আনন্দplus এক্সক্লুসিভ

বাস্তবের জুলিয়েটরা মরে না

তাঁদের জুটির প্রথম ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই রোমিও অঙ্কুশ-এর জুলিয়েট হলেন শুভশ্রী। পুজোতেই মুক্তি পাচ্ছে ছবি। খবর দিচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্তনা, কেউ শুভশ্রীকে ‘টলিউডের দীপিকা পাড়ুকোন’ বলে এখনও ডাকেননি। কিন্তু, দু’জনের মধ্যে অদ্ভুত মিল। ‘রাম লীলা’তে দীপিকা অভিনয় করেছেন লীলার চরিত্রে। সঞ্জয় লীলা বনশালির দেশি জুলিয়েট। আর শুভশ্রী? এসকে মুভিজ প্রযোজিত ‘রোমিও জুলিয়েট’ অনুপ্রাণিত ছবিতে তিনি জুলিয়েট। তাঁর রোমিও হলেন অঙ্কুশ। তাঁদের জুটির প্রথম ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই রোমিও অঙ্কুশ-এর জুলিয়েট হলেন শুভশ্রী। পুজোতেই মুক্তি পাচ্ছে ছবি। খবর দিচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ০৪:৩৩
Share:

না, কেউ শুভশ্রীকে ‘টলিউডের দীপিকা পাড়ুকোন’ বলে এখনও ডাকেননি।

Advertisement

কিন্তু, দু’জনের মধ্যে অদ্ভুত মিল।

‘রাম লীলা’তে দীপিকা অভিনয় করেছেন লীলার চরিত্রে। সঞ্জয় লীলা বনশালির দেশি জুলিয়েট।

Advertisement

আর শুভশ্রী? এসকে মুভিজ প্রযোজিত ‘রোমিও জুলিয়েট’ অনুপ্রাণিত ছবিতে তিনি জুলিয়েট। তাঁর রোমিও হলেন অঙ্কুশ।

মিল শুধু এখানেই শেষ নয়।

দীপিকার উচ্চতা ৫ ফুট সাড়ে ৮ ইঞ্চি। শুভশ্রীর উচ্চতা ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি।

দীপিকার সুপারস্টার (রণবীর কপূর)কে নিয়ে প্রেম কাহিনির চর্চা বহু দিন ধরে শিরোনামে থেকেছে।

আবার সে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে দীপিকা আর রণবীর একসঙ্গে কাজ করেছেন ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যয় দিওয়ানি’র মতো বিশাল বড় হিটে।

শুভশ্রীর সঙ্গে দেবের প্রেম নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরেও শুভশ্রী তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে করেছেন ‘খোকা ৪২০’। সেটাও বিশাল হিট।

দীপিকা তো ব্রেক আপের পরে ইন্ডাস্ট্রিরই একজনকে (সহ-অভিনেতা রণবীর সিংহ) বেছে নিয়েছেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে। তাঁকে বয়ফ্রেন্ডের তকমা দেননি ঠিকই, তবে গুজব, তাঁদের সম্পর্কের একটা নাম দেওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।

দীপিকা প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শুভশ্রী বলেন, “দীপিকার ব্রেক আপের পর থেকে ওঁর কাজের ফ্লোটা বেড়ে যায়। আমার ক্ষেত্রেও অদ্ভুত ভাবে সেটা হয়েছে। ভগবান আর ভাগ্য সদয় ছিল বলে এটা করতে পেরেছিলাম। তবে ইন্ডাস্ট্রির কারও সঙ্গে প্রেমে পড়াটা আমার দ্বারা আর হবে না। অঙ্কুশ তো ইন্ডাস্ট্রির একজন। তাই ডিসকোয়ালিফায়েড। তার ওপর ও এতটাই ঐন্দ্রিলার প্রতি ডিভোটেড যে, আমি এটা ভাবতেও পারব না। তাছাড়া দীপিকা আর আমাকে একই রকম হতে হবে নাকি?”

সেটা ঠিক। দীপিকা একের পর এক পুরস্কার পেয়ে চলেছেন অভিনয়ের জন্য। সম্প্রতি আইফা-তেও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেলেন। শুভশ্রীর সেই স্বীকৃতিটা পাওয়া এখনও বাকি। দুই ইন্ডাস্ট্রিতে দু’জনে সমান্তরাল রেখার মতো চলছেন। ২০১৪-তে জিতের সঙ্গে ‘গেম’, অঙ্কুশের সঙ্গে ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ করে বাংলা বাণিজ্যিক ছবিতে একটা জায়গা করে নিচ্ছেন শুভশ্রী। জুনে মুক্তি পাচ্ছে অঞ্জন দত্তের ‘শেষ বলে কিছু নেই’। তবে টলিউডের দীপিকা হয়ে উঠতে এখনও সময় লাগবে। নিজেই তো বাংলা বাণিজ্যিক ছবির হিরোইনদের নাম্বার গেমে সবার আগে কোয়েল মল্লিককে রাখছেন। আর ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত? “ঋতুদি নাম্বার গেমের ঊর্ধ্বে,” সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন তিনি।

জুলিয়েটের ভূমিকায় অভিনয় করবেন। তিনি কি মনে করেন যে, আজকের সময়েও লোকে রোমিও-জুলিয়েটের মতো প্রেম করতে পারে? যেখানে দর্শনটাই হল, যদি প্রেম বাঁচাতে না-পারি তবে নিজেদের হাতেই নিজেদের প্রাণ দেব। ঠিক যে ভাবে ‘রামলীলা’তে রণবীর আর দীপিকা নিজেদের খুন করে রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন? বা ‘ইশকজাদে’তে অর্জুন কপূর আর পরিনীতি চোপড়া হাসতে হাসতে নিজেদের পেটে গুলি চালিয়ে তারপর নেতিয়ে পড়ে মারা যান?

“যুগটা পাল্টেছে। আমাদের জেনারেশন যে রকম, সেখানে প্রেমিকার বিয়েতে প্রেমিক সুইসাইড করছে শোনা যায়। কিন্তু তারা পরস্পরকে খুন করে প্রেমকে অমর করে না। বাবা-মায়েদের মেন্টালিটিটা পাল্টেছে। আত্মঅহঙ্কার থেকে একটা সময় তাঁরা এই রকম সম্পর্ককে বাধা দিতেন। আজ তাঁরা মেনে নেন। তাই খুব প্রত্যন্ত জায়গা ছাড়া পালিয়ে বিয়ে ব্যাপারটা বন্ধই হয়ে গিয়েছে,” বলছেন শুভশ্রী।

অঙ্কুশ সঙ্গে সঙ্গে বলেন, “রোমিওর মতো প্রেম করা ভাল। কিন্তু ও শেষে যা করেছিল সেটা আমি কাউকে ফলো করতে বলব না।” যত গভীর প্রেমই হোক না কেন, বাস্তব জীবনে শুভশ্রী বাড়ির লোকের আশীর্বাদ ছাড়া কখনওই বিয়ে করতে চাইবেন না। পালিয়ে বিয়ে করার কথা ভাবতেই পারেন না তিনি। “আমার মানসিকতা ধ্বংসাত্মক নয়। বাঙালি মতে নিয়ম মেনে বিয়ে করতে চাই। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি। যা হবার, তা হবেই। আমি আর দেব দু’জনেই একটা সময় ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবেছিলাম। হয়তো বা দীপিকা-রণবীরও তাই। কিন্তু প্রেম জিনিসটাই এমন যে, শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের ওপরেই ছেড়ে দিতে হয়,” বলছেন তিনি।

যতই প্রেম করুন না কেন, অঙ্কুশ মরে গিয়ে প্রেমকে শাশ্বত করার দর্শনে বিশ্বাসী নন। “লেট গড কিল ইউ, বাট নেভার কিল ইয়োরসেল্ফ,” বলছেন তিনি। আজকের রোমিও কি তা হলে তাঁর জুলিয়েটকে বলবেন প্রেমের জন্য মরতে পারব না। বরং তোমার সঙ্গে এক্সট্রা-ম্যারিটাল অ্যাফেয়ার করব। এমন ভাবনা শুনে অঙ্কুশ হেসে খুন। তার পর বলেন, “না, সেটাও না। তবে মরে গেলে সত্যি কিছু পাওয়া যায় না।” কিন্তু না মারা গেলে তো আজকের জুলিয়েটকে অন্য জায়গায় বিয়ে করতেই হবে! শুনে অঙ্কুশ বললেন, “হতে দিলে তো... কারও ক্ষমতা নেই সেটা করে দেখানোর!”

এত প্রেম। এত প্যাশন। শেক্সপিয়রের রোমিওর দুনিয়ায় ব্রেক-আপ নেই। থাকতে পারে না, কিন্তু বাস্তবে সম্পর্কের ভাঙন আর বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সম্পর্ক বহু বছরের। তবু বিয়ে ভেঙেছে। হৃতিক-সুজান তার জ্বলন্ত উদাহরণ। বিয়ে ভাঙার পরেও আদিত্য চোপড়া আবার ঘর বাঁধছেন রানি মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মোদ্দা কথা, নতুন সম্পর্ক গড়ার উন্মাদনা সামলে ‘শেষ নিঃশ্বাস অবধি আমরা একে অপরের জন্যই থাকব’ যুক্তির বেলুনে আলপিন ফুটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রোমিও-জুলিয়েটরা আর মারা যান না। গা ঝাড়া দিয়ে আবার নতুন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। তা হলে কি ধৈর্যচ্যুতি হচ্ছে? না কি বিশ্বাসটা কমে যাচ্ছে? “প্যাশনটা আগের মতো আছে। কিন্তু মানুষের ভাবনার ধরনটা পাল্টেছে। তাই বাস্তবে রোমিও-জুলিয়েটরা মরে না,” যুক্তি শুভশ্রীর।

তবু আশ্চর্য ভাবে বারবার সিনেমাতে শেক্সপিয়রের নাটকটা পুঙ্খানুপুঙ্খ অবলম্বন করে চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছে। বাস্তবের থেকে দূরত্ব বাড়লেও সে ছবিগুলো হিট করছে। কী করে? “সাধারণ মানুষ সত্যি আর এ রকম ভাবে না। কিন্তু ছবি দেখার সময় আমরা ওই রোমিও-জুলিয়েটের দর্শনটা অ্যাডমায়ার করি। তাই ওগুলো হিট,” জানাচ্ছেন শুভশ্রী।

ছবির শু্যটিং শুরু হবে জুনের শেষে। সামনের সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে অঙ্কুশ-শুভশ্রীর ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’। সে ছবির পরিচালক অশোক পতি পরিচালনা করবেন ‘রোমিও-জুলিয়েট’ও। “শুভশ্রীকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি। ওড়িয়া ছবিতেও আমিই ওকে লঞ্চ করেছিলাম। অঙ্কুশ আর শুভশ্রীর অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রিটাও বেশ ভাল,” বলছেন পরিচালক। শুভশ্রী খুশি যে অঙ্কুশের সঙ্গে প্রথম ছবি মুক্তির আগেই পর্দায় তাঁদের রসায়ন নিয়ে কথা হচ্ছে। “তা দেখেই যে হিমাংশু ধানুকা আমাদের জুটিটাকে আবার ব্যবহার করছেন, এটা দারুণ লাগছে,” বলছেন শুভশ্রী। হিমাংশু এ দিকে প্রশংসা করছেন শুভশ্রীর পেশাদারিত্বের। “নুসরতের সঙ্গে অঙ্কুশের জুটিটা ভালই ছিল। শ্রাবন্তীর সঙ্গেও অঙ্কুশ ‘ইডিয়ট’ আর ‘কানামাছি’ করেছে। তবু বলব শুভশ্রীর সঙ্গে অঙ্কুশের জুটিটা বেশি রেসপন্স পেয়েছে। তা-ও ছবি মুক্তি পাওয়ার আগেই। তাই শুভশ্রীকেই জুলিয়েট হিসেবে কাস্ট করলাম আমরা,” বলছেন প্রযোজক। তা হলে কি জুলিয়েটের রোলটা পেয়ে টলিউডের নম্বর দুই স্লটটা পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে গেলেন শুভশ্রী। “নুসরত মাত্র তিনটে ছবি করেছে। আমার থেকে পরে এসেছে ছবিতে। শ্রাবন্তী না আমি, কে দুই নম্বরে তা দর্শকই বিচার করুন। আমি ইঁদুর দৌড়ে নেই,” বলছেন শুভশ্রী।

পুজোয় ‘রোমিও জুলিয়েট রিলিজ। এই প্রথম শুভশ্রীর কোনও ছবি পুজোতে মুক্তি পাচ্ছে। আবার ঠিক একই সময়ে মুক্তি পাচ্ছে দেবের ‘যোদ্ধা’। টেনশন হচ্ছে প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে টেক্কা দিতে? তা-ও আবার অঙ্কুশের সঙ্গে জুটি বেঁধে? “প্রতিযোগিতা নয়, ‘যোদ্ধা’ ছবিটা আমি নিজেও দেখতে চাই। যাঁরা ‘যোদ্ধা’ আগে দেখবেন, আমি চাইব তাঁরা যেন ‘রোমিও-জুলিয়েট’ও দেখেন। আর উল্টোটাও যেন হয়,” সামান্য ডিপ্লোম্যাটিক্যালি বলেন শুভশ্রী।

অঙ্কুশ অবশ্য জানতেন না ‘যোদ্ধা’ মুক্তি পাবে পুজোতে। এটুকু বলছেন যে আগের বছর পুজোয় তাঁর ‘খিলাড়ি’ মুক্তি পেয়ে সাফল্য পেয়েছিল। “তাই এ বছর আমাদের ঠিকই ছিল যে আরও একটা পুজো রিলিজ থাকতেই হবে,” বলছেন অঙ্কুশ।

এ দিকে ‘যোদ্ধা’র মিমি চক্রবর্তীর সঙ্গে অভিনয় করতে পারলেও মন্দ হবে না, বলছেন অঙ্কুশ। “মিমি ভাল অভিনয় করে। প্যাকেজিংও ভাল। আমাদের বন্ধুত্বটাও জোরালো। ওর সঙ্গে কাজ করলে ভাল লাগবে। যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় কেউ কি আছে যাকে নিয়ে আমি জুটি তৈরির অনুরোধ করব, সে হল ঐন্দ্রিলা!” মানে, ব্যক্তিগত জীবনে নিজের জুলিয়েটের সঙ্গে পর্দায় অভিনয় করতে চান? “উফফ্, আবার শুরু হল... ওর সঙ্গে কাজ করতে চাই!” বলেই হেসে ফেলেন অঙ্কুশ।

মিমির সঙ্গে দেবের জুটিটা কেমন হবে বলে শুভশ্রীর ধারণা? উত্তরে শুভশ্রী বলেন, “আমি ওদের জুটির কোনও ছবি দেখিনি। তবে ভালই হবে মনে হয়,” বললেন তিনি। মনে মনে কি চান যে দেব-মিমির জুটিটা দেব-শুভশ্রীর জুটির থেকেও বেশি জনপ্রিয় হোক? “ডেফিনিটলি চাই না সেটা। একদম অনেস্টলি বললাম। তবে জুটি হিট হওয়াটা তো আর আমার ইচ্ছের ওপর নির্ভর করবে না। দর্শকের পছন্দের ওপর নির্ভর করে সেটা।” রোমিও-জুলিয়েট অবলম্বনে অপর্ণা সেনের ছবিতে দেব অভিনয় করবেন মুখ্য চরিত্রে। তাঁর বিপরীতে কে থাকবে, সেটা এখনও ঠিক হয়নি। এ ছবিতে না হোক, অন্য কোনও ছবিতে আবার দেবের সঙ্গে রোম্যান্টিক জুটি বাঁধতে ইচ্ছে করে না শুভশ্রীর? এর উত্তরে তিনি বলেন, “দেব-শুভশ্রী একটা হিট নাম। আমি তো চাই ওর সঙ্গে রোম্যান্টিক ছবি করতে। এখন এটা পরিচালক আর প্রযোজকদের ওপর নির্ভর করবে।”

আর দেবের ওপরেও... “হ্যাঁ, সেটাও।”

শুভশ্রী-অঙ্কুশ, লোকেশন: ওয়েট ও ওয়াইল্ড (নিক্কো পার্ক), ছবি: কৌশিক সরকার।

আনাচে কানাচে

পূজারিণী: পাড়ার মন্দিরে শনিপুজোতে রেশমি সেন। সঙ্গে ছিলেন স্বামী কৌশিক-ও। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement