বর্ষবরণের পার্টিতে চুটিয়ে মদ্যপান করবেন প্ল্যান করেছেন? তবে পরদিন হ্যাংওভারের কথা ভাবলে একটু টেনশন হচ্ছে? বর্ষবরণের রাতে মজা করার সময় মদ্যপান একটু বেশি হয়ে যাবেই। তাই পরদিন হ্যাংওভারের চান্সও প্রবল। বাজারে এখন নানা রকম হ্যাংওভার কিওর ওষুধ পাওয়া যায়। কিন্তু এই রকমের ওষুধের থেকে ভাল যদি প্রাকৃতিক উপায় মাথা ভার, বমি বমি ভাব, অবসাদ কাটাতে পারেন। এখনই জেনে নিন হ্যাংওভার সামলানোর কিছু টিপ্স।
জল খান: অ্যালকোহলের বড় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল শরীর থেকে জল বেরিয়ে যাওয়া। নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবেন মদ্যপান করার সময় আপনাকে বার বার বাথরুমে ছুটতে হয়। তাই পার্টির পর ঘুমোতে যাওয়ার আগে অন্তত ৫০০ মিলিলিটার জল খান। পার্টিতে প্রতিটি পেগের সঙ্গে এক গ্লাস জল অর্ডার দিন এবং মাঝে মাঝেই জল খান। এতে আপনার শরীর বেরিয়ে যাওয়া ফ্লুইড প্রতিস্থাপন করতে পারবে এবং পরদিন সকালে আপনার নিজেকে ডিহাইড্রেটেড লাগবে না।
কফি খান: যদিও কফিকে অনেকেই হ্যাংওভার কাটানোর কিওর হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন, মনে রাখবেন এটা কিন্তু ডাই-ইউরেটিক। আপনার শরীর থেকে ফ্লুইড আরও বেশি মাত্রায় বেরিয়ে যেতে পারে। কফিতে থাকা ক্যাফেইন অনেকের মতে তাদের মাথা যন্ত্রণা এবং মাথা ভার ভাব কাটাতে সাহায্য করে। তাই যদি আপনার ইচ্ছা হয় তাহলে আপনি কফি খেয়ে নিজেকে চাঙ্গা করে তুলতে পারেন। খেয়াল রাখবেন যেন কফির ডাই-ইউরেটিক প্রতিক্রিয়া রুখতে প্রচুর পরিমাণ জল খাওয়া হয়।
টোস্ট বা ক্রিম ক্র্যাকার: সারা রাত মদ্যপানের পর বমি হচ্ছে? কিছুই পেটে থাকছে না? তাহলে পেট শান্ত করতে খান কড়া করে সেঁকা টোস্ট অথবা সাধারণ ক্রিম ক্র্যাকার বিস্কিট। এই ধরনের খাবারের মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা সুস্থির রাখতে সাহায্য করে। ক্লান্তি, খিটখিটে ভাবও কমবে। যখন একটু বেশিই মদ্যপান করা হয়ে থাকে তখন লিভার তা মেটাবলিজমে ব্যস্ত থাকে। যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নেমে যায়। ক্লান্তি আসে।
আরও পড়ুন, নিউ ইয়ার্স পার্টির কিছু জরুরি ডু’জ অ্যান্ড ডোন্টস
মদ্যপানের আগে ফাইবারযুক্ত খাবার খান: হাই ফাইবার খাবার অ্যালকোহলকে রক্তে মিশতে বাধা দেয়। যার ফলে শরীরেও কম শোষিত হয়। তাই মদ্যপানের আগে এবং মদ্যপানের সময় চেষ্টা করুন হাই ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ার। যেমন বিনস, মাশরুম, পপকর্ন, ভাক, গ্রিলড চিকেন স্যান্ডউইচ জাতীয় খাবার খেতে পারেন।
অ্যালকোহল মেশাবেন না: যদি বিয়ার খাবেন ঠিক করে থাকেন তো শুধুই বিয়ার খান। যদি হুইস্কি বা ভদকা খাবেন মনে করেন, তাহলে শুধু সেই প্রকারেই সীমাবদ্ধ থাকুন। এতে কতটা খেলেন তার হিসেব যেমন থাকবে, তেমনই বেসামাল হয়ে পড়ার সম্ভাবনাও কমবে।
