কিডনি প্রতিস্থাপনই নিয়ে বিভিন্ন তথ্য জানালেন চিকিৎসক পার্থ কর্মকার
সাম্প্রতিক তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, শুধু ২০২২ সালের মধ্যে দুই লক্ষের বেশি রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়েছে। যদিও পরিসংখ্যান বলছে, তার মধ্যে মাত্র ৭৫০০টি বা ৩.৪ শতাংশ প্রতিস্থাপন বাস্তবে সম্ভবপর হয়েছে। ভারতীয়দের মধ্যে মধুমেহ রোগ ও উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি সমস্যা বহুল মাত্রায় থাকার কারণে কিডনির দীর্ঘস্থায়ী রোগ খুব বেশি চোখে পড়ে। দেশের প্রায় শতকরা ১৭ ভাগ জনসংখ্যা এই রোগে রীতিমত কাবু।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে রোগীদের মধ্যে দেখা যায় ‘এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজ়িজ়’ বা শেষ পর্যায়ের কিডনির রোগ, যা প্রায় দূরারোগ্য। এই ক্ষেত্রে মাত্র দু’টি পথই রোগীর সামনে থাকে, হয় ডায়ালিসিস নয় তো কিডনি প্রতিস্থাপন। দ্বিতীয় পথটিই সবচেয়ে কার্যকরী বলে ধরা হয়। রোগীর স্বাচ্ছন্দ্য, জীবনযাপনের মান, আয়ু, এমনকী দীর্ঘকালীন ডায়ালিসিসের খরচ বহন করার বদলে সাশ্রয়ী পথ বেছে নেওয়া— সব কিছুকেই মাথায় রেখে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আদর্শ চিকিৎসার পদ্ধতি হিসেবে প্রতিস্থাপনকেই গণ্য করা হয়।
প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল একজন দাতাকে খুঁজে পাওয়া। প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনে দু’ভাবে অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ সংগ্রহ করা যায়। প্রথমত, কোনও ব্রেন ডেথ হওয়া রোগী। দ্বিতীয়ত, কোনও ইচ্ছুক জীবিত অঙ্গদাতা। মৃত ব্যক্তি বা রোগীর থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন করার সুযোগ এখনও আমেরিকা বা ইউরোপের তুলনায় ভারতে বেশ কম। যদিও বা দক্ষিণ ভারতে তুলনামূলক ভাবে বেশি দেখা যায়। তবে পূর্ব ভারতে এই রকম প্রতিস্থাপনের ঘটনা খুবই হাতেগোনা।
জীবিত অঙ্গ দাতার(সাধারণত রোগীর কোনও নিকট আত্মীয়) থেকে অঙ্গ গ্রহণ করা এই রকম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সবচেয়ে সহজলভ্য উপায়। তবে ইদানীং অসম্পর্কিত বা অর্থের বিনিময়ে প্রতিস্থাপনে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। তার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা গিয়েছে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হওয়া রোগীদের অভিভাবকরা ইতিমধ্যেই রীতিমতো বয়স্ক কিংবা তাঁরা নিজেরাই নানা প্রকার কো-মর্বিডিটিতে ভোগেন যেমন, মধুমেহ, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, কিডনির নানা অসুস্থতা, ইত্যাদি। রোগীদের ভাইবোনদের সাধারণত নিজস্ব পরিবার, দায়িত্ব ইত্যাদির চাপ থাকে। তাই তাঁরাও যে এগিয়ে আসেন এমন ঘটনা প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে।
কিডনি প্রতিস্থাপন কী একটি সফল উদ্যোগ?
হ্যাঁ, ভারতের বুকে কিডনি প্রতিস্থাপনের হার রীতিমতো ভাল। এর মধ্যে প্রায় শতকরা ৯৫টি অস্ত্রোপচার এখানে সফল হয়। একজন জীবিত অঙ্গ দাতার থেকে অঙ্গ বা প্রত্যঙ্গ গ্রহণ করলে তা প্রায় ১৫-২০ বছর পর্যন্ত ঠিকঠাক থাকে, তবে মৃত দাতার থেকে কিডনি গ্রহণ করলে রোগী ১০ থেকে ১৫ বছর অবধি মাত্র সুস্থ থাকেন।
ডায়ালিসিসের থেকে কিডনি প্রতিস্থাপন বেশি ভাল উপায় কেন?
কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে আয়ু অনেকটা বাড়ানো যায়। স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ফিরে পাওয়া যায়। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ডায়ালিসিসের ধকল থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। খাওয়া-দাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ শীথিল হয়ে যায়। এমন কি প্রায় স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবন ও যৌন জীবন ফিরে পাওয়া যায়। যদিও অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সময় খুব বড় অঙ্কের অর্থব্যয় হয়, তাই অনেকে পিছিয়ে আসেন। কিন্তু দীর্ঘকালীন ডায়ালিসিসের তুলনায় এককালীন প্রতিস্থাপনের খরচ অনেকই পকেটবান্ধব ও সাশ্রয়ী।
কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য একটি নাকি দু’টি কিডনিই প্রয়োজন হয়?
রোগীকে মাত্র একটি কিডনিই দান করা হয়।
রোগীর নিজের কিডনি কি বের করে বা বাদ দিয়ে দেওয়া হয় অস্ত্রোপচারের সময়?
বিশেষ কোনও সমস্যা না থাকলে, বা কোনও প্রয়োজন না পড়লে আসল ও অকেজো কিডনি বাদ দেওয়া হয় না।
কিডনি প্রতিস্থাপন করলে কি দাতার কোনও ক্ষতি হয়?
একদমই নয়। প্রতিস্থাপনের দিকে এগোনোর আগেই ইচ্ছুক অঙ্গদাতাকে রীতিমতো ভাল রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নেওয়া হয়। যাতে ভবিষ্যতে তাঁদের কোনও সমস্যার মুখোমুখি না হতে হয়।
প্রতিস্থাপনের পরেও কি অঙ্গ গ্রহীতা রোগীকে ওষুধপত্র খেয়ে যেতে হবে?
একেবারেই। একনিষ্ঠভাবে এবং সারা জীবন তাঁদের নিয়মিত ওষুধপত্র চালিয়ে যেতে হবে।
প্রতিস্থাপনের পরে কি রোগী এবং অঙ্গদাতা দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারবেন?
হ্যাঁ, শুধু খুবই ভারী ওজন তোলা বা অন্যান্য ভারী কায়িক শ্রম বাদ দিয়ে স্বাভাবিক জীবনের সব কাজই তাঁরা করে যেতে পারবেন।
অন্য রক্তের গ্রুপ হলেও কী অঙ্গদাতা নিজের কিডনি দান করতে পারবেন?
হ্যাঁ, এটি সম্ভব।
তাই এগিয়ে আসুন, নিজেদের প্রিয়জনদের কিডনি দান করে তাঁদের জীবন বাঁচান, এবং এই রকম অকেজো কিডনির রোগে শয্যাশায়ী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে সহজ সুন্দর জীবন ফিরে পেতে হাত বাড়িয়ে দিন।
অন্যকে নতুন জীবন দিন। এগিয়ে আসুন এবং অঙ্গীকার করুন অঙ্গদানের। ক্লিক করুন পাশের লিঙ্কে — bit.ly/47a6kLV