যাত্রা নয় সিত্যটা দেখাই

ছবির প্রচারের জন্য অ্যান্টার্কটিকা পর্যন্তও হেঁটে যেতে পারেন পরিচালক-অভিনেতা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁর মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত ছবির প্রচারের জন্য অ্যান্টার্কটিকা পর্যন্তও হেঁটে যেতে পারেন পরিচালক-অভিনেতা শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তাঁর মুখোমুখি প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০০:০৫
Share:

যেখানে বহু বাংলা ছবি আজকাল চলছে না, সেখানে চতুর্থ সপ্তাহেও ‘রামধনু’ দর্শক টানছে...
এর একটাই কারণ। বিষয়বস্তু। দর্শক নিজেদের সমস্যাগুলো বড় পর্দায় দেখছে। তার সঙ্গে পারফেক্ট কাস্টিং। গার্গী (রায়চৌধুরী)-র অভিনয় লোকের দারুণ লেগেছে। রচনা (বন্দ্যোপাধ্যায়)-কে এই রকম চরিত্রে কোনও দিন বাংলা ছবিতে কেউ দেখেনি।

Advertisement

তবে কিছু দর্শক এটাও বলছেন যে, আপনি মোটা তুলি দিয়ে ক্যানভাসে রং করার পক্ষপাতী। মধ্যবিত্ত বাঙালির সমস্যাগুলোকে বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নেন বলে দর্শকের ছবির আইডিয়াটা দারুণ লাগে। তবে মেকিংটার সঙ্গে যাত্রার মিল রয়েছে...
যাত্রা করলে চার বছরে চারটে ছবি এ রকম সাফল্য পেত না। পর্দায় সত্যিটা দেখানোর জন্য এটা সম্ভব হয়েছে। ‘ইচ্ছে’তে যে ভাবে সমদর্শী ভাতের থালা ছুড়ে দেয়, সে তো চরম বাস্তব। এগুলো আমরা দীর্ঘদিন ধরে অ্যাভয়েড করে গিয়েছি। অন্য ছবির চরিত্ররা গলা নামিয়ে বি-ফ্ল্যাটে ঝগড়া করে। ‘বাড়িওয়ালি’র সময় এই নিয়ে ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল। ‘ইচ্ছে’তে সোহিনীর অভিনয় অনেকের লাউড লেগেছে। তবে তারা এটাও বলেছে যে দেখলে ভয় লাগে। সিনেমা সম্পর্কে দর্শকের নানা ধরনের রিঅ্যাকশন থাকবেই। এমন মানুষ আছেন যাঁদের ঋত্বিক ঘটকের ছবি দেখে লাউড লাগে। কিন্তু ওটা ওঁর স্টাইল। অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক তো অনেকের লাউড লাগত। ‘পাপপুণ্য’ দেখে একজন গ্রিনরুমে এসে ওঁকে বলেছিলেন একটু বাড়াবাড়ি লেগেছে। অজিতেশবাবু তখন বলেছিলেন, “সত্যিটা বেশি লাগছিল, তাই না? নিজেকে দেখে ভয় লাগছিল?” আমাদের ছবিতেও তাই। বড্ড বেশি সত্যি আছে। ‘রামধনু’র লাল্টু দত্ত হল মেজরিটি। অর্ধেক লোক বলে বিকম, কিন্তু বি কম (পাস)টা বলে না।

ফিল্মের একটা দৃশ্যে ‘সিবলিং রাইভালরি’ নিয়ে এক্সটেম্পো বলার বদলে লাল্টু ইভনিং লাইব্রেরি নিয়ে বলে চলে। এ রকম একটা আইডিয়া আপনার মাথায় এল কী করে?
এটা একদম সত্যিকারের ঘটনা। আমি এ রকম একজনকে চিনি!


‘রামধনু’র সাফল্য থেকে আপনার সবচেয়ে বড় পাওনাটা কী?
‘মুক্তধারা’, ‘অলীক সুখ’ আর ‘রামধনু’র পরে বুঝেছি একটা টিম তৈরি হয়েছে।

তবে ‘রামধনু’র ক্ষেত্রে ঋতুপর্ণার শুভেচ্ছা থাকলেও উনি আর আপনার টিমের সক্রিয় সদস্য থাকলেন না...
না, নেই তো।

এতে আপনার অবস্থানের কতটা অসুবিধে হচ্ছে? আপনার টেবিলের পাশে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আপনার ছবিটা বাঁধিয়ে রাখা আছে। এ সব তো ঋতুপর্ণা ছাড়া হত না...
হত না তো। ওর বিপুল পরিচিতি আমার সিনেমাকে সাহায্য করেছে। ওর জন্য আমি প্রযোজক পেয়েছি। আমি ৯৯ ভাগ ভাল যদি একজন মানুষের থেকে পাই, তা হলে ১টা মন্দ নিয়ে মাথা ঘামাবো না। তবে এটা বলব ‘রামধনু’ প্রমাণ করেছে যে ঋতুপর্ণা বাদ
দিয়ে শিবপ্রসাদের নিজস্ব একটা আইডেন্টিটি আছে। আমার ছবি নিজের তাগিদে চলে। ‘রামধনু’র ইনিশিয়াল ইজ বিগার দ্যান ‘অলীক সুখ’ আর ‘মুক্তধারা’।

Advertisement


তার মানে কি বলছেন যে ঋতুপর্ণা ছাড়া আপনার ছবির ইনিশিয়াল সন্তোষজনক হতে পারে?
এই ইনিশিয়ালটা কিন্তু শুধু ‘রামধনু’র গুণে পাচ্ছে না। এর পিছনে ‘মুক্তধারা’, ‘অলীক সুখ’-এর জায়গাটা রয়েছে। ব্যাপারটা এ ভাবে দেখুন আজ কর্ণ জোহর ইন্ডিভিজুয়ালি কাজ করছে। শাহরুখও তাই করছে। কিন্তু কর্ণ বলবেন না যে তাঁর কেরিয়ারে শাহরুখের অবদান ছিল না। শাহরুখ খানেরও একটা কর্ণ-র দরকার ছিল। ঋতুপর্ণার কেরিয়ারের দশটা ভাল সিনেমার নাম বলা হলে তার মধ্যে ‘মুক্তধারা’, ‘অলীক সুখ’য়ের নাম আসে। তাতে আমার গর্ব হয়। তবে ‘রামধনু’ প্রমাণ করল যে দর্শক আমার ছবি দেখবে বলেই হলে এসেছে।

মানে বলছেন আপনার ছবির তারকা আপনারা নিজেরা?
হ্যাঁ, সেটা হয়েছে। এর ফলে আমরা সাহসী হতে পারব। বাণী বসুর ‘ট্রেকার্স’য়ের স্বত্ব নিয়েছিলাম কয়েক বছর আগে। ৬টা ছেলেমেয়ের গল্প। এখন ভাবতে পারি যে ওটা বানালে দারুণ ইনিশিয়াল নেবে। ঋতুপর্ণার কন্ট্রিবিউশন অস্বীকার করছি না। তবে এখন কেউ ভাবেন না যে শিবুর ছবি হিট করতে গেলেই ঋতুপর্ণাকে চাই।

ঋতুপর্ণা তো এখন মৈনাক ভৌমিকের ছবিতে কাজ করবেন...
তা শুনে আমি দারুণ খুশি।

পরের ছবিতে কি রচনা আর গার্গী থাকাটা মাস্ট?
চরিত্রে মানালে তবেই থাকবে।

সুচিত্রা ভট্টাচার্যর গল্প ছাড়া কি আপনি ফিল্ম বানানোর কথা ভাবতে পারেন?
(হাসি) পাঁচটা ফিল্ম করেছি। তার মধ্যে তিনটে সুচিত্রাদির গল্প নিয়ে। পরের ছবিটা সুচিত্রাদির গল্প নিয়ে নয়। তবে ওঁর লেখা ‘বাজি’, ‘ফিফটি ফিফটি’ আর ‘লুকোচুরি’র রাইটস নেওয়া আছে।

ইন্ডাস্ট্রিতে বলা হয় ফিল্মের পাবলিসিটির জন্য শিবু অ্যান্টার্কটিকা অবধি হেঁটে যেতে পারবে। এটা ঠিক?
হ্যাঁ, কারণ আমার কেউ নেই তো! আমার হাতে কোনও ডেডিকেটেড ফিল্ম চ্যানেল নেই। কোনও ট্যাপ নেই যা খুলে দিলেই ঝরঝর করে ছবি সংক্রান্ত পাবলিসিটি হতে থাকে। আমার ফিল্ম তৈরির একটা মডেল রয়েছে। প্রযোজক বলেছেন ৭০ লক্ষ টাকায় ছবি বানাও। ৩০ লক্ষ টাকার পাবলিসিটি। তখন মিডিয়াকে অ্যাপ্রোচ করতেই হবে। আমার প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী তো ইন্ডাস্ট্রির রেগুলার প্রযোজকদের মতো নন। আর মিডিয়ার ‘এম’ যদি এখানে থাকে তো নন্দিতাদি উল্টো দিকে হাঁটবে।

