বলিউডের গায়কদের রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া কোনও নতুন ব্যাপার নয়। কিশোরকুমার থেকে আশা ভোঁসলে, বাবুল-সুপ্রিয়, শান থেকে সুনিধি চৌহান, অলকা যাজ্ঞিক থেকে কবিতা কৃষ্ণমূর্তি। প্রত্যেকেই কখনও না কখনও রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছেন। এই বার রবীন্দ্রসঙ্গীতের আর এক সড়কে হাঁটতে চলেছেন বলিউডের দুই শিল্পী। একজনের নাম হরিহরন, অন্যজন কবিতা কৃষ্ণমূর্তি। সেই সড়কের নাম ‘ভানুসিংহের পদাবলী’।
কবিতা কৃষ্ণমূর্তি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছেন এর আগে। প্রকাশিত হয়েছে দুটি অ্যালবাম। তাই তাঁর রাবীন্দ্রিক ঘরানা সম্পর্কে ধারণা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু হরিহরন কী ভাবে ভানুসিংহের পদাবলী গাইবেন তা নিয়ে শ্রোতাদের মনে কৌতূহল থাকবেই। আর সেই কৌতূহল মেটানোর জন্যই এই সঙ্কলন।
‘‘আমি এর আগে একবার বাংলা গজল গেয়েছি, বাংলা গানও গেয়েছি। কিন্তু সেগুলো ঠিক প্রচার পায়নি। অনেক দিন ধরেই ভাবতাম রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলে কেমন হয়। কিন্তু সাহস করে উঠতে পারিনি। আশা অডিও যখন জানাল, ভানুসিংহের পদাবলী ঠিক বাংলা নয়, মৈথিলী ভাষায় লেখা, আমার মনে হয়েছিল হিন্দি আর সংস্কৃতর সঙ্গে এই ভাষার খুব মিল আছে। গাইতে অসুবিধে হবে না। তাই রাজি হয়ে গেলাম,’’ বললেন হরিহরন।
শান, বাবুল, উষা উত্থুপদের রবীন্দ্রসঙ্গীত না শুনলেও, কিশোরকুমারের রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনেছেন হরিহরন। টিভিতে বহুবার শুনেছেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। শুনেছেন বাউলাঙ্গের রবীন্দ্রগীতিও। তিনি বললেন, ‘‘রবীন্দ্রসঙ্গীতে সুরের থেকেও বড় হল ভাব। ‘ভানুসিংহের পদাবলী’তে যে ভাব রয়েছে মৈথিলী ভাষার জন্য তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি। এই অ্যালবাম যদি হিট করে তা হলে এর পরেও আবার রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইব।’’
‘টুগেদার টেগোর’ নামে এই অ্যালবামে থাকছে মোট তিনটে ভানুসিংহের গান। এর মধ্যে হরিহরন গেয়েছেন ‘গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে’ আর ‘শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা’। আর কবিতা গেয়েছেন ‘সজনি সজনি রাধিকা লো’।
‘ভানুসিংহের পদাবলী’ গেয়ে কবিতার ঠিক কেমন লাগল? তিনি বললেন, ‘‘আমি ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছি। ‘ভানুসিংহের পদাবলী’ও আমার অনেকটাই জানা ছিল। এই সব গানের মধ্যে যেমন প্রেম আছে, তেমন আছে প্রকৃতি। লোকসঙ্গীতের সঙ্গে মিলেছে ধ্রুপদী সঙ্গীত। রাগের মিশ্রণে খুব সুন্দর লাগে গাইতে ভানুসিংহের পদাবলী।’’
হরিহরনের সঙ্গে কবিতা কৃষ্ণমূর্তির যুগলবন্দিতে রয়েছে একের পর এক ফিল্মি হিট—যার মধ্যে ‘তুহি রে’, ‘আই লভ মাই ইন্ডিয়া’, ‘অ্যায় দিল লায়ে হ্যায় বাহার’য়ের মতো গান। সেই হরিহরন আর কবিতা আবার একসঙ্গে। এক অ্যালবামে। ‘ভানুসিংহের পদাবলী’র গানগুলো প্রকাশের আগে সেই কথাই মনে করিয়ে দিলেন অ্যালবামের প্রযোজক সংস্থা আশা অডিওর কর্ণধার মহুয়া লাহিড়ি। আগামী পয়লা বৈশাখে মুক্তি পাবে এই দুই গায়ক গায়িকার গাওয়া অ্যালবামটি। ভানুসিংহের গান ছাড়াও অন্য রবীন্দ্রসঙ্গীত থাকছে অ্যালবামে। যেগুলি গেয়েছেন কবিতা। কিন্তু প্রশ্ন হল, শ্রোতারা কি গ্রহণ করবেন এই সংকলন? কবিতা বললেন, ‘‘আমি বা হরিহরনজি এমন একটা বয়সে এসে পৌঁছেছি যেখানে ভাল কাজ করার দিকটা মাঝে মাঝে বড় হয়ে ওঠে। শ্রোতারা নেবেন কি নেবেন না সেটা গৌণ।’’
আর হরিহরন কী মনে করছেন এই অ্যালবামের ব্যবসায়িক দিক সম্পর্কে? তিনি বলছেন, ‘‘অসম্ভব ভাল মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছেন সৌম্য বসু। আমিও প্রতিটা গানের সঙ্গে বন্দিশ গেয়েছি যাতে রাগের মূর্ছণায় ভানুসিংহের গানগুলো আলাদা মনে হয়। বাদবাকিটা শ্রোতারা বুঝবেন।’’