আদা দিয়ে চা খান: হ্যাংওভারের কারণে হওয়া মাথা ব্যথা এবং পেট ব্যথা কাটাতে আদা দিয়ে হালকা চা বানিয়ে খেতে পারেন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে আদা হ্যাংওভারজনিত মাথা এবং পেট ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। গ্রিন টি বা হার্বাল চা মদ্যপানের পর আপনার লিভারকে আরাম এবং বিশ্রাম দিতে সাহায্য করে।
কলা খান: কলার মধ্যে থাকা পটাশিয়াম হ্যাংওভার কাটাতে কার্যকরী। ডিহাইড্রেশনের ফলে হারানো ইলেকট্রোলাইট ফেরাতে সাহায্য করে কলা। প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যাওয়া রুখতে সাহায্য করবে।
খালি পেটে মদ্যপান করবেন না: মদ্যপানের অলিখিত গোল্ডেন রুল বলতে পারেন এটা। খালি পেটে কখনই মদ্যপান করবেন না। পার্টিতে যাওয়ার আগে ফ্যাটযুক্ত খাবার খেয়ে নিন। তবে খেয়াল রাখবেন যেন অতিরিক্ত খেয়ে ফেলবেন না। তাতে কিন্তু বিপত্তি হতে পারে। ফ্যাটি খাবার আপনার শরীরে অ্যালকোহল শোষণ বিলম্বিত করতে পারে। যা আপনাকে পরদিন সকালে অসহ্য মাথা ব্যথা থেকে বাঁচাতে পারে।
ডান্স ফ্লোরে সামলে থাকুন: অ্যালকোহল হয়তো আপনাকে নিজেকে মাইকেল জ্যাকসন থেকেই ভাল ডান্সার মনে করাতে পারে। আবার নিউ ইয়ার পার্টিতে নাচাগানা হবে না তা হয় নাকি? তবে মনে রাখবেন যত বেশি নাচানাচি করবেন, পরদিন সকালে কিন্তু ততটাই ক্লান্তির মুখোমুখি হতে হবে। তাই খেয়াল রেখে আনন্দে মাতুন।
ধীরে সুস্থে পান করুন: দু’টি পেগের মধ্যে কিছুটা সময়ের ব্যবধান রাখুন। এক ইউনিট অ্যালকোহল হজম করতে আপনার শরীরের অন্তত এক ঘণ্টা সময় লাগে। এই সীমা ভাঙা মানেই কিন্তু হ্যাংওভারকে নিমন্ত্রণ জানানো। তাই আনন্দ করতে গিয়ে একের পর এক পেগ না নিয়ে একটু সময় নিয়ে পেগ শেষ করুন আর দু’টি পেগের মাঝে কিছুটা সময়ের ব্যবধান রাখুন।
স্নান করে নিন: সময় নিয়ে ভাল করে স্নান করুন। দেখবেন শরীর ফুরফুরে লাগবে এবং হ্যাংওভারজনিত ক্লান্তি খানিকটা কেটে যাবে। কিন্তু খেয়াল রাখবেন যেন জল অতিরিক্ত গরম না হয়। তা হলে কিন্তু মাথা গরম হয়ে বমি বমি ভাব আসতে পারে। স্নান করে খোলা বারান্দা বা ছাদে গিয়ে কিছুক্ষণ বসুন। খোলা হওয়ায় দেখবেন আপনি চাঙ্গা হয়ে উঠবেন।
রোদে বেরোতে হলে সানগ্লাস ব্যবহার করুন: হ্যাংওভার হলে আপনি ফোটো সেন্সেটিভ হয়ে পড়তে পারেন। তাই রোদে বেরোলে আপনার হ্যাংওভার আরও খারাপ হয়ে উঠতে পারে। বাইরে যেতে হলে ব্যবহার করুন সানগ্লাস। ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শোনা থেকে এই দিন বিরত থাকুন। জোর আওয়াজে আপনার হ্যাংওভার, মাথা ব্যথা দুটোই বাড়াতে পারে।
নিউ ইয়ার্স পার্টিতে আনন্দ করুন চুটিয়ে। কিন্তু খেয়াল রাখুন এই বিষয়গুলো। তা হলেই ফুরফুরে মেজাজে নতুন বছর শুরু করতে পারবেন।