এটা ফোবিয়া না স্ট্র্যাটেজি? হয়তো ঠিক করে নিয়েছেন যে চিত্রনাট্য লেখা ইত্যাদির ভার সম্পূর্ণ নন্দিতার উপর আর পাবলিসিটি আপনার দায়িত্ব...
না, স্ট্র্যাটেজি নয়। প্রথম থেকেই নন্দিতাদি এ রকমই। দিদি বলে আমি অভিনেত্রী নই। আমি তোমার মতো ভাল ক্যামেরা ফেস করতে পারব না।

কান চলচ্চিত্র উৎসবের মার্কেট সেকশনে ‘মুক্তধারা’ যাওয়া নিয়ে বেশ বিতর্ক হয়েছিল। কান-এ গিয়ে ছবিটা কোনও ব্যবসা করতে পেরেছিল কি?
ব্যবসা হয়নি। যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। শুরুটা করেছি। সময় দিন। বাংলা সিনেমার কি কোনও ইন্টারন্যাশনাল সেলস এজেন্ট সেভাবে তৈরি হয়েছে? আজও আমরা নির্ভরশীল থিয়েট্রিকাল রিলিজ ও স্যাটেলাইটের টাকার উপরে। কিন্তু সবাই জানে টাকা রোজগার করতে হলে ফেস্টিভ্যাল মার্কেটে ছবি বিক্রি করতে হবে। তাই অনুরাগ কশ্যপের মতো লোকও কানের মার্কেটে তাঁর ছবি প্রত্যেক বছর নিয়ে যান।

নিন্দুকেরা বলেন যে শিবু অ্যাম্বিশাস। প্রথমে ঋতুপর্ণার থেকে সরে এলেন। এর পর নন্দিতাকে ছাড়া ছবি করবেন...
আমি ঋতুপর্ণার থেকে সরে যাইনি। ও সরে গিয়েছে। দিদি ছাড়া আমি কোনও দিন সিনেমা পরিচালনা করব না। আমার চরম নিন্দুকও বলবে যে আমি ভাল অভিনেতা। সেই আমি ‘বাড়িওয়ালি’ করার পর স্বেচ্ছায় অভিনয় ছেড়ে দিয়েছিলাম। অ্যাম্বিশাস হলে তা পারতাম না। ওই সময় আমি কুমার সাহনির ‘চার অধ্যায়’য়ে অভিনয় করি। তার পর ঋতুপর্ণর ‘দহন’।

তখন ‘ইন দ্য নেম অব আ রিভার’য়ে অভিনয় করেছিলেন। যেখানে অনিল চট্টোপাধ্যায়ের সেই ‘মেঘে ঢাকা তারা’র ‘লাগি লগন’ গানের দৃশ্যটা আপনি রেপ্লিকেটও করেছেন...
হ্যাঁ। জানি না ক’জন জানেন যে ঋত্বিক ঘটককে নিয়ে তৈরি প্রথম ছবি ওটা। পরিচালক অনুপ সিংহ। সেখানে আমি নচিকেতার ভূমিকায়। সুপ্রিয়া চৌধুরী, গীতা ঘটক, গীতা দে সবাই অভিনয় করেছিলেন। সব রিয়াল লোকেশনে শু্যটিং। কিন্তু আমি জানতাম যে ওই ধরনের ছবি করলে বছরে হয়তো একটাই ফিল্মে কাজ পাব। তাতে চলবে কী করে? সিরিয়ালে অভিনয় করতে চাই না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক ট্যালেন্টেড অভিনেতা আছে যারা সিরিয়ালে ওই ধরনের কাজ করে সাঙ্ঘাতিক হতাশায় ভোগে।


শিবপ্রসাদ, গার্গী, রচনা ‘রামধনু’র এক দৃশ্যে

তবে আপনার অভিনীত ওই সময়ের ছবির সঙ্গে আপনার পরিচালিত ছবির কোনও মিল নেই। কেন?
ওই সময় আমার সঙ্গে নীতীশদা আর নন্দিতাদির আলাপ হয়। এক দিকে তখনও আমি স্বপ্ন দেখছি জুভেনাইল ক্রাইম নিয়ে ছবি করার। কিন্তু সে ছবি করতে কে পয়সা দেবে? আমার সাতপুরুষে কেউ সিনেমা বানায়নি। বাড়িতে আমি রোজ হারমোনিয়াম নিয়ে বসে রেওয়াজ করছি, ১০০-টা সিট আপ দিচ্ছি, স্কিপিং করছি। মধ্যবিত্ত বাড়িতে রোজ এটা করলে কেউ মেনে নেবে না। হঠাৎ একদিন একটা বাণিজ্যিক ছবির অফার পেলাম। ‘জামাই নম্বর ওয়ান’। তার পর নীতীশদা আমাকে ইটিভি বাংলায় কাজ করার সুযোগ দিলেন। ‘এবং ঋতুপর্ণ’, ‘জনতা এক্সপ্রেস’, ‘সাফ কথা’ সব আমার ডিজাইন করা। অভিনেতা হিসেবে আমি কুমার সাহানীর ছবিতে কাজ করেছি ঠিক। কিন্তু ছবি বানালে আমি ওই ধরনের বানাবো না। ওই ধরনের ছবি একটা মাইনরিটি অডিয়েন্সের জন্য।

নন-ফিকশন করেই তো আপনার ট্রিপলে অ্যাপার্টমেন্ট, দুটো গাড়ি...
(হাসি) তা ঠিক।

কিন্তু আপনি কি শুধু নিজের ছবিতেই অভিনয় করে যাবেন?
এ বছর চারটে ছবি করতে পারিনি। অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ‘বুনো হাঁস’, সুজিত সরকারের প্রযোজনায় অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের ছবি, বিরসা দাশগুপ্তর ‘অভিশপ্ত নাইটি’, দেবালয় ভট্টাচার্যর ছবি। তখন লাল্টু দত্তর চেহারা তৈরি করা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।

আপনি দাবি করছেন যে ভেঙ্কটেশ আর রিলায়্যান্সের ফিল্ম রিফিউজ করেছেন। এটা করে ইন্ডাস্ট্রিতে কী ইঙ্গিত দিলেন?
একই বছরে নিজের সিনেমা করে অন্যদের ছবিতে অভিনয় করা যায় না। যারা পারে, তাদের আমার প্রণাম।

তিন বছর আগে আপনি তো ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে একটা সমকামী চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হয়েছিলেন...
রোলটা দারুণ ছিল। বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনা করার কথা ছিল। তখন অবশ্য নিজের সিনেমা পরিচালনা করার চাপ এতটা ছিল না।

পরিচালক শিবপ্রসাদ কি অভিনেতা শিবপ্রসাদের চেয়ে বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী?
হয়তো তাই। আমার নিজের ছবির জন্য একটা স্পেশাল কিছু থাক। রাজা দাশগুপ্তর জন্য আমি অভিনেতা হয়েছি। রাজাদা আমাকে ‘একুশে পা’তে কাজ দিয়েছিলেন। পরে একটা টেলিফিল্ম করেছিলেন ‘ইমপ্রো’ বলে। মমতাশঙ্কর সেটা দেখে মৃণালদাকে (মৃণাল সেন) ফোন করে দেখতে বলেন। মৃণালদার সেটা দেখে খুব ভাল লেগেছিল। ওটা আমার জীবনের সব থেকে বড় পাওনা।

আমি বিশ্বাস করি অভিনেতা হিসেবে ফ্রেমে উল্টো দিকে বাংলা ইন্ডাস্ট্রির যে কেউ থাকুক তাকে গোল দিতে পারব!

সব্বাইকে গোল দিতে পারবেন?
(হাসি) প্লিজ, এটা নিয়ে আর বেশি প্রশ্ন করবেন না। এটুকু বলব যে, কনফিডেন্স লেভেল আমার খুব হাই।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। পরিচালনা না অভিনয় কোন বিভাগে এঁরা আপনার বেশি বড় কম্পিটিটর?
যে অভিনেতারা পরিচালনা করেন, তাদের মধ্যে অপর্ণা সেন, অঞ্জন দত্ত আর পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের কাজ ভাল লাগে। কিন্তু কৌশিকদা, সৃজিত বা কমলদা অভিনেতা হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে আসেনি। আমি নান্দীকারে ফুল টাইম অ্যাক্টিং করতাম। ‘অ্যাক্সিডেন্ট’য়ের সময় চেহারাটা এমন করেছিলাম যে পাঁজরগুলো দেখা যেত। আর সেই আমি আবার লাল্টু হওয়ার জন্য ওজন বাড়িয়েছিলাম। অভিনেতা কৌশিকদা ব্রিলিয়েন্ট। অন্যদের কাজ সে ভাবে দেখিনি। এদের কারও কাজ এদের ছবির ভাগ্য নির্ধারণের জায়গায় আসেনি। নিজেকে নায়ক হিসেবে দাঁড় করায়নি তারা। পরিচালক হিসেবে ওদের নিরিখে আমার কাজটা কোন জায়গায় রয়েছে সেটা আমি নিজে থেকে কিছু বলব না। দর্শক বলবে।

ইচ্ছে করে না অন্যদের ছবি করতে?
১৯৯৫ থেকে এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। কেউ আমাকে একটা স্ক্রিপ্ট লিখে লাল্টুর মতো চরিত্র করতে বলেনি তো! ন’বছর সিনেমায় কেউ একটা জোরাল চরিত্রে অভিনয় করার জন্য গার্গীকে বলেনি কেন? দেবশঙ্কর হালদারকে কেউ হিরো ভেবে ছবি করার কথা ভাবতে পারল না কেন?

তারপর তো উনি ‘অরুন্ধতী’তে অভিনয় করলেন...
ওখানে দেবুদা মিসইউজড হয়েছেন। দেবুদা ও রকম চিৎকার করবে কেন?

কিছু দর্শকের তো ওঁকে ‘অলীক সুখ’ দেখে বলেছিলেন যে ওঁকে দিয়ে আপনারা আরও একটু ‘সাটেল’ অভিনয় করাতে পারতেন...
দেবুদার অভিনয় দেখে ডা. কুনাল সরকার বলেছিলেন, যে দৃশ্যে গাড়ি থেকে নেমে দেবুদা চিৎকার করে কথা বলেছে, ওটা ওঁকে ছুঁয়ে গিয়েছিল।

আপনি সমালোচনা করলে আপনার অভিনেতাদের ইগোতে লাগে না?
কাউকে তো বলতেই হবে। ওরা জানে যে ওদের কাছ থেকে আমার কিছু পাওয়ার নেই। ‘যোদ্ধা’র ফার্স্ট লুকে নাইজেলকে দেখে দারুণ লেগেছে। দেব আর নাইজেল দু’জনে ঘোড়ায় চেপে আসছে। আবার নাইজেলের কাজ ভাল না লাগলে ওকে সেটা বলতে পারব।

আপনি বাস্তব নিয়ে ছবি করেন। কিন্তু সত্যি কি সিনেমা সমাজকে পাল্টায়? যে দিন রাষ্ট্রপতিকে ‘মুক্তধারা’ দেখালেন ঠিক তার পরেই কসাবের ফাঁসির আদেশ এসেছিল...
সিনেমা মনে দাগ কাটতে পারে। অনেক ডাক্তার এখন আর পেশেন্ট পার্টি না বলে নিয়ার রিলেটিভ বলেন। আমি পড়লাম, সুজিত সরকারের জন্য একটা চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছে যার মূল লক্ষ্য হল মেডিকেল পেশার ঝামেলা। এগুলো শুনলে ভাল লাগে। নাইজেল যে আজ এত ভাল কাজ করছে, তার কিছুটা কৃতিত্ব তো ‘মুক্তধারা’কেও দিতে হবে। তবে এটাও বুঝি যে সিনেমা সমাজের আমূল পরিবর্তন করতে পারবে না।

সিনেমা নিয়ে আপনি এত ব্যস্ত। প্রেম করার সময় পান কী করে?
(হাসি) গুঞ্জনা এখন বেঙ্গালুরুতে মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে পড়ছে। ২০১৬-তে কোর্স শেষ করে কলকাতায় ফিরলে বিয়ে নিয়ে কথা হবে।

নিয়মিত বেঙ্গালুরু যান?
না, নিয়মিত যাওয়া হয় না। তবে ও আমার সব ছবির প্রিমিয়ারে আসে। ‘রামধনু’ দেখে বলেছিল সুপারহিট হবে।

আমার নায়িকারা

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত: বাংলা ইন্ডাস্ট্রির আইকন। ওর পিআরটাও ভাল। কিন্তু বড্ড বেশি আবেগপ্রবণ।

সোহিনী সেনগুপ্ত: বলিষ্ঠ অভিনেত্রী। যদিও সিনেমার কোনও প্রচারে যেতে নারাজ।

গার্গী রায়চৌধুরী: টালিগঞ্জের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী। ওকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির মিথগুলো এ বার ওকে ভাঙতে হবে।

রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়: দক্ষ অভিনেত্রী। অসাধারণ মনের মানুষ। অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে আরও ভাঙা উচিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement