে যেমন সাহায্য করে থাকে, তেমনই প্রত্যয়, উপসর্গও নতুন শব্দ গড়তে সাহায্য করে।
অনেক সময়ে দেখা যায়, কিছু কিছু শব্দ সংস্কৃত ভাণ্ডারের নিজস্ব উৎস থেকে বা অন্য ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় জায়গা করে নিয়েছে। সেই শব্দগুলিকে আগন্তুক শব্দ বলা হয়। এই ধরনের শব্দের ব্যবহার বাংলা ভাষাকে অনেক বেশি আধুনিক তথা স্মার্ট করে তোলে। এই শব্দের সন্ধান জারি রয়েছে, তাই প্রতিটি মূহূর্তে বাংলা ভাষা বিভিন্ন উৎস থেকে অসংখ্য শব্দ সংগ্রহ করে নিজের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে চলেছে।
এই ‘শব্দ জব্দ’-এর মাধ্যমে এই বিষয়গুলি জেনে নিয়ে নতুন নতুন শব্দ শেখা যেন এক অভিনব সৃজনশীলতার স্মৃতি উসকে দেয়। শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষার দক্ষতাকে সুচারু ও সুনিপুণ করে তোলার জন্য এবং মাতৃভাষার শিকড়ের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে জুড়ে রাখার লক্ষ্যে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে আনন্দবাজার অনলাইন-এর এই উদ্যোগ সত্যিই অভিনব এবং প্রশংসনীয়।