ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।
শহরে পাঁচতারা হোটেলে নিজের ঘরে ঢুকে প্রথমেই বলেন টিভিটা চালিয়ে দিতে।
‘‘ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ-এর খেলাটা চলতে থাকুক যখন আমরা কথা বলছি। কিন্তু ভলিউমটা মিউট করে দিন,’’ বলেই একগাল হাসি।
এর আগে দশ বার ভারতে এসেছেন। কলকাতাও তাঁর কাছে অপরিচিত নয়। ক্রিকেট নিয়ে তো এত উৎসাহ। কোনও দিন ইডেন গার্ডেন্সে খেলা দেখেছেন? ‘‘দেখেছি বইকী। যে বার ইডেনে গিয়েছিলাম, তখন দেখি সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছে। সারাক্ষণ চিৎকার করছে। কেউ চুপচাপ বসে খেলা দেখেই না। সে আমার কাছে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা,’’ বলেন লর্ড জেফ্রি আর্চার।
ইতিমধ্যে তাঁর বইয়ের ২৭০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। কলকাতায় এসেছিলেন তাঁর লেখা ‘মাইটিয়ার দ্যান দ্য সোর্ড’-এর মুক্তি উপলক্ষে। খানিকটা বিরক্ত-বিরক্ত ভাব দেখান ফোটোগ্রাফারের ছবি তোলার হিড়িক দেখে। মুখে বলেন, ‘‘আজ পর্যন্ত এমন একজনও ফোটোগ্রাফার দেখলাম না যে বলল এটাই শেষ ছবি তুলছি, আর কথাটা রাখল। বলে লাস্ট ছবি তুলছি। আর তার পর গোটাছয়েক ছবি তুলে নেয়। আরে, ছবি না তুলে ম্যাচটা দেখুন!’’
আচ্ছা, শোনা গিয়েছিল যে ‘মাইটিয়ার দ্যান দ্য সোর্ড’ বইটা তিনি নাকি সচিন তেন্ডুলকরের স্ত্রী অঞ্জলিকে প্রথমে উপহার দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন। সে ইচ্ছে কি পূর্ণ হয়েছিল? ‘‘হ্যাঁ, অঞ্জলি আমার লেখা ভালবাসে। তাই ওকে একটা কপি দিয়েছিলাম,’’ বলেন ৭৪ বছরের জেফ্রি।
বইটা পড়ে অঞ্জলির কেমন লেগেছে তা অবশ্য তিনি এখনও জানেন না। কথার ফাঁকে চোখ চলে যায় স্কোরবোর্ডের দিকে। ‘‘আজ ভারত জিতবে মনে হয়। অদ্ভুত একটা টিম আপনাদের। এমনি সময় বেশ অলস। কিন্তু যখন প্রয়োজন পড়ে, তখন একদম চাঙ্গা,’’ হেসে বলেন তিনি।
পর্দায় ভেসে ওঠে বিরাট কোহলির মুখ। ‘‘আমার মনে হয় একদিন ও তেন্ডুলকরের রেকর্ডটাও ভেঙে ফেলবে!’’ খোশমেজাজে বলেন তিনি। বিরাটের এত খোঁজ রাখেন। তা হলে নিশ্চয়ই তাঁর জীবনের নতুন বিতর্কের কথাও শুনেছেন? ‘‘এটা কি সত্যি যে ও ভুল জার্নালিস্টকে অপমান করেছিল?’’ প্রশ্ন তাঁর। উত্তর শুনে বলেন, ‘‘যদি ঠিক জার্নালিস্টকেও কথাগুলো বলত, তা হলেও আমি বলতাম সেটা করা উচিত নয়। ছোটদের কাছে এটা করলে কী উদাহরণ রাখত বিরাট? আমিও তো সাংবাদিকদের ওপর রেগে যাই। কিন্তু এত বছরে একবারও আমি কোনও জার্নালিস্টকে গালিগালাজ করিনি। বিরাট তো একজন জাতীয় হিরো। হয়তো বা আজকের দিনে দাঁড়িয়ে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানও। সে এ ভাবে কথা বলবে?’’
তার পর চলে যান সচিন প্রসঙ্গে। ‘‘সচিন খুব মন দিয়ে শব্দগুলো সাজিয়ে একটা কমেন্ট করেছিল। বলেছিল: ‘আই ওয়াজ আন্ডার দোজ প্রেশারস অ্যান্ড আই রিয়েলাইজড দ্যাট আই হ্যাড টু বি ভেরি কেয়ারফুল। হি ইজ আন্ডার দ্য সেম প্রেশারস। সো, হি হ্যাজ টু বি ভেরি কেয়ারফুল।’ আমি হতবাক যে কিছু ক্রিকেটার পরে বলেছে যে বিরাট তো ক্ষমা চেয়ে নিয়েছে। ভাবটা এমন যেন তাতেই যথেষ্ট হয়েছে। আমি বলব যথেষ্ট হয়নি। ওই ভাষা ওর ব্যবহার করা উচিত নয়। অস্ট্রেলিয়ানদের এই রকম ভাষার বিরুদ্ধেই তো একবার কুম্বলে অভিযোগ জানিয়েছিল। তখন আমরা সবাই কুম্বলের পক্ষে ছিলাম। সবাই ভেবেছিলাম পন্টিং হ্যাড বিহেভড লাইক আ থাগ। বাট কুম্বলে রিমেইন্ড অ্যান ইন্ডিয়ান জেন্টলম্যান। বিরাট উডন্ট হ্যাভ হ্যাড টু লুক মাচ ফারদার দ্যান কুম্বলে টু ডিসাইড হাউ হি বিহেভড,’’ গড়গড় করে বলে চলেন তিনি।
ব্যাপারটায় যে উনি বেশ গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন, তা বোঝা গেল পরের মুহূর্তে যখন বলা হল এত প্রতিভাবান এক ক্রিকেটারের জীবনে এই ঘটনা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। কথা শেষ হতে না হতেই তিনি বলেন, ‘‘প্রতিভাবানদের নিয়েই এ সব হয় কারণ প্রতিভা না থাকলে তাকে নিয়ে কেউ লিখতে যাবে কেন?’’
ওঁর যুক্তিকেও খন্ডানো গেল না। তবে প্রসঙ্গ খানিকটা বদলানো গেল। এক সময় ইমরান খানকে বড্ড পছন্দ করতেন। এ নাগাদ তো ইমরানের দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে নানা রকমের কথা উঠেছিল। আপনি শুনেছেন এক সময় সে কথা? ‘‘এক সময় ইমরানকে ফলো করতাম। আমি তো আউটসাইডার। পাঁচ বছর ইমরানের সঙ্গে কথা বলিনি। লন্ডনে দেখাও হয়নি এর মধ্যে। যখন বয়স অল্প ছিল, তখন মনে হত ও প্রধানমন্ত্রী হতে পারে। বাট ইট ইজ লুকিং লেস লাইকলি নাও। ওর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলব না,’’ সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
কলকাতায় ব্যক্তিগত বন্ধু রয়েছে। এ শহরে এসে তাঁর পুত্র উইলিয়াম মাদার টেরেজার হোম-এ কাজ করে গিয়েছেন। ভালই বোঝেন এ দেশে তাঁর লেখা নিয়ে কী দারুণ মাতামাতি চলতে থাকে এখানে। জানতে ইচ্ছে করে সেটাই কি কারণ বারবার এ দেশে ফিরে এসে বই প্রকাশ করতে চাওয়ার? এমনটা তো শোনা যায় যে বলিউড তাঁর বই থেকে টুকে ছবি তৈরি করেছে! কথাটা শেষ হওয়ার আগেই জেফ্রি থামিয়ে বলেন, ‘‘দাঁড়ান, দাঁড়ান, টোকা বলবেন না। ওটাকে চুরি বলুন। বলিউড ইজ আ বাঞ্চ অব থিভস্!’’ বলিউডকে মুখের ওপর চোর বলছেন শুনে খানিকটা যে অস্বস্তি হয়নি, তা নয়। তবে সত্যের খাতিরে বলতেই হল যে আমরাও শুনেছি কী ভাবে ‘খুদগর্জ’ তৈরি হয়েছিল তাঁর লেখা ‘কেন অ্যান্ড এবল’ থেকে, বা ‘লেডিজ ভার্সাস রিকি বহেল’ অনুপ্রাণিত হয়েছিল ‘নট আ পেনি মোর, নট আ পেনি লেস’ থেকে। ‘‘দেখেছেন তো, আপনারাও জানেন সে চুরির কথা। আমাকে আর নতুন করে কী বলতে হবে?’’
এ দেশে তো আপনার বইয়ের অফিশিয়াল মুক্তির পরেই তার নকল কপি ফুটপাতে ফুটপাতে বিক্রি হয়। এ সবের পরেও কীসের মোহে আসেন এখানে? শুধু কি পাঠকের সংখ্যার জোর? নাকি তাঁর লেখনী নিয়ে তাদের মতামতের বৈচিত্র তাঁকে বারবার ভারতে টেনে আনে? ‘‘পপস্টার ট্রিটমেন্ট পাই এখানে। নানা ধরনের প্রশ্ন উঠে আসে। শুনতে দারুণ লাগে। এক এক সময় মনে হয় এখন আগের থেকে অনেক ভাল লিখি। কিন্তু এমন অনেক মানুষ পাবেন, যাঁরা বলবে আমার সব থেকে ভাল বই হল ‘নট আ পেনি মোর, নট আ পেনি লেস’। তার মানে গল্প বলার একটা ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা আমার চিরকালই ছিল।’’ তাঁর চোখে আর কে নারায়ণ হলেন আদর্শ লেখক। ‘‘এক মহান লেখক এবং গল্পবলিয়ের কম্বিনেশন। ‘মালগুডি ডে’জ’-এর কথা ভাবুন। কী অসাধারণ! কেন একজন সামান্য ট্যাক্স কালেক্টরের গল্প লোকে পাতা উল্টে পড়বে? পড়বে কারণ সেটা লিখেছেন আর কে নারায়ণ। ওঁর ভাইপো এসেছিল আমার সঙ্গে দেখা করতে। ধন্যবাদ দিয়ে গেল আর কে নারায়ণকে নিয়ে আমি এ ভাবে বলি বলে।’’
আচ্ছা, কোনও দিন বাংলা লেখা পড়েছেন? অনুবাদে? ‘‘না, পড়া হয়নি... যদিও সপ্তাহে একটা করে বই পড়ি।’’
জীবনে কোনও দিন ‘রাইটার্স ব্লক’ ব্যাপারটার সম্মুখীন হয়েছেন? ‘‘ঈশ্বর আমার প্রতি সদয়। অসুবিধে হয়েছে। কিন্তু ‘রাইটার্স ব্লক’ হয়নি। এই নতুন বইটা শেষ হয় একটা চিঠি দিয়ে। জানতাম চিঠিটা তিনটে চরিত্রকে অ্যাফেক্ট করবে। আমি ভাবছিলাম চিঠিতে লিখবটা কী! তার পর ভাবলাম যাক, বইটা শেষ, এখন এক বছর সময় আছে এগুলো নিয়ে ভাববার। দেখলাম তিন দিনে চিঠির বিষয়বস্তু মাথায় এসে গেল!’’
এমনও তো হয় যে উঠতি লেখকরা তাঁর কাছে টিপস চেয়ে বসেন? ‘‘বলে তো। আমি উত্তরে বলি ব্যালে দেখতে যাও। লক্ষ করে দেখো স্টেজে যে চিফ ব্যালেরিনা রয়েছেন, তাঁর পিছনে কত নর্তকী! এ বার ভাবো ওদের ওখানে পৌঁছতে কত ঘণ্টা রেওয়াজ করতে হয়েছে। একজন বেহালাবাদক, একজন ব্যালেরিনা বা অপেরা গায়িকাকে যে পরিশ্রম করতে হয়, আমাকেও তাই করতে হয়েছে।’’
কিন্তু লিখতে বসলে কি তাঁর কোনও বিশেষ সামগ্রী দরকার? ‘‘হ্যাঁ, আমি পাইলট পেন দিয়ে লিখি। স্ট্যাডলার পেন্সিল, রাবার, পেন্সিল শার্পনার আমার চাই। আর একটা অক্সফোর্ড প্যাড। সব কিছু ঠিক জায়গায় থাকতে হবে। লেখার সময় কোনও শব্দ হলে চলবে না। আমার তো একটা আলাদা পেন-ও রয়েছে অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য! বইয়ের পাতাগুলো আলাদা হয়। তাই বিশেষ এক ধরনের কলম ব্যবহার করি,’’ বলেই একজনকে ডেকে পাঠালেন নিজের সেই কালো রঙের সই-দেওয়ার পেনটা এনে দেখানোর জন্য।
‘‘আমি সব কিছু ঠিক জায়গায় চাই যাতে কোনও অজুহাত না থাকে রোজ ভোর ছ’টার সময় লিখতে না বসার জন্য। একবার শুধু রুটিন ভেঙেছিলাম। মার্গারেট থ্যাচারের ফিউনারেলের সময়। প্রেস-কে জানানোর চল্লিশ মিনিট আগে আমাকে ওরা জানিয়েছিল। আমি নিউ ইয়র্কে ছিলাম। শুনে সোজা প্লেন ধরে বাড়ি...’’
অবশ্য মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে তাঁর যা সম্পর্ক ছিল, তাতে রুটিন-ভঙ্গ হওয়াটাই স্বাভাবিক। শুনেছি জেল থেকে জেফ্রি বেরোনোর পর একটা হাতে লেখা চিঠি পাঠিয়েছিলেন মার্গারেট থ্যাচার?
‘‘হ্যাঁ, আমাকে লাঞ্চে নিয়ে গিয়েছিল!’’
সে চিঠিতে নাকি লেখা ছিল ‘রিৎজ হোটেল, সেন্টার টেবিল।’ ‘‘হ্যাঁ, টিপিক্যাল অব হার। অলওয়েজ লয়্যাল টু হার ফ্রেন্ডস। খুব বড় মনের মানুষ না হলে এটা করা যায় না। ওঁর মনটা সত্যিই খুব বড় ছিল,’’ উত্তরে বলেন তিনি।
জেল থেকে বেরিয়ে এমন একটা চিঠি না-হয় পেয়েছিলেন ঠিকই। সবাই তো আর জেল ফেরত লেখককে লাঞ্চে নিয়ে যান না। বারবার এই যে নিজের জীবনে কামব্যাক করেই চলেছেন, এর পিছনের রহস্যটা কী? ‘‘গত ১৫ বছর তো বেশ ভালই ছিলাম। বই লিখে লোককে বোর করেছি। কামব্যাকের রেসিপি হল এনার্জি আর আত্মবিশ্বাস। কত লোক বলবে এটা ঠিক নয়, আমি এতে ভেঙে পড়ব... আমি বলি জাস্ট গেট অন উইথ ইট।’’
কিন্তু ক্যান্সার যুদ্ধ? তিনি তো এমন একটা সার্জারি করিয়েছেন, যার কারণে ইমপোটেন্সিকেও মেনে নিতে হয়েছে তাঁকে! ‘‘মেরির মতো একজনের সঙ্গে ঘর করলে এটা অসম্ভব মনে হয় না। ও এত প্র্যাক্টিক্যাল যে কী বলব। আমার পাশে বসে বলেছিল এটা প্রস্টেট ক্যান্সার। এতে তুমি মারা যাবে না। তাই মৃত্যু নিয়ে ভাববেও না। সার্জারির পরে দু’সপ্তাহ একটু
অস্বস্তি হবে। মেরির নিজের তো অনেক বেশি খারাপ ধরনের ক্যান্সার হয়েছিল। মনে আছে হাসপাতালে মেরি। আমি দেখেছি সার্জারির পরের দিনও সকালে সিনিয়র নার্সকে বলছে ‘আমি চিন্তা করছিলাম জুনিয়র নার্সদের রোস্টারের কথা।’ এটাই মেরি। তাই বোধহয় ও আজকে ডেম মেরি।’’
উনি তো একজন সায়েন্টিস্ট। পরের বছর আপনাদের বিয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। এত বছরের সম্পর্ককে কী ভাবে ফিরে দেখেন আপনি? ‘‘মেরি তো এখন সায়েন্স মিউজিয়ামের চেয়ারপার্সন। ও-ই প্রথম ব্রিটিশ মহিলা যে কোনও জাতীয় গ্যালারি বা মিউজিয়ামের চেয়ারপার্সন হয়েছে। ইজন্ট ইট ডিসগ্রেসফুল? আমার তো মনে হয় ওর ২০-তম মহিলা চেয়ারপার্সন হওয়া উচিত ছিল। এখন তো এই সায়েন্স মিউজিয়ামটা রয়েছে। যদি এক বছর বাড়ি না ফিরি, তা হলেও বোধহয় মেরি বুঝবে না (হাসি)। একদম বাচ্চাদের মতো হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে যেন ও একটা শিশু। সবে পুতুলের দোকানে ঢুকেছে।’’
তার পর চলে যান দাম্পত্য প্রসঙ্গে। ‘‘মেরির সঙ্গে কখনও একঘেয়েমি আসে না। যদি কোনও সম্পর্কে একঘেয়েমি আসে, বুঝবেন সম্পর্কটা শেষ।’’
এই যে ক্যান্সার যুদ্ধ, জেল যাওয়া, দেউলিয়া হওয়ার ভয়—যদি এমন ক্ষমতা থাকত যা দিয়ে আপনি এই তিনটের মধ্যে যে কোনও একটা অভিজ্ঞতাকে মুছে ফেলতে পারতেন, তা হলে কোনটা সেটা? ‘‘দেউলিয়া হওয়ার ভয়টা সব থেকে খারাপ। বাচ্চাদের কী খাওয়াব জানতাম না। সাত বছর দেনায় ডুবে ছিলাম। লোকে ভাবে রাতারাতি সাফল্য এসেছে আমার। সেটা ঠিক নয়। ‘কেন অ্যান্ড এবল’ মেড ইট ওভারনাইট। আই ডিডন্ট।’’
আচ্ছা, এখনও কি ইংল্যান্ডে থাকলে আপনি প্রত্যেক সপ্তাহে দু’বার করে নাটক দেখতে যান? নাটকে ইনভেস্ট করেন? একগাল হেসে বলেন, ‘‘হ্যাঁ, করি। সারা জীবন থিয়েটার ভালবেসেছি। এখন আমার ছেলে বলে যে তিরিশ বছর ধরে থিয়েটারে ইনভেস্ট করে আমি নাকি অর্থলাভও করেছি। আই হ্যাভ ওন আ কোয়ার্টার অব আ পারসেন্ট। নট মেনি ক্যান আর্ন ফ্রম দেয়ার হবি। আমার আর একটা হবি রয়েছে। সেটা হল অকশন করা।’’
হ্যাঁ, সেটা জানা। এমনকী ‘দ্য বিটলস’য়ের সঙ্গেও নাকি আপনি অকশন করেছেন? ‘‘হ্যাঁ... তিরিশ বছর ধরে অকশন করি। আই হ্যাভ অকশনড্ উইথ প্রিন্সেস ডায়ানা টু। আমার আরও একটা প্যাশন হল রাগবি। লোকে এখানে রাগবি খেলে না। তাই আমার ওই প্যাশনটা জানে না।’’ যদিও রাগবি নয়, তবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ দেখেছেন? ‘‘নাহ্। ও সব আমি দেখিনি। আমার তো আইপিএল-ই ভাল লাগে না।’’
কে তিনি
• ২৯ বছর বয়সে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হয়েছিলেন
• এক সময় দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ‘নট আ পেনি মোর, নট আ পেনি লেস’ (১৯৭৬) বইয়ের সাফল্য আর্থিক দুরবস্থার হাত থেকে তখন বাঁচায় তাঁকে
• ১৯৮৫-তে ‘কেন অ্যান্ড এবল’ উপন্যাসটি নিয়ে টেলিভিশনে মিনিসিরিজ হয়
• ক্লিফটন ক্রনিকলস-এর ‘বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট’, ‘বি কেয়ারফুল হোয়াট ইউ উইশ ফর’ বা ‘ওনলি টাইম উইল টেল’-এর মতো বইগুলো আর্চারকে জনপ্রিয়তা দিয়েছে
• এই সিরিজের ‘মাইটিয়ার দ্যান দ্য সোর্ড’ প্রকাশ উপলক্ষে কলকাতায় এসেছিলেন
• সিরিজের পরবর্তী বইয়ের আটটি অধ্যায়ের পটভূমি মুম্বই। বইয়ের প্রধান চরিত্র ওভালের মাঠে ক্রিকেট দেখতে গিয়ে এক ভারতীয় মেয়ের প্রেমে পড়ে যায়
এক সময় বলেছেন ‘ক্রিকেট ইজ আ টেস্ট ম্যাচ উইথ ভিভিএস লক্ষ্মণ অ্যান্ড রাহুল দ্রাবিড় ফাইটিং অল ডে টু সেভ দ্য গেম...’ কথার রেশ ধরেই উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘‘ঠিক, দ্যাট ইজ ক্রিকেট। ওয়ান ডে-টা তা-ও খানিকটা সহ্য করা যায়। টোয়েন্টি-২০ ইজ রাবিশ!’’ ক্রিকেটের সংজ্ঞাটা কি একটুও পাল্টেছে ২০১৫-য় এসে? ‘‘না। এর থেকে ভাল ক্রিকেট আমি আর দেখিনি। দ্যাট ওয়াজ আ গ্রেট ডে ফর ইন্ডিয়ান ক্রিকেট। আমি টিভিতে দেখছিলাম। আর ভাবছিলাম দুটো ব্যাটসম্যান কি টিকে থাকতে পারবে? কিন্তু পেরেছিল। আরও একটা ব্যাপার। বোথ আর জেন্টলম্যান। তবে আরও একটা ম্যাচ হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা ভার্সেস অস্ট্রেলিয়া। পাঁচ দিনের ম্যাচ। কিন্তু শেষ ওভারেও মনে হচ্ছিল যে কেউ জিতে যেতে পারে। বা ড্র হতে পারে। সেটা বেশ দারুণ একটা অকেশন ছিল।’’
ক্রিকেটের সংজ্ঞা পাল্টায়নি। কিন্তু যে ভাবে তিনি ভারতকে দেখে এসেছেন, সেটা কি পাল্টেছে? ‘‘ভারতকে দেখে আমার মনে হয়: হয় তোমরা বড্ড পিছিয়ে আছ, নয়তো অনেকটা এগিয়ে। আজকাল আমার লেখা অর্ধেক বই লোকে মেশিনে কেনে। কিন্তু ভারতে সে সংখ্যাটা মাত্র দু’ শতাংশ। হোয়েদার ইউ আর গোয়িং টু ক্যাচ আপ অর স্টিল স্টে উইথ বুকস, আই ডোন্ট নো। কলকাতা সম্পর্কে বলব, এ শহরে অনেক কিছু পাল্টেছে। এ শহরের রাস্তা, বাড়িঘর, এমনকী মেট্রোর কনস্ট্রাকশনের কাজ— সব কিছুই পাল্টেছে। আগে, আমাকে ধুলো ভরা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাতে হত। রাস্তার দু’পাশে দারিদ্রের চিহ্ন। এখনও তা আছে। তবে বেড়ার ও পাশে। আর পাল্টেছে ভারতীয় মহিলাদের ক্ষমতা। যাদের আজ ১৫-১৮ বছর বয়স, তারা নতুন ভাবে ভাবছে। দে আর ব্রিচিং অল দ্য রুলস্...’’
মেয়েদের ক্ষমতাকে সেলাম জানালেন। এই যে নির্ভয়া-সংক্রান্ত বিতর্কিত তথ্যচিত্র বিবিসি-তে দেখানো নিয়ে হইচই হচ্ছে, তা কি তিনি জানেন? এ সবের পরেও কি ভারতীয় মহিলাদের ক্ষমতাকে কুর্নিশ জানাবেন? বিরাট প্রসঙ্গে স্টেপ আউট করেছিলেন জেফ্রি। কিন্তু এখানে তা করলেন না। সাক্ষাৎকার শেষে শুধু বললেন, ‘‘ব্যাপারটা নিয়ে আমি পেপারে পড়েছি। আপনাকে এ বিষয়ে একটা মন্তব্য করতে পারলে খুশি হতাম। কিন্তু আমি বিষয়টা নিয়ে অতটা জানি না যে, একটা সেন্সিবল বা ওয়ার্থহোয়াইল মন্তব্য করতে পারব।’’
কথা শেষ হতে না হতেই আবার টিভির পর্দায় তাঁর চোখ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরও একটা উইকেট। ‘‘দে হ্যাভ গট হিম!’’ শিশুসুলভ উত্তেজনা তাঁর গলায়। কে বলবে বয়স ৭৪!