‘আনন্দ প্লাস বায়োস্কোপে বাজিমাত’ অনুষ্ঠানে (বাঁ দিক থেকে) পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সুজিত সরকার, ব্রাত্য বসু, রঞ্জিত মল্লিক, দেবশঙ্কর হালদার, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, বাবুল সুপ্রিয়, শতাব্দী রায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় ও সৃজিত মুখোপাধ্যায়। (সামনের সারিতে) অপর্ণা সেন, কোয়েল মল্লিক, রাইমা সেন ও রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুব্রতকুমার মণ্ডল।
সশব্দে বাজিমাত করলেন নায়িকা-পরিচালক জুটি। বৃহস্পতিবার রাতে রয়্যাল ক্যালকাটা গল্ফ ক্লাবে অন্যদের হারিয়ে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়-রাইমা সেন জুটিই বাজিমাত করলেন। কে না জানে, ক্যামেরার সামনে রাইমা, পিছনে কৌশিক এই জুটির ‘শব্দ’ গত বছর জিতেছিল জাতীয় পুরস্কার। এ বার ‘আনন্দ প্লাস বায়োস্কোপে বাজিমাত’ ক্যুইজে প্রথম পুরস্কার।
অষ্টবসুর মতো তারকাখচিত আটটি টিমের কোনওটিতে প্রসেনজিৎ-রচনা। কোনওটিতে যিশু-শাশ্বত। কোথাও আবার সুজিত সরকার-ঋতুপর্ণা। গত বারে ছিল ছ’টি জুটি। ক্যুইজারের সংখ্যা বেড়েছে। ‘চাঁদের পাহাড়’-খ্যাত কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় থেকে ‘ম্যাড্রাস কাফে’-খ্যাত সুজিত মুখোপাধ্যায় এ বারই প্রথম ক্যুইজযুদ্ধে। ছিল ব্রাত্য বসু-দেবশঙ্কর হালদারের নাট্যজুটিও। আনন্দ প্লাস সশব্দে জানাল, নাটকও এখন গ্ল্যামার দুনিয়ার অংশ। ক্যুইজে টলিউডের সঙ্গে তারা মিলেমিশে যায়। সবচেয়ে বড় চমক ছিল অন্যত্র। তিন রাউন্ডের জন্য মঞ্চে উঠে এলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ‘দাদাগিরি’-খ্যাত সঞ্চালক অবশ্য মান্না দে সংক্রান্ত রাউন্ডের পরই নেমে এসেছেন দর্শকাসনে, “আমি এমন একটা খেলা খেলতাম, যেখানে পারফর্ম্যান্স না করলে বাদ দেওয়া হয়। সামনে অনুপম (রায়) বসে আছে, ওকে বরং নিয়ে এস।” দর্শকাসনে ফিরে তিনি ক্যুইজারদের দিকে একটা প্রশ্নও ছুড়ে দিলেন, ‘১৯৮৩-র বিশ্বকাপজয়ী টিমের ম্যানেজার কে ছিলেন’! শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়-যিশু সেনগুপ্ত জুটি থেকে ক্রিকেটপ্রেমিক যিশুর গলা শোনা গেল, ‘পারলে কী দেবে?’ সৌরভ সহাস্যে বললেন, “পরের বার দাদাগিরিতে এলে সহজ প্রশ্ন।”
এ রকমই ছিল মেজাজ। নিছক ক্যুইজ নয়। বরং খুনসুটি, মজা, আড্ডা অনেক কিছু। চৌরঙ্গী ছবিতে ‘মেঘের খেলা আকাশপারে’ গানের সুরকারের নাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন ক্যুইজমাস্টার সৃজিত মুখোপাধ্যায়। বাবুল সুপ্রিয়-শতাব্দী রায় জুটির সেলিব্রিটি গায়ক অসীমা বলে থেমে গিয়েছিলেন। পদবী বলতে পারেননি। প্রসেনজিৎ উইকিপিডিয়ার ঢঙে বলে দিলেন, ‘অসীমা ভট্টাচার্য। দিলীপ ভট্টাচার্যের স্ত্রী। ছবি রিলিজের আগে উত্তেজনায় পায়ের নখ খেতেন।’ বাবুল তার পরেও কিছু একটা বলার চেষ্টা করতেই সহাস্যে বাউন্ডারি হাঁকালেন প্রসেনজিৎ, ‘‘বাবুল, ছবিটায় আমার বাবা ছিলেন রে!’’
ছিল পরমব্রত-অপর্ণা সেন, কমলেশ্বর-কোয়েলের অসম জুটিও। ক্যুইজের খেলায় হার-জিৎ থাকবেই। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার ছিল, প্রতিযোগীদের প্রশ্ন ছুড়তে ছুড়তে ক্যুইজমাস্টারের ‘পাস’ দিয়ে যাওয়া। জঞ্জির ছবিতে ‘ইয়ারি হ্যায় ইমান মেরা’ গানটিতে প্রাণের চরিত্রের নাম কী? বলতে বলতে ক্যুইজমাস্টারের মন্তব্য, “সুন্দরবন যে কত দূর! সুন্দরবনের বাঘ মনে পড়লেই তো মাথায় আসবে সেই অবিস্মরণীয় নাম শের খান।” কিংবা তার চেয়েও মজাদার ছিল অন্য একটি মুহূর্ত। ‘ফেয়ার প্লে ট্রফি’ কাকে দেওয়া যায়, তা নিয়ে ম্যাচ রেফারি রঞ্জিত মল্লিক চিন্তিত। মঞ্চ থেকে কোয়েলের অনুরোধ: ‘বাবা, পার্শিয়ালিটি চলবে!’
বাইরে মজা আর খুনসুটি, অন্তরে নস্টালজিয়া। ক্যুইজের তিনটি রাউন্ড সুচিত্রা সেন, রাজেশ খন্না ও মান্না দে-কে নিয়ে। দর্শকাসনে মুনমুন, প্রতিদ্বন্দ্বীর আসনে রাইমা আর পর্দায় সুচিত্রা সেনের ‘দেবদাস’ বা ‘আঁধি’ ছবির দৃশ্য তিন প্রজন্মকেই এ দিন জুড়ে দিয়ে বাজিমাত। কে জানত, দর্শকাসনেও ঘাপটি মেরে ছিল দেব আনন্দের অতীতচারিতা? ক্যুইজাররা কেউই বলতে পারলেন না ‘সবার উপরে’ ছবির হিন্দি রিমেকের নাম কী ছিল। দর্শকাসন সোল্লাসে জানাল, ‘কালাপানি’।
নস্টালজিয়া অবশ্য সব সময়ে প্রকাশিত হয় না। ‘সন্ন্যাসী রাজা’ ছবিতে ভাওয়ালের মেজো কুমারের নাম নিয়ে তর্কাতর্কি। ব্রাত্য জানালেন, রমেন্দ্রকুমার রায়চৌধুরী। সৃজিত সংশোধন করে দিলেন, রমেন্দ্রনারায়ণ। ‘প্রিন্সলি ইমপোস্টার’-এর নাম এ ভাবেই ভুল বললেন ব্রাত্য? নাকি ভিতরে কোথাও মনে পড়ে গিয়েছিল রমেন্দ্রকুমার আচার্যচৌধুরীর কবিতা? ক্যুইজ বোঝাল, নস্টালজিয়া কখনও ‘স্লিপ অব টাং’ ঘটিয়ে দেয়!
একটি ছবির শ্যুটিংয়ের ফাঁকে আড্ডায় মমতাশঙ্কর ও অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: শৌভিক দে।