হিন্দি সিনেমায় অভিনয় করছেন। সে খবরটা প্রকাশিত হওয়ার পর অনেকেই ফোন করেছিলেন। কিন্তু মায়ামি থেকে একজনই কনগ্র্যাচুলেট করেছিলেন।
তিনি সৃজিত। সৃজিত মুখোপাধ্যায়।
“খবরটা সৃজিতদা আগেই জানত। তবে আনন্দ প্লাস-এ তা বেরোনোর পর ফোন করে কনগ্র্যাচুলেট করাতে আমার খুব ভাল লেগেছিল।”
খবর বলতে ‘মিশর রহস্য’ আর ‘যদি লভ দিলে না প্রাণে’-র নায়িকা ত্রিধা চৌধুরীর ইউটিভি-র মতো প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে তিনটে ছবি করার কনট্র্যাক্ট সই। শ্যুটিং করে ফেলেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘খাদ’-য়ের। তার আগে অফার এসেছিল মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত ‘তেজাব’-এর সিক্যুয়েলে অভিনয় করার। কিন্তু করেননি। জাতীয় স্তরে কয়েকটা বিজ্ঞাপনের শ্যুটিং করেছেন।
তা বলিউডের ইনিংসটা শুরু হল কী করে? ইউটিউবে ত্রিধার কয়েকটা অডিশন টেপ রয়েছে। কয়েক বছর আগেই সেগুলো পোস্ট করা। তার মধ্যে একটাতে ত্রিধাকে দেখা যায় একটা ব্রেক-আপ-য়ের দৃশ্যে অভিনয় করছেন। স্বামী বিদেশে চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। আর দেশে ফেলে আসা স্ত্রী-র ভূমিকায় ত্রিধা।
ইউটিউবে সে ভিডিয়ো দেখলে বোঝা যায় যে বয়স আর অভিজ্ঞতার আন্দাজে বেশ বিশ্বাসযোগ্য ভাবেই অভিনয় করেছেন ত্রিধা। আর সেই ভিডিয়োগুলোই না কি বলিউডের কাস্টিং ডিরেক্টরদের হাতে পড়ে যায়। টুকটাক অফার আসতে থাকে।
কিন্তু ‘তেজাব’-য়ের মতো বড় ছবির সিক্যুয়েলের কাজ করতে রাজি হলেন না কেন? পরিচালক তো সেই ‘তেজাব’খ্যাত এন চন্দ্র। ত্রিধার মুখেই শোনা যায় যে তাঁকে মোহিনীর চরিত্রটা অফার করা হয়েছিল। যে চরিত্র করে মাধুরী দীক্ষিত এত জনপ্রিয় হয়েছেন। মনে হয়নি এ ছবিতে কাজ করলে ‘এক দো তিন’-য়ের মতো আরও একটা হিট গান নিজের ঝুলিতে আসতে পারে?
“হ্যাঁ, লোভ তো ছিলই। মাধুরী দীক্ষিতের জুতোটা পায়ে গলানোর। তবে একটা সিনেমা করতে গেলে তো আরও অনেক কিছুই মাথায় রাখতে হয়। কনট্র্যাক্টের কিছু ব্যাপার ঠিক মনোমত হয়নি। প্রোডাকশন হাউসটাও তো ম্যাটার করে!” বেশ পরিণত অভিনেতার মতো উত্তর দিলেন ত্রিধা।
ষোলো আনা আত্মবিশ্বাস যে ত্রিধার অন্যতম অ্যাসেট, সেটা বুঝতে সময় লাগল না। ফোটোশ্যুট করতে এসে ‘কনফিডেন্টলি’ চেয়ারে বসে পোজ দেন। ওই আত্মবিশ্বাস আছে বলেই ‘তেজাব ২’ ছাড়া আরও একটা হিন্দি ছবির অফার না কি তিনি হাতছাড়া করেন। ‘গুড্ডু কি গান’ বলে একটা হিন্দি ছবিতেও নাকি অভিনয় করার কথা হয়েছিল। শ্যুটিং হওয়ার কথা ছিল কলকাতায়। নায়ক ‘ট্রাফিক’, ‘গো গোয়া গন’ খ্যাত কুণাল খেমু। অনেকে তাঁকে আবার চেনেন সোহা আলি খানের বয়ফ্রেন্ড হিসেবেও। কেন করলেন না সে ছবি? “চিত্রনাট্যটা ভাল লাগেনি!” স্পষ্ট বলেন ত্রিধা।
আজ না-হয় ইউটিভির কনট্র্যাক্টটা এসেছে। কিন্তু তখন তো এ সব ছিল না। কেউ বলেননি হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলো না? “নিশ্চয়ই বলেছিল। তবে আমি ভাবতাম। বলিউড বললেই সে ছবি করতে হবে এমন নয়। ‘মিশর রহস্য’ ওয়াজ ওয়ান্স পোস্টপনড্। খুব মন খারাপ হয়েছিল। শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস, সৃজিতদা, বুম্বাদা এত বড় সুযোগ! সৃজিতদা বলেছিল যে অন্য কোথাও ভাল অফার থাকলে আমি যেন সেটা করি। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরতে রাজি ছিলাম। লয়্যালটি ব্যাপারটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট আমার কাছে,” বলেন ত্রিধা।
প্রথম ছবির সহ-অভিনেতা কর্ণ সিংহ ওয়াহি। টেলিভিশনের দুনিয়ায় কর্ণ পরিচিত মুখ। করেছেন ‘রিমিক্স’-এর মতো সিরিজ। অ্যাঙ্কর করেছেন ‘নাচ বালিয়ে ফাইভ’ থেকে ‘ইন্ডিয়ান আইডল জুনিয়র’। কর্ণর ওপর না কি ছোটবেলা থেকে ক্রাশ ছিল ত্রিধার। “অবশ্যই কর্ণর সঙ্গে ডেব্যু করতে পেরে আমি খুব খুশি,” বলছেন তিনি। মুম্বইতে গিয়ে এ ছবির জন্য এক মাস ধরে স্কেটিং শিখেছেন ত্রিধা। কনট্র্যাক্টে সই করেছেন বলে তিনি এ বিষয়ে কোনও কথাই বলতে পারবেন না। তবে শোনা যাচ্ছে যে ত্রিধার প্রথম ছবির নাম ‘বব্বু কী জওয়ানি’। ত্রিধার মুখে কুলুপ। তবে ইউটিউবে কর্ণর প্রথম হিন্দি ছবির ফার্স্ট লুক পোস্ট করা আছে। বলা হয়েছে অমৃতপাল সিংহ বিন্দ্রার ‘বব্বু কী জওয়ানি’-তেই কর্ণর বলিউডে অভিষেক হচ্ছে। ফার্স্ট লুক-য়ে এক গোছা ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন কর্ণ। সিনেমায় কি তা হলে ত্রিধাকেই তা অফার করছেন তিনি? কনট্র্যাক্টের ঝামেলা। তাই উত্তর দিতে নারাজ ত্রিধা।
চলে যান অন্য প্রসঙ্গে। এমন কোনও বলিউড তারকা আছেন, যাঁর সঙ্গে অভিনয় করতে পারলে ধন্য মনে করবেন নিজেকে? “রণবীর কপূর। হি ব্রিদস্ ভার্সেটালিটি,” একদম ব্লাশ না করেই উত্তর দেন তিনি।
বলিউড ঘিরে এত স্বপ্ন যখন চোখে, তা হলে কি ‘ম্যাক্সিমাম সিটি’তেই শিফট করে যাবেন তিনি? “হ্যাঁ, শিফট করার ইচ্ছে তো আছেই,” বলেন ত্রিধা। পাওলি-ও অভিনয় করেছেন হিন্দি ছবিতে। আজকাল অনেকটা সময় মুম্বইতে কাটান। কখনও পাওলির মতো বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুম্বইতে থাকার কথা ভাববেন? “শিফট করার কথা ভেবেছি। কিন্তু সেটা কোনও অভিনেত্রীকে ফলো করার মতো করে করব না।”
বাড়ি শিফট করা না হয় আলাদা ব্যাপার। কিন্তু অভিনয়ের টিপস? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত আর পাওলি তো বেশ কিছু দিন হল হিন্দি ছবি করছেন। ত্রিধার থেকে বয়সে বড়। অভিজ্ঞতাতেও সিনিয়র। কী ভাবে ওই ইন্ডাস্ট্রিতে চলতে হয় বা অভিনয় নিয়ে কোনও টিপস চাইবেন তাঁদের কাছে? “আমি মনে করি জীবনে এগিয়ে যেতে হলে অরিজিনালিটি দরকার। মৌলিক চিন্তাই এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ঋতুপর্ণাদির সঙ্গে আমার বহু বার দেখা হয়েছে। ওঁর কাজের প্রতি আমার নজর আছে। তবে সব চেয়ে বেশি যেটা দরকার তা হল ভেতর থেকে আসা আত্মবিশ্বাস,” সাফ উত্তর তাঁর।
আর স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়? দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিতে কাজ করেছেন বলিউডে। তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক কেমন? “আমি ওর বোনের চরিত্রে ‘মিশর রহস্য’য়ে অভিনয় করেছি। এই তো সে দিন একটা শ্যুট করলাম একসঙ্গে। স্বস্তিকাদি তো আমায় এই বলে খেপায় যে আমি সারাক্ষণ সেলফি তুলি।”
বয়স অল্প। কিন্তু সেটাই আবার কখনও তাঁর বিরুদ্ধে যেতে পারে? হয়তো খুব ইমপালসিভ হয়ে গেলেন? বা খানিকটা অপরিণত? “একমাত্র সময় বলে দিতে পারে কী হবে। আমার তো মোটে কুড়ি বছর বয়স। লোকে ভাবে আমার বয়স তেইশ। কারণ আই টেন্ড টু উ মেন উইথ মাই কনসার্ন অ্যান্ড মাই লেডি লাইক স্ট্রাইডস। স্কটিশ চার্চে মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে পড়েছি। আমার বয়সি মেয়ে এনার্জেটিক আর ইমপালসিভ? বাজি রেখে বলতে পারি সেটাই লোকের ভাল লাগবে। এখনই তিরিশে পা দেওয়া মেয়েদের মতো ব্যবহার করার দরকার নেই,” এমনই মত ত্রিধার।
তবে পরিণত চরিত্রে অভিনয় করতে তাঁর কোনও অসুবিধে নেই। “আমি নিশ্চিত যাঁদের দরকার তাঁরা ঠিক বোঝেন যে আমি পঁচিশের আশপাশ বয়সের মেয়ের চরিত্রে বেশ অভিনয় করতে পারব,” ত্রিধার কণ্ঠে ফুটে ওঠে সেই আত্মবিশ্বাস।
টলিউডে প্রতিযোগী হিসেবে কাকে দেখেন? মিমি চক্রবর্তী? “আমি নিজের জন্য অন্য রকম একটা জায়গা তৈরি করতে চাই। টাইপকাস্ট হতে চাই না। অন টলিউড, আই উড লাইক টু বি নোন অ্যাজ আ প্লাস্টিসিন হু ক্যান বি ইজিলি মোল্ডেড,” সটান জবাব দিলেন ত্রিধা।
ফিল্মি পরিবারে বড় হয়ে ওঠেননি। বাবা ব্যবসায়ী। টলিউডে পরিবারের সূত্রে কারও সঙ্গে সে রকম ঘনিষ্ঠতা ছোটবেলা থেকে ছিল না। এই ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকার জন্য আলাদা করে কি হোমওয়ার্ক করতে হয়? ঠিক সময়ে কোনটা ঠিক, কার সঙ্গে কতটা মিশতে হবে, কাকে অ্যাভয়েড করতে হবে এ সব হাত ধরে শিখিয়ে দেওয়ার জন্য তো বাড়িতে কেউ নেই। “অ্যাজ দে সে, ইট’স আ চয়েস, নট আ চান্স দ্যাট ডিটারমাইনস ইয়োর ডেস্টিনি। অ্যা’ম হারভেস্টিং দ্য গোল্ডেন চান্স। কোনও ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও কাজ করছি। এটা নিয়ে কি গর্ব করা উচিত নয়?” বলেই হেসে ফেলেন তিনি।
তার পর একটু সিরিয়াস মুখে বলেন, “ধৈর্য আর ডিটারমিনেশন। সাফল্যের জন্য এই দু’টোর উপরই আমি নির্ভর করে এসেছি।”
ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে টিপস নিতে গেলে ত্রিধার ‘গো-টু’ পার্সন হলেন সৃজিত। “আই ও মাই হ্যাপিনেস টু সৃজিতদা। এত ব্যস্ত থাকে। তবু আমাকে ঠিক ডিসিশন নিতে সাহায্য করে। সৃজিতদা থাকতে আর অন্য অ্যাডভাইসর খুঁজে ভিড় বাড়াব কেন?”
প্রশ্ন করেই যেন উত্তরটা বলে দিলেন ত্রিধা।
তবে বলিউডে যত ছবির অফার আসুক না কেন, ত্রিধা একটা ব্যাপারে একদম অন্য রকম থাকবেন বলে ঠিক করেছেন। “কোনও দিন ফ্রন্টাল ন্যুড দৃশ্য করব না,” সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু এই রেস্ট্রিকশন থাকলে তো তাঁকে কেউ ‘প্রোগ্রেসিভ’ নন বলেও ট্যাগ করতে পারেন? চরিত্রের প্রয়োজন থাকলে যদি স্কেটিং করতে পারেন তা হলে চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে ন্যুডিটি নিয়ে তাঁর সমস্যা কোথায়? তিনি কি তা হলে এই দর্শনে বিশ্বাসী যে সেন্সুয়ালিটি দেখাতে গেলে সব সময় ন্যুডিটির প্রয়োজন হয় না? “আই অ্যাম ওকে উইথ স্মুচিং। ‘মিশর রহস্য’য়ে তা ছিল। অ্যাস্থেটিক্যালি শ্যুট করা হয়েছিল। অনেকেই বলেন শাড়ি পরেও আমাকে সেন্সুয়াল লাগে। স্কিন শো দরকার হয় না। সেন্সুয়ালিটি দেখানোর জন্য একটা ড্যাশ অব রেড লিপস্টিক ইজ এনাফ!” পাল্টা জবাব তাঁর।
‘টেক ওয়ান’ দেখেছেন? ছবিতে স্বস্তিকা যে চরিত্রটা করেছেন সেই রকম কোনও চরিত্রে অফার পেলে কী করবেন? “না, এখনও দেখা হয়নি। চরিত্রটা সম্পর্কে বেশি জানি না। লুকস্ প্রোমিসিং দো। এটুকু বলতে পারি, সেক্স-ওরিয়েন্টেড ছবি ছাড়াও অনেক ভাল স্ক্রিপ্ট থাকে। আই উইশ টু লিমিট মাইসেল্ফ টু রোলস্ দ্যট সি মি ইন মাই মিড টোয়েন্টিজ অ্যান্ড নট গো ওভারবোর্ড অ্যাট দ্য মোমেন্ট।”
এ দিকে কলকাতাতে গুজব যে, সৃজিত ছাড়াও ত্রিধার আরও এক বিশেষ বন্ধু আছেন যিনি তাঁকে সব সময় গাইড করেন। “জানি। আকাশের কথা বলছেন। ওর বাবা অগ্নিদেব চট্টোপাধ্যায়কে ভাল করে চিনি। আকাশ আমার খুব ভাল বন্ধু হলেও কেরিয়ারের এ জায়গায় এসে কাজ আমার একমাত্র কমিটমেন্ট। এখন আমি অ্যাবসোলিউটলি সিঙ্গল,” বলছেন ত্রিধা।
এ কথা ইন্ডাস্ট্রি বিশ্বাস করবে তো? বলবে না তো যে এ ক্ষেত্রে ভাল অভিনয় করে উতরে দিলেন? “না, বলবে না,” বলেই লাস্ট শটটা দিতে চলে গেলেন।
ছবি: সোমনাথ রায়
পোশাক: অভিষেক দত্ত
মেক আপ: অনিরুদ্ধ চাকলাদার
‘হট’কারি
পছন্দের হটেস্ট নায়িকা
করিনা কপূর
হটেস্ট নায়ক
‘রামলীলা’র রণবীর সিংহ
হট, হট, হট মনে হলে কী করেন?
পুলে গিয়ে ডুব দিই। মৎস্যকন্যা হয়ে যাই
কখন নিজেকে সব থেকে ‘হট’ লাগে?
শুধু লাল লিপস্টিক পরলেই আমি হট
কোনও দিন লিভ-ইন করবেন?
বিয়ের ঠিক আগে হলে ঠিক আছে। নইলে নয়
কোনও দিন যা পর্দায় করবেন না?
ফ্রন্টাল ন্যুডিটি
কী ভাবে পরিচিত হতে চান না?
একটা ধাঁচে যেন আমাকে না ফেলা হয়। আই বিলিভ দেয়ার ইজ মোর টু আ প্রিটি ফেস
টলিউডে প্রতিদ্বন্দ্বী
মিমি চক্রবর্তী
ভেঙ্কটেশ-এর নায়িকা। পুজোয়
রিলিজ দেবের সঙ্গে ‘যোদ্ধা’
ঋধিমা ঘোষ
প্রতিভাবান। সব সময়
নজরে আছেন