লাইটস ক্যামেরা সৌমিক

‘চাঁদের পাহাড়’ থেকে ‘মিশর রহস্য’ । অপর্ণা সেন থেকে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। একের পর এক বাংলা ছবি কথা বলে উঠছে তাঁরই লেন্সের মায়ায়। ইন্দ্রনীল রায়-এর প্রশ্নের মুখোমুখি আজকের ব্যস্ততম সিনেমাটোগ্রাফার সৌমিক হালদার‘চাঁদের পাহাড়’ থেকে ‘মিশর রহস্য’ । অপর্ণা সেন থেকে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। একের পর এক বাংলা ছবি কথা বলে উঠছে তাঁরই লেন্সের মায়ায়। ইন্দ্রনীল রায়-এর প্রশ্নের মুখোমুখি আজকের ব্যস্ততম সিনেমাটোগ্রাফার সৌমিক হালদার

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৪ ২১:৫৮
Share:

ইন্ডাস্ট্রিতে লোকে বলে প্রসেনজিৎ, দেব, জিৎ-য়ের ডেট পাওয়া যায় কিন্তু সৌমিক হালদারের ডেট পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

Advertisement

না, না। সেই রকম কিছু নয়। একদমই তাই নয়। আমি ভাগ্যবান বলতে পারেন যে অনেকে আমার সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক। পুরোটাই ভাগ্য।

Advertisement

মাসে ক’টা ছবির অফার আসে?

তা মাসে দু’টো থেকে তিনটে ছবির অফার তো আসেই। কিন্তু সময়ের অভাবে করতে পারি না।

এ রকম নিরামিষ উত্তর দিলে কিন্তু ইন্টারভিউ বন্ধ করে দেওয়া উচিত।

না, সত্যি বলছি। আমি মোটামুটি একটা কাজ করতে পেরেছি যার জন্য....

মোটামুটি কাজ করলে তো ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর ক্যামেরাম্যানের তকমাটা লাগত না আপনার ওপর?

এক নম্বর জানি না। তবে এইটুকু বলতে পারি, আমি অসম্ভব এনার্জেটিক। খুব ডিসিপ্লিনডও। আর যে পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করছি, মানে রিনাদি, কৌশিকদা, কমলদা বা সৃজিত— তাঁদের চিত্রনাট্যের প্রতি আমি ভিস্যুয়াল জাস্টিস করতে পেরেছি। এই পরিচালকদের সঙ্গে আমার ওয়েভলেংথেও মেলে। এ ছাড়া সত্যি আমার কোনও কন্ট্রিবিউশন নেই।

যা ডিপ্লোম্যাটিক উত্তর দিচ্ছেন, তাতে স্বচ্ছন্দে আপনাকে ডিপ্লোম্যাসির অস্কার দেওয়া যায়।

আমি এর বাইরে কী বলব বলুন!

অনেক কিছুই বলা যায়।

যেমন?

অপর্ণা, কৌশিক, কমলেশ্বর, সৃজিতকে র‌্যাঙ্ক করুন।

এটা আমি কী করে বলব বলুন....! র‌্যাঙ্কিং দিতে পারব না।

আচ্ছা র‌্যাঙ্কিং দিতে হবে না। এঁদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতাটা বলুন। প্রথমে সৃজিত...

সৃজিত আক্রমণাত্মক। অ্যাগ্রেসিভ স্টোরি টেলার। এক্সপেরিমেন্টও করতে চায় প্রচুর। ও নিজেকে বলে মুডি, একসেনট্রিক, জিনিয়াস। ওটাই বোধ হয় ওর সঠিক মূল্যায়ন।

সৃজিত নিজেই বলে ও মুডি, একসেনট্রিক, জিনিয়াস?

না, ও নিজে না মানে আমি আর ওর অ্যাসিস্টেন্ট সৌম্য মিলে ওর নাম দিয়েছি মুডি, একসেনট্রিক, জিনিয়াস। সেটা ও মেনে নিয়েছে।

লোকে তো বলে সৃজিত এত এক্সপেরিমেন্ট করে যে, সব ছবিতেই ওভারশ্যুট করে ফেলে।

সেটা হয়তো এক্সপেরিমেন্ট করতে চাইলে একটুআধটু হয়েই থাকে।

আর সৃজিত যখন একই শটে তিনটে টেক নেয়, মনে হয় কী বিরক্তিকর!!

হ্যাঁ। তা যে কখনও কখনও মনে হয় না তা নয়। অবশ্যই হয়।

আর অপর্ণা সেন?

রিনাদির সঙ্গে শ্যুটিং করার মজা হল রিনাদি এগজ্যাক্টলি জানেন সেদিন তিনি কী শ্যুট করবেন। পুরোটাই তাঁর খাতায় লেখা থাকে। আর রিনাদির মধ্যে একটা ইয়াং এনার্জি আছে, যেটা সেটে সবাইকে চনমনে রাখে। আর একটা বড় গুণ রিনাদির, যখন লাইট করছি তখন একেবারেই তাড়া দেন না। রিনাদি হলেন নন-মুডি জিনিয়াস।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় কেমন?

কৌশিকদা হল ক্রিয়েটিভ জিনিয়াস। কৌশিকদা তো পেশায় শিক্ষক ছিলেন। তাই ওঁর মধ্যে একটা অদ্ভুত ডিসিপ্লিন কাজ করে। কৌশিকদার টিমটাও অসাধারণ। ওঁর অ্যাসিস্টেন্টরা বিশেষ করে। আর শ্যুটিংয়ের সময় যদি প্ল্যান ‘এ’ কাজ না করে তা হলে কৌশিকদার প্ল্যান ‘বি’ বা প্ল্যান ‘সি’ সব সময় রেডি থাকে। কখনও কখনও সেগুলো অরিজিন্যাল প্ল্যানের থেকেও ভাল হয়। কী করে যে একজন এত সহজে ভাবতে পারে কে জানে...

আর কমলেশ্বর?

কমলদা ডিসিপ্লিনড তো বটেই। না হলে ‘চাঁদের পাহাড়’ তৈরি করা যেত না। কমলদা মেটিকিউলাস জিনিয়াস। কিন্তু যে ব্যাপারটা অনেকেই জানে না কমলদা হল যাকে বাংলায় বলে ‘ক্যাওড়া।’ ওর সঙ্গে না থাকলে, সময় না কাটালে আপনি বুঝবেন না কী পরিমাণ ইয়ার্কি মারতে পারে কমলদা! আর কমলদা এক্সপেরিমেন্ট করতে ভয় পায় না।

গত বছরের শুরুতে পিরামিডের সামনে শ্যুট করলেন। বছরের শেষে ব্ল্যাক মাম্বার সামনে। কোনটা বেশি চ্যালেঞ্জিং?

দু’টো আলাদা আলাদা ভাবে চ্যালেঞ্জিং। ‘মিশর রহস্য’র শ্যুটিংয়ে কখনও বালির ঝড় আসছে, মানুষ কথা বুঝছে না। তার মধ্যে ভাষার সমস্যা। অন্য দিকে ‘চাঁদের পাহাড়’-এর শ্যুটিং ছিল রিস্ক-য়ের শেষ কথা। আপনি ক্যামেরায় চোখ দিয়ে রেখেছেন হঠাৎ লেন্স চেটে দিয়ে গেল সিংহ। দুটোই ফ্যাসিনেটিং।

আচ্ছা, সৃজিত না কমলেশ্বর? কার সঙ্গে আপনি বেশি কমফর্টেবল?

(হেসে) আবার এ সব কেন...

আচ্ছা, তা হলে বলুন সৃজিতের সঙ্গে ‘চতুষ্কোণ’ নিয়ে কী ঝামেলা হয়েছিল?

বলতেই হবে সেটা?

বলবেন না? আপনার চলে যাওয়াকে সৃজিত ‘আনকাইন্ডেস্ট কাট’ বলে স্টেটাস আপডেট দিলেন ফেসবুকে।

দেখুন, সৃজিতের সঙ্গে আমার কোনও শত্রুতা নেই। ওর ‘জাতিস্মর’য়ের পর ‘চতুষ্কোণ’ শুরু করতে দেরি হচ্ছিল। দুটো ডেটে শ্যুট শুরু হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেটা হয়নি। আর আমার পক্ষে বাড়িতে বসে থাকা সম্ভব ছিল না। সেটা অনেকটা আর্থিক কারণেই। তাই আমি ‘চতুষ্কোণ’ থেকে সরে এসেছিলাম। কিন্তু সৃজিতের পরের ছবি আমি করছি। তবে একটা কথা বলি, সৃজিতকে সেটে কন্ট্রোলে রাখতে হয়, একটা চেকে রাখতে হয়। সেই কাজটা সব চেয়ে ভাল করেন বুম্বাদা।

মানে সৃজিত ‘বুম্বাদা’কে ভয় পান?

হ্যাঁ। মানে একটু পায়। (হাসি)

আচ্ছা, ইন্ডাস্ট্রির অন্য সিনেমাটোগ্রাফারদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নাকি ভাল নয়? তাঁরা বলেন আপনি শুধু প্রযোজক-পরিচালকদের ‘হ্যাঁ’-তে ‘হ্যাঁ’ মেলান।

আমার মনে হয় না এটা ঠিক। আর কে বলল আমার সঙ্গে অন্য সিনেমাটোগ্রাফারদের সম্পর্ক খারাপ? অভীক মুখোপাধ্যায়কে আমি অসম্ভব শ্রদ্ধা করি। অভীকদা যেখানে পৌঁছতে পেরেছেন তার অর্ধেক উচ্চতায় পৌঁছতে পারলেও আমি ধন্য হয়ে যাব। শীর্ষ আমার ফিল্ম ইনস্টিটিউটের সিনিয়র। ওর সঙ্গেও সম্পর্ক ভাল।

শীর্ষ রায়ের কাজ কেমন লাগে?

শীর্ষর সাম্প্রতিক কালের কাজ ওর আগের কাজগুলোর থেকে বেশি ভাল লাগছে আমার।

অনেকে বলে আউটডোর শ্যুটিংয়ে আপনি ব্রিলিয়ান্ট। কিন্তু ইন্ডোরে লাইটিং আর ক্যামেরার কাজে আপনি এখনও অত পারদর্শী নন।

আমার মনে হয়। তবে কিছু মানুষের যদি মনে হয়ে থাকে, আমি নিশ্চয়ই সেই দিকটায় নজর দেব।

শোনা যাচ্ছে আপনি পরিচালনায় আসছেন?

ইচ্ছে তাই। দু’টো চিত্রনাট্যর কাজ চলছে।

কাস্টিং?

বুম্বাদা আমাকে পরিচালনায় আসার আইডিয়াটা দেন। তাই বুম্বাদাকে থাকতেই হবে ছবিতে। এ ছাড়া দেবের সঙ্গেও কথাবার্তা হচ্ছে।

এ তো বিরাট কাস্টিং! একই ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও দেব?

(হাসি) দেখি, ইচ্ছে তো আছে।

কাল পরিচালক হলে অপর্ণা সেন কী কৌশিক আপনাকে সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে নেবেন মনে হয়?

আমার তো মনে হয় না কোনও অসুবিধা হবে।

কী বলছেন? কোনও পরিচালক এমন একজন ক্যামেরাম্যানের সঙ্গে কাজ করতে স্বছন্দ হবেন যিনি নিজে পরিচালক?

আমি ঠিক করেছি পরিচালনায় আসার পর বছরে একটা ছবি পরিচালনা করব। আমার সঙ্গে সবার সম্পর্ক খুব ভাল। সবাই আমাকে সাহায্য করবেন বলেই আমার ধারণা।

মানে ডিপ্লোম্যাসির অস্কারটা নিয়েই যাবেন বাড়ি?

হাহাহাহাহাহা....

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

আনাচে কানাচে

মধুর-ভাষণ: লেডিজ স্টাডি গ্রুপ-য়ের এক অনুষ্ঠানে শহরে মধুর ভান্ডারকর।

কার ‘কার’ দেখো: সদ্য কেনা বিএমডব্লিউ-য়ের সঙ্গে অনীক ধর।

ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement