‘যুদ্ধ’র প্রস্তুতি

চোদ্দ বছর আগে টেলিভিশনের দুনিয়ায় ভোল পাল্টে দিয়েছিলেন ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ করে। নতুন অবতারে ছোট পর্দায় আবার ফিরছেন অমিতাভ বচ্চন। লিখছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত।পরের মাস থেকেই টেলিভিশন দুনিয়ায় শুরু হতে চলেছে ‘যুদ্ধ’। না, এ কোনও টেলিভিশন রিয়ালিটি শোয়ের তারকা ঝগড়া নয়। এ হল সোনি এন্টারটেনমেন্ট চ্যানেল-এ অমিতাভ বচ্চন অভিনীত নতুন টেলিভিশন সিরিজ। ছোট পর্দায় এর আগে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ হোস্ট করেছেন অমিতাভ বচ্চন। প্রথম প্রথম দর্শকের মধ্যেও সংশয় ছিল যে এত বড় স্টার ছোট পর্দায় এসে কী করবেন। কিন্তু ইতিহাস অন্য কথা বলে।

Advertisement

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৪ ০০:০১
Share:

পরের মাস থেকেই টেলিভিশন দুনিয়ায় শুরু হতে চলেছে ‘যুদ্ধ’। না, এ কোনও টেলিভিশন রিয়ালিটি শোয়ের তারকা ঝগড়া নয়। এ হল সোনি এন্টারটেনমেন্ট চ্যানেল-এ অমিতাভ বচ্চন অভিনীত নতুন টেলিভিশন সিরিজ।

Advertisement

ছোট পর্দায় এর আগে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ হোস্ট করেছেন অমিতাভ বচ্চন। প্রথম প্রথম দর্শকের মধ্যেও সংশয় ছিল যে এত বড় স্টার ছোট পর্দায় এসে কী করবেন। কিন্তু ইতিহাস অন্য কথা বলে। প্রথম সিজনেই শোয়ের জনপ্রিয়তা দেখে অনেকেই বলেছিলেন যে, অমিতাভ বচ্চনয়ের জাদুস্পর্শে ছোট পর্দা-ই বড় হয়ে গিয়েছে।

অনেক দর্শকের মতে আগামী মাস থেকে শুরু হতে পারে টেলিভিশন দুনিয়ার আর এক বিপ্লব। যার অপর নাম অমিতাভ বচ্চনের ‘যুদ্ধ’।

Advertisement

সিরিজের প্রথম প্রোমো ইউটিউবে আসার পর ৩ লক্ষ ৯৬ হাজারের বেশি দর্শক সেটা দেখে ফেলেছেন। অনেকেই তা দেখে মুগ্ধ। অমিতাভ-ভক্তরা বলছেন যখন প্রোমোতে তাঁদের ‘বস’ বলে ওঠেন ‘ইয়ে খেল অব আপকো মেরি তরহা হি খেলনা পড়েগা’, তখন তাঁদের মনে হয় এ যেন ছোট পর্দায় সিনেমা। এ দিকে বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে গিয়ে ঘণ্টা বাজিয়ে এই সিরিজের প্রচার শুরু করেছেন অমিতাভ। তার সঙ্গেই আবার মুম্বইয়ের ভান্ডুপে চলছে ‘যুদ্ধ’র ক্লাইম্যাক্সের শ্যুটিং। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত।

তা সিরিজের নাম যখন ‘যুদ্ধ’, আসল যুদ্ধটা কি ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র সঙ্গে? নাকি অনিল কপূরের ‘২৪’-এর সঙ্গে? তবে সিরিজের সঙ্গে যুক্ত কেউই মানতে রাজি নন সে কথা। তাঁদের মতে টেলিভিশন ভিউয়ারশিপ নিয়ে কোনও যুদ্ধ নেই। কিন্তু যুদ্ধের কথা যদি বলতেই হয়, তা হলে সেটা ভারতীয় টেলিভিশনের চেহারাটা বদলে ফেলার যুদ্ধ। আর ‘কেবিসি’? পরিচালক ঋভু দাশগুপ্ত বলছেন, “প্রথম দিন থেকে দেখেছি। তবে সব সময় ‘কেবিসি’ দেখতাম উনি সেটা করছেন বলে।”

ভিউয়ারশিপের যুদ্ধ না থাকলেও অমিতাভ বচ্চন নিজেও স্বীকার করেছেন তিনি যথেষ্টই নার্ভাস এই সিরিজকে নিয়ে। যেখানে তিনি যুধিষ্ঠির শিকাওয়ারের ভূমিকায়। যে এক সাইকোলজিকাল যুদ্ধের মধ্যে পড়ে যায়। তার সঙ্গে যোগ হয় শারীরিক আর মানসিক টানাপড়েনও। পাশাপাশি চলতে থাকে ওর পরিবারের সঙ্গে একটা অনুভূতির সংঘাত। আর আছে রাইভালদের সঙ্গে একটা কর্পোরেট যুদ্ধ। সিরিজটা না কি এমন একটা জার্নি, যার পটভূমিতে রয়েছে একটা শহর যেখানে অনেক কন্সট্রাকশন হচ্ছে। অনেকটা ১০ বছর আগের নয়ডার মতো। কলকাতার প্রেক্ষিতে দেখলে পাঁচ বছর আগের রাজারহাটের সঙ্গেও তুলনা করা যায়।

সিনেমায় অমিতাভ বচ্চনকে অনেকে ডিরেক্ট করে থাকলেও, টেলিভিশন সিরিজে তাঁকে এর আগে কেউ পরিচালনা করেননি। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই ঋভু খুবই উত্তেজিত। অমিতাভের সঙ্গে প্রথম দিনের সাক্ষাৎকারের কথা বলতে গিয়ে পরিচালক জানান, “সব বাঙালির কাছেই অমিতাভ বচ্চন হলেন ভগবান। প্রত্যেকেই ভাবে যে, সে-ই ওঁর সবচেয়ে বড় ফ্যান বা ভক্ত। আমিও ওঁদের দলে পড়ি।”

কলকাতায় থাকতে ঋভুদের একটা গ্রুপ ছিল। ঠিক করা ছিল যে, অমিতাভের কোনও ফিল্ম রিলিজ করলে নবীনাতে গিয়ে ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখতেই হবে। প্রথম যে দিন অমিতাভের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হয় অনুভূতিটা না কি ছিল ভগবান-দর্শনের সমান।

আর প্রথম যে দিন অমিতাভকে ডিরেক্ট করলেন? “সকালে উঠে ভেবেছি যে, আমি অমিতাভ বচ্চনের মতো এক ফেনোমেননকে ডিরেক্ট করতে যাচ্ছি। ঘাম বেরিয়ে গিয়েছিল,” স্বীকার করছেন পরিচালক।

প্রচুর পর্বের শ্যুটিং করছেন তিনি। তবে অভিনয় ছাড়াও সেটে অমিতাভ অন্য অনেক ইনপুটসও দিয়ে থাকেন। প্রোগ্রামের কনটেন্ট সম্পর্কে উনি একদম ওয়াকিবহাল। প্রত্যেক দিন শ্যুটিংয়ের পরে নাকি বাড়ি গিয়ে যা শ্যুটিং হয়েছে তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন। যদি মনে করেন কোনও সাজেশন দিলে ব্যাপারটা ভাল হবে, সেগুলো ইউনিটের সঙ্গে আলোচনা করে নেন। এক কথায় যাকে বলে পুরোপুরি পেশাদার। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে কলকাতা নিয়েও আলোচনাও যে হয় না, তা নয়। এমনকী বাংলাতেও কথা বলেন মাঝেমধ্যে।

নিজের অভিনয়ের দৃশ্যগুলো রিহার্সাল করে নেন। তার সঙ্গে অন্যদেরও সাহায্য করেন। বিশেষ করে, প্রথম বার টিভিতে কাজ করতে আসা থিয়েটার অভিনেতাদের। নতুন কোনও অভিনেতার পক্ষে অমিতাভের সঙ্গে প্রথম বার কাজ করাটা চাড্ডিখানিক কথা নয়। যাতে তাঁদের কোনও অসুবিধা না-হয় তাই এগিয়ে এসে ওঁদের জড়তা কাটানোর জন্য আলাদা করে রিহার্সালও করেন।

আরও একটা ব্যাপার রয়েছে। অভিনেতারা সাধারণত নিজেদের অভিনয় কী করলে ভাল হবে সেটা নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু অমিতাভ ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাকশন সম্পর্কেও খেয়াল রাখেন। হয়তো উনি একটা ডায়ালগ বলছেন। তখন পাশ দিয়ে কেউ হেঁটে গেল বা পিছনে কেউ হাত নাড়ল। এগুলো দৃশ্যটাকে কী ভাবে ইমপ্যাক্ট করবে সেটা নিয়েও ওঁর খেয়াল থাকে। সামগ্রিক ভাবে কী করলে একটা দৃশ্যকে উন্নত করা যায় সেটার চেষ্টা করেন।

অমিতাভ ছাড়াও এই সিরিজে আছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি, কেকে মেনন এবং সারিকার মতো নামীদামি অভিনেতারা। সঙ্গে আছেন পরিচালক তিগমাংশু ধুলিয়া। তিনি এখানে অভিনেতার ভূমিকায়। ওঁদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? “কাস্টিং ডিরেক্টর মুকেশ ছাবড়া দারুণ দারুণ সব অভিনেতাকে বেছেছেন। তাই সব টেরিফিক পারফর্ম্যান্স দেখতে পাবেন ‘যুদ্ধ’ সিরিজে। থিয়েটার থেকে অনেক ভাল ভাল অভিনেতাদের নিয়েছেন। নওয়াজ হল ইন্সটিঙ্কটিভ আর স্বতঃস্ফূর্ত অভিনেতা। আমি অনেক আগে থেকেই কেকে মেননকে চিনতাম। সুপার্ব মানুষ। এ সময়ের ট্যালেন্টেড অভিনেতাদের মধ্যে একজন,” বলছেন পরিচালক।

আর সারিকা? উনি এখানে অমিতাভের প্রথম স্ত্রীর ভূমিকায়। সিরিজে তাঁর নাম গৌরী। “সারিকাজি ভীষণ ওয়ার্ম। আমার থেকে বয়সে অনেক বড়। তাই আমার সঙ্গে অনেক আগে থেকে এমন ভাবে মেশেন যাতে মনে হয় উনি আমার বন্ধু। ওঁর অভিনয় একদম ত্রুটিহীন,” বলছিলেন ঋভু।

প্রশ্ন উঠেছে অনিল কপূরের ‘২৪’য়ের থেকে ‘যুদ্ধ’ কতটা আলাদা তা নিয়েও। সংক্ষেপে এর উত্তর দিতে গিয়ে ‘টিম যুদ্ধ’ একটা নামই করছে। অমিতাভ বচ্চন। কারণ? ভারতীয় টেলিভিশনে এই প্রথম মিলেনিয়ামের সুপারস্টারকে দিয়ে একটা সিরিজ হচ্ছে। এই সিরিজে বিনোদনের জন্য না কি সব ধরনের এলিমেন্ট রয়েছে— পরিবার, নাটক, রাগ, থ্রিল, বিশ্বাসঘাতকতা। অনিল কপূরের ‘২৪’-এর সঙ্গে তুলনায় না গিয়ে, ‘টিম যুদ্ধ’ বলছে, এটা একদম স্বয়ংসম্পূর্ণ একটা সিরিজ।

বিদেশে এত সিরিজ হয়। প্রোমো দেখে ছিদ্রান্বেষীরা বলছেন ‘যুদ্ধ’ হয়তো কোনও বিদেশি সিরিজ থেকে অনুপ্রাণিত। এ যুক্তি নাকচ করে দিচ্ছেন সিরিজের সবাই। তাঁদের মতে সিরিজটা না কি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একদম ভারতীয়। পরিচালক অনুরাগ কশ্যপ এই সিরিজের মেন্টরের ভূমিকায়। মাঝে মধ্যে শ্যুটিংয়ে আসেন। যা শ্যুট করা হয় তাতে উনি ‘ফিনেস’ যোগ করেন। পরিচালক সুজিত সরকার এই সিরিজের ক্রিয়েটিভ কনসালট্যান্ট। ইউনিটের সবার কথা অনুযায়ী দারুণ উৎসাহ দিচ্ছেন সেটের সবাইকে।

ঋভু এর আগে নাসিরুদ্দিন শাহকে নিয়ে কলকাতায় ‘মাইকেল’ বলে একটা ছবি শ্যুট করেছেন। সেটা এখনও মুক্তির অপেক্ষায়। অমিতাভ বচ্চন আর নাসিরুদ্দিন শাহ-এর মতো দুই প্রবাদপ্রতিম অভিনেতাকে পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা কী রকম? “আমাদের সময়কার দুই কিংবদন্তি অভিনেতা এঁরা। দু’জনেই ব্রিলিয়ান্ট। আবার আলাদাও। দু’জনেই দারুণ পেশাদার। অমিতাভ বচ্চনের মধ্যে সুপার হিউম্যান হওয়ার কোয়ালিটিটা রয়েছে। তবে এটা বললেও হয়তো আন্ডারস্টেটমেন্ট হবে!” জানান পরিচালক।

কলকাতার টেলিভিশন দুনিয়ায় ঋভুর বাবা রাজা দাশগুপ্ত অনেক কাজ করেছেন। মা চৈতালি দাশগুপ্ত টেলিভিশন জগতের আইকন। ওঁদের কোনও ইনপুট নিয়েছেন টেলিভিশনে কাজ করতে গিয়ে? উত্তরে উনি বলেন, আজ পর্যন্ত যা করেছেন, তা ওঁদের শিক্ষা আছে বলেই সম্ভব হয়েছে। আলাদা করে ডিসকাস করতে হয়নি।

কিছু দিন আগে তাঁর ঠাকুরমা সোনালি দাশগুপ্ত মারা গেলেন ইতালিতে। ছ’দশক আগে সোনালির বিবাহিত প্রেমিক রবের্তো রোসেলিনির সঙ্গে চলে যাওয়া নিয়ে নানা লেখালিখি হয়েছিল গোটা বিশ্বজুড়ে। মৃত্যুর পরেও তাঁকে নিয়ে অনেক লেখালিখি হয়েছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কলিগরা কি তাঁর সিনেম্যাটিক লিনিয়েজ সম্পর্কে খবর রাখেন? “বাবা-মা আর পরিবারের কাছ থেকে আমি ঠাকুরমার কথা শুনেছি। ওঁকে নিয়ে আমার স্মৃতি সেগুলো ঘিরেই। ওঁর সঙ্গে কোনও দিন সাক্ষাৎ দেখা হয়নি। যাদের সঙ্গে ক্লোজলি কাজ করি, তারা আমার সিনেম্যাটিক লিনিয়েজের খবর রাখে। তবে আমার কী মনে হয় জানেন? একজন শিল্পীর পরিচয় আসে তার নিজের কাজ দিয়ে। পূর্বপুরুষরা কী করেছেন, তা দিয়ে নয়,” বলছেন ঋভু।

অবশ্য সেই কাজ কেমন হচ্ছে, জানতে হলে চোখ রাখতে হবে ছোট পর্দার ‘যুদ্ধ’র দিকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement