Akshahya Tritiya 2020

করোনার দাপটে ম্লান হল অক্ষয় তৃতীয়াও

এ বছর দোকানের ঝাঁপই খুলতে না পারায় আক্ষেপের শেষ নেই শিল্পাঞ্চলের ব্যবসায়ীদেরও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২০ ০৫:০৮
Share:

অক্ষয় তৃতীয়াতে সুনসান কুলটির কল্যাণেশ্বরী মন্দির চত্বর। ছবি: পাপন চৌধুরী

পয়লা বৈশাখ হালখাতা না করে বহু দোকানে বেছে নেওয়া হয়ে থাকে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনটিকে। এ বার লকডাউনের জেরে পয়লা বৈশাখ হালখাতার অনুষ্ঠান করতে পারেননি বহু ব্যবসায়ী। একই পরিস্থিতি অক্ষয় তৃতীয়াতেও।

Advertisement

দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারের বেশ কিছু গয়নার দোকানে প্রতি বছর অক্ষয় তৃতীয়ায় দিনে হালখাতার পুজো হয়। দোকানের সব ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ করে এই দিনে তাঁদের হাতে ক্যালেন্ডার, উপহার, মিষ্টির প্যাকেট দেওয়া হয়। রবিবার অক্ষয় তৃতীয়ার দিন এ সব বন্ধ ছিল। এ দিন সকালে কিছু ক্ষণের জন্য দোকান খুলে পুজো সেরে ফের ঝাঁপ বন্ধ করে দেন তাঁরা। বেনাচিতি স্বর্ণশিল্পী সমিতি সংগঠনের সম্পাদক চন্দন দাস বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদের সংগঠনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, একবার দোকান খুলে দ্রুত পুজো-পাঠ সেরে ফেলতে। পুলিশকেও তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ লকডাউনের জেরে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ছাড়া অন্য দোকান বন্ধ। মামরা বাজারের একটি জামা-কাপড়ের দোকানের মালিক জানিয়েছেন, এ দিন সকালে ঘণ্টাখানেকের জন্য দোকান খোলা হয়েছিল। পুজোর পরে ফের দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমন আগে কখনও হয়নি। অনেক জায়গায় আবার পুরোহিত আসতে না পারায় ব্যবসায়ীরা নিজেরাই পুজো করেন।

এ বছর দোকানের ঝাঁপই খুলতে না পারায় আক্ষেপের শেষ নেই শিল্পাঞ্চলের ব্যবসায়ীদেরও। পয়লা বৈশাখের মতো অক্ষয় তৃতীয়ার উৎসবেও বাড়িতে বসেই কেটে গিয়েছে বলে জানালেন আসানসোলের ব্যবসায়ীরা। লক্ষ্মী-গণেশের পুজোটুকুও দোকানে গিয়ে করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। আসানসোল বাজারে ইলেকট্রনিক্সের দোকান রয়েছে সন্তোষ চৌধুরীর। তিনি জানান, দু’দিন আগে থেকে পুজোর জোগাড় শুরু হয়ে যায়। বিকেলে ক্রেতাদের ভিড় লেগে যেত। অতিথিদের মিষ্টিমুখ করানো থেকে বেচাকেনার আয়োজনে দম ফেলার ফুরসত মেলে না। কিন্তু এ বার আর সেই তাড়া ছিল না!

Advertisement

হতাশার ছবি ফুটে উঠেছে খনি অঞ্চলেও। উখড়া বাজারের পোশাক ব্যবসায়ী সুখেন ভৌমিক জানান, সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী দোকান খোলা যায়নি। তবে এ দিন সকালে রীতি মেনে পুজো করার জন্য কিছু ক্ষণ দোকান খুলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বিক্রি খুব একটা হয় না। তবে অনেকে বকেয়া টাকা দিয়ে যান। ক্রেতাদের একাংশ অগ্রিম টাকাও জমা দেন। তিনি বলেন, ‘‘রথযাত্রার দিকে তাকিয়ে আছি। সব ঠিক থাকলে সে দিন এই উৎসব করা যাবে।’’

সোনা, রুপোর বড় পাইকারি বাজার রয়েছে রানিগঞ্জে। রানিগঞ্জের এক সোনার দেকানের মালিক সুদীপ রায় জানালেন, সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা একেবারেই সম্ভব নয়। তা ছাড়া, এই সময়ে কেউ আসতে চাইবেন বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, ‘‘অনলাইনে কেনাকাটা চলছে। তাতে যৎসামান্য বিক্রি হয়েছে। এতেই খুশি। পুজোটা বাড়িতেই সেরে নিয়েছি।’’ রানিগঞ্জ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপ নন্দী জানান, শ’দেড়েক সোনা, রুপোর দোকান আছে। তিনি বলেন, “ক্রেতাদের একাংশ ফোনে সামগ্রী চেয়ে পাঠিয়েছেন। তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’’ দীর্ঘ সময় ধরে দোকান বন্ধ থাকায় অনেক ক্ষতি হয়ে গেল বলে জানিয়েছেন পাণ্ডবেশ্বর ও জামুড়িয়া বণিক সংগঠনের সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ ভট্টাচার্য ও অজয় খেতান।

এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে ফুল, ফল, মিষ্টির দোকানেও। বেনাচিতির এক ফুল বিক্রেতা আবির বসু বলেন, ‘‘অক্ষয় তৃতীয়ার দিন আগে থেকে ফুলের অর্ডার আসে। সেই মতো ফুল আমদানি করে থাকি। এ বার বিক্রি নেই বললেই চলে।’’ সিটি সেন্টারের একটি মিষ্টির দোকানের কর্মী নদিয়া মণ্ডল বলেন, ‘‘দোকান খোলার পরে থেকে যেমন বিক্রি হচ্ছে, তেমনই বিক্রি হয়েছে এ দিনও। তবে বেশি হয়নি।’’ অন্য দিনের তুলনায় সামান্য বেশি ফল বিক্রি হয়েছে বলে জানালেন বেনাচিতির এক ফল বিক্রেতা রামপ্রসাদ সাউ।

সমস্ত উৎসব-অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে যাওয়া ও মন্দির বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন পুরোহিতেরাও। দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গি কালীবাড়িতে অন্য বছর এ দিনে অনেকে পুজো দিতে আসতেন। কিন্তু লকডাউনের জেরে মন্দিরও এ বার বন্ধ। ডিএসপি টাউনশিপের বাসিন্দা পুরোহিত বাণীব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অক্ষয় তৃতীয়ায় মোট পাঁচটি দোকানে পুজো করি। এ বার তার মধ্যে চারটি দোকানে পুজো হয়েছে। তবে পুজোয় কোনও আড়ম্বর ছিল না। দক্ষিণাও জুটেছে সেই মতোই!